ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চতুর্থ ধাপের উপজেলা নির্বাচন ৫ জুন

ভোটার বাড়ানো লক্ষ্য নয় সুষ্ঠু ভোটের নীতিতে ইসি

ভোটার বাড়ানো লক্ষ্য নয় সুষ্ঠু ভোটের নীতিতে ইসি

আগামী ৫ জুন বুধবার চতুর্থ ধাপে ৫৭টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ভোট উপলক্ষে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগের তিন ধাপের মতো এ ধাপে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি। তারা ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো নয়, বরং ভোট সুষ্ঠু করার নীতিতে অবিচল রয়েছে। অন্যদিকে বিশেজ্ঞরা বলেছেন কেন দিন দিন ভোটার উপস্থি কমছে- তার কারণ খুঁজে বের করতে হবে নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে। নয়তো আগামীতে ভোট দেয়ার আগ্রহ হারাবেন ভোটাররা।

সূত্র জানা, বাংলাদেশের ইতিহাসে এবার প্রথম বড় কোনো সহিংসতা ছাড়া উপজেলা ভোট শেষ হতে যাচ্ছে। এবার উপজেলা ভোটে বড় কোনো সহিংসতার খবর আসেনি, ছিল না অনিয়মের অভিযোগ। কিন্তু বিরোধী দলগুলোর তেমন উপস্থিতি না থাকায় দেশের ইতিহাসে সব থেকে কম ভোট পড়ার রেকর্ড হয়েছে এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ায় এবার সহিংসতা কমেছে। কারণ, ভোটারের ভোট দেয়ার আগ্রহ বেশি থাকলে সহিংসতার ঝুঁকি বেশি থাকে, প্রার্থীদেরও আগ্রহ বাড়ে। তিন ধাপের উপজেলা ভোটে মানুষের আগ্রহ কম থাকায় ভোটার উপস্থিতিও কম হয়েছে। সেই সংঙ্গে সহিংসতা কমেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, জাতীয় সংসদ বা স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার নির্বাচনে মানুষ আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। এর প্রতিফলন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর উপজেলা নির্বাচনেও দেখা যাচ্ছে। নির্বাচনব্যবস্থা ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি মানুষের অনাস্থাকেই কম ভোটের মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করছেন বিশ্লেষকরা।

তৃতীয় ধাপে ভোট পড়ার হার ছিল ৩৬ দশমিক ২৪ শতাংশ। এর আগে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে ভোটের হার ছিল ৩৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ। প্রথম ধাপের নির্বাচনে ভোট পড়ার হার ছিল ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ। এই ভোটের হার গত দেড় দশকের মধ্যে উপজেলা নির্বাচনে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০১৯ সালের পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে গড়ে ৩৯.৭১ শতাংশ ভোট পড়ে। ২০১৪ সালে চতুর্থ উপজেলা ভোটে ৬০.৯৩ শতাংশ এবং তৃতীয় উপজেলা ভোটে ২০০৯ সালে ৬৭.৬৯ শতাংশ ভোট পড়ে। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, অতি অল্প ভোট পেয়ে যদি চেয়ারম্যানরা স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পান, তাতে হয়তো আইনগত বাধা নেই। কিন্তু নৈতিকভাবে তাদের কতটা বৈধতা আছে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। নির্বাচনের প্রতি মানুষের অনাস্থার প্রতিফলন এই ভোটের ফলাফল।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেন, ভোটার উপস্থিতি কোন কারণে কমছে, এটা সবারই ভেবে দেখা উচিত, কেন কেন্দ্রবিমুখ হচ্ছে ভোটাররা। ভোট দিতে আসছে না কেন, এটা খোঁজা উচিত। ভোটাররা হয়তো আস্থা পাচ্ছেন না। ভোটারদের আস্থাহীনতার জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতে পারলে ভোট বাড়বে। তিনি বলেন, সামনের নির্বাচনগুলোয় খুব বেশি ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলা যায় না। একটা বড় দল ও সমমনা দল আসেনি ভোটে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও বহিষ্কার করা হচ্ছে, আর ভোটের বিষয়ে নেগেটিভ প্রচারণা চালাচ্ছে; এটাও ভোটের হার কমার একটা কারণ। আরো বিষয় রয়েছে। ইসির একার পক্ষে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো সম্ভব না, সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, জাতীয় কিংবা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কোনো বিধিনিষেধ বা নিয়ম নেই যে কত শতাংশ ভোট পড়লে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে। এগুলো নিয়ে ইসি ভাবে না। যে কোনো শতাংশ ভোট পড়লেই খুশি। ভোটারের উপস্থিতি নিয়ে ইসি উদ্বিগ্ন নয়। আমরা চাই ভোট সুষ্ঠু হউক। তিনি বলেন, ভোটাররা ভোট দিতে ইচ্ছুক। তারা কেন্দ্রে আসবেন। কিন্তু পছন্দের প্রার্থী না পাওয়ায়, বৈরী আবহাওয়া, বড় রাজনৈতিক দল নির্বাচনে আসছে না, এসব কারণে ভোটার উপস্থিতি কম। জানা যায়, এরই মধ্যে গত ৮ মে, ২১ মে ও ২৯ মে তিন ধাপে উপজেলা ভোট শেষ হয়েছে। চতুর্থ ধাপে ৫৭টি উপজেলায় ভোট হবে ৫ জুন। এরপর স্থগিত আরো ২০ উপজেলায় ভোট হবে ৯ জুন।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, উপজেলা পরিষদের চতুর্থ ধাপের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন ১ হাজার ২১৭ জন পর্যবেক্ষক। চতুর্থ ধাপে ৫৭টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ১১টি পর্যবেক্ষক সংস্থার কেন্দ্রীয়ভাবে ১১২ জন ও স্থানীয়ভাবে ১ হাজার ১০৫ জন পর্যবেক্ষককে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকদের কার্ড নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে দেওয়া হবে। স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের কার্ড ও স্টিকার রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে দেওয়া হবে।

এ সংক্রান্ত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, রিটার্নিং/সহকারী রিটার্নিং অফিসারের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে স্থানীয় পর্যবেক্ষণ নীতিমালা অনুযায়ী যাচাই-বাছাই করে অনুমোদিত পর্যবেক্ষক সংস্থাকে পরিচয়পত্র ও গাড়ির স্টিকার সরবরাহ করতে হবে।

এদিকে রাঙ্গাবালী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পছন্দের তিন প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘন করার অভিযোগে পটুয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী মু. মহিববুর রহমানকে তলব করেছে ইসি। একই অভিযোগে একই দিনে সেই তিন প্রার্থীকেও ডেকেছে ইসি।

ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয় শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ শাহজালাল প্রত্যেককে আলাদা চিঠি পাঠিয়েছেন।

প্রতিমন্ত্রীকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, গত শুক্রবার প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রাঙ্গাবালীর ছোট বাইশদিয়া ইউনিয়নের কোড়ালিয়া ঘাট ও চালতাবুনিয়া ইউনিয়নের চালতাবুনিয়া বাজারে ত্রাণ বিতরণের সময় উপজেলা নির্বাচনের তিন প্রার্থীর জন্য ভোট চেয়েছেন।

তারা হলেন- চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা মু. সাইদুজ্জামান মামুন, ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী রওশন মৃধা ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ফেরদৌসী পারভীন।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালার ২২ নম্বর বিধি অনুযাযী, ‘সরকারি সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ হিসেবে প্রার্থীর পক্ষে প্রচার বা নির্বাচনি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ আচরণবিধির লঙ্ঘন।

এ পরিস্থিতিতে কেন প্রতিমন্ত্রীকে ‘দোষী সাব্যস্ত’ করে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, সেই ব্যাখ্যা দিতে ২ জুন বিকাল ৩টায় ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে তাকে হাজির হতে বলা হয়েছে। পৃথক তিন চিঠিতে রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের সাইদুজ্জামান, চশমা প্রতীকের রওশন ও হাঁস প্রতীকের ফেরদৌসীকে আজ বিকাল ৪টায় আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে ডাকা হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত