অগ্রযাত্রায় সহায়তাকারীদের সঙ্গে বাংলাদেশ কাজ করবে : প্রধানমন্ত্রী

‘আমার চোখে বঙ্গবন্ধু’ এক মিনিটব্যাপী ভিডিও চিত্র তৈরি প্রতিযোগিতায় পুরস্কার বিতরণ

প্রকাশ : ০৩ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কে কার সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত তা বিবেচনা না করে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে যে দেশগুলো সহযোগিতা করবে বাংলাদেশ তাদের সঙ্গেই কাজ করবে। তিনি বলেন, ‘আমার নিজের দেশের উন্নয়নটা আমার আগে দরকার। আমার দেশের উন্নয়নে যারা সহযোগিতা করবে আমি তাদেরকে নিয়ে চলব। সেভাবেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।’ সেক্ষেত্রে কে কার সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত সেটা দেখার দরকার নেই বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সকালে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ‘আমার চোখে বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক এক মিনিটব্যাপী ভিডিও চিত্র তৈরি প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ে নির্বাচিতদের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে একথা বলেন।

শান্তির স্বপক্ষে তার বলিষ্ট অবস্থানের পুনরুল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সবসময় শান্তি চাই। আমরা যুদ্ধ চাই না। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই। আর সেই বন্ধুত্ব রেখেই আমি এগিয়ে যাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘কার দেশের সঙ্গে কার দেশের ঝগড়া সেটা আমার দেখার দরকার নেই। আমার নিজের দেশের উন্নয়নটা আমার আগে দরকার। আমার দেশের উন্নয়নে যারা সহযোগিতা করবে আমি তাদেরকে নিয়ে চলব। সেভাবেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সামনে কিন্তু অনেক কাজ। আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ব। আর তোমরাই হবে সেই স্মার্ট বাংলাদেশের মূল সৈনিক এবং তোমরাই এদেশকে গড়বে। কারণ তোমরা ইতিহাসটাকে যেভাবে তুলে ধরেছ তাতে সত্যিই আমি চোখের পানি রাখতে পারিনি।’ তিনি অংশগ্রহণকারীদের অনেক দোয়া ও অভিনন্দন জানিয়ে অভিভাবক ও শিক্ষকদেরও ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি আর এই বাংলাদেশকে কেউই পেছনে টানতে পারবে না। ১৫ আগস্টের পর যেভাবে আমাদের ভিক্ষুক জাতিতে পরিণত করা হয়েছিল, আর যেন কেউ এটা করতে না পারে, সেজন্য আমাদের সবসময় সজাগ থাকতে হবে। দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’

এর আগে প্রধানমন্ত্রী স্কুল থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে প্রতিযোগিতায় বিজয়ী প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান প্রাপ্তদের মধ্যে সনদপত্র, ক্রেস্ট ও আর্থিক পুরস্কার প্রদান করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫ এর পর ইতিহাস বিকৃতির যে প্রচেষ্টা হয়েছিল তার থেকে বাংলাদেশ আজকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে। সঠিক তথ্যটা সবার সামনে চলে আসছে।

তিনি ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের জাতির পিতাকে নিয়ে ভিডিও চিত্র নির্মাণ প্রসঙ্গে আনন্দানুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, ‘আজকের নতুন প্রজন্ম- তোমরাই একদিন এদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। কিন্তু সেটা করতে হলে একটা আদর্শ লাগে। ইতিহাস থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। কিন্তু আগামী দিনের পথচলা আমাদের নিজেদেরকেই খ্্ুঁজে বের করে আমরা যেন সুন্দরভাবে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি, সেভাবেই নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে।’

তিনি বলেন, শিক্ষা ছাড়া কখনো এটা সম্ভব নয়। শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতিকে দারিদ্র্য মুক্ত করা যায় না। শিক্ষাই হচ্ছে সব থেকে বড় অর্জন।

নিজের এবং ছোট বোন শেখ রেহানার সন্তানদের দেওয়া উপদেশের উল্লেখ করে জাতির পিতার কন্যা বলেন, ‘তাদের জন্য তারা কোনো সম্পদ রেখে যেতে না পারলেও তাদের শিক্ষায় শিক্ষিত করে যাবেন, যে সম্পদ কোনো দিন কেউ তাদের কাছ থেকে চুরি করতে পারবে না বা কেড়ে নিতে পারবে না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন যুগ হচ্ছে প্রযুক্তির যুগ। জ্ঞান-বিজ্ঞানের যুগ। কাজেই ছেলেমেয়েদের এটাই বলব, লেখাপড়া ও জ্ঞানার্জন ছাড়া নিজেদের যেমন তৈরি করতে পারবে না, দেশকেও তৈরি করতে পারবে না।’

’৯৬ সালে প্রথমবার সরকার গঠনের পর কম্পিউটার প্রশিক্ষণ এবং বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দিয়ে মোবাইল ফোন ও তথ্য প্রযুক্তিকে জনগণের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসার উদ্যোগের উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, সেখান থেকে আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। এখন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। দ্বিতীয়টার জন্য প্রস্তুতি চলছে, কেন না একটি স্যাটেলাইটের মেয়াদ থাকে ১৫ বছর।

তিনি বলেন, ‘যদিও আমি শুনি অনেকে বলে এই স্যাটেলাইটের কি দরকার ছিল! আমাদের বাংলাদেশের কিছু মানুষ রয়েছে যাদের সবকিছুতেই ‘কিছু ভালো লাগে না’। এই কিছু ভালো লাগেরা গ্রুপের আরো বক্তব্য হচ্ছে মেট্রোরেল, এটার কি দরকার ছিল? এক্সপ্রেসওয়ে করা শুধু শুধু পয়সা নষ্ট- এরকম লোকজন নেতিবাচক মনোভাব নিয়ে সবময় চললেও এসবের সুবিধাগুলো আবার ঠিকমতোই নিজেরা ভোগ করে।’

তিনি কোমলমতিদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমাদের তৈরি হতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাটা যাতে নষ্ট না হয়। অর্থাৎ বাংলাদেশ যে ক্ষুধামুক্ত এবং উন্নত-সমৃদ্ধ হয়ে গড়ে উঠবে সেটা তোমাদেরকেই গড়ে তুলতে হবে। আমরা কারো কাছে হাত পেতে চলব না। নিজেরা নিজেদের আত্মমর্যাদা বোধ নিয়ে চলব। এটাই আমাদের মাথায় সবসময় রাখতে হবে।’

তিনি এ সময় জাতির পিতা যে বলেছিলেন- ‘ভিক্ষুক জাতির কোনো ইজ্জত থাকে না’ সেই উদ্ধৃতি তুলে ধরে বলেন, ‘৭৫-এর পর আমরা একটি ভিক্ষুক জাতিতে পরিণত হয়েছিলাম। বিদেশে বাংলাদেশের নাম শুনলেই তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হতো।’

তিনি বলেন, তারা সরকারে আসার পর খাদ্য নিরাপত্তা, শিক্ষা-স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করাসহ সব ধরনের ব্যবস্থা যেমন করেছে, তেমনি করো কাছে যেন হাত পাততে না হয়, সেটাও নিশ্চিত করেছে।

‘নিজেরা উৎপাদন করব, নিজেরা খাব প্রয়োজনে অপরকেও খাওয়াব’- উল্লেখ করে দেশের প্রতি ইঞ্চি অনাবাদি জমিকে চাষাবাদের আওতায় নিয়ে আসায় তার প্রচেষ্টারও উল্লেখ করেন এবং বলেন, ‘আমাদের জমি উর্বর ও বিরাট জনসংখ্যা রয়েছে এবং বর্তমান যুগ হচ্ছে যান্ত্রিক যুগ যেই যান্ত্রিকীকরণের দিকে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আর কোনো কাজেই কোনো লজ্জা নেই। এ প্রসঙ্গে তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে কোভিড-১৯ চলকালীন ছাত্রলীগের সদস্যদের ধানকাটায় অংশগ্রহণের কথাও উল্লেখ করেন।’

করোনাকালীন প্রয়োজন পড়ায় প্রধানমন্ত্রী এবং তার ছোট বোন শেখ রেহানা নিজেরাও নিজেদের গৃহস্থালী কাজ সামলেছেন- উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা কিন্তু নিজেরাই নিজেদের কাজ করেছি এবং কাজ করতে আমরা কখনই লজ্জারোধ করি না। নিজের কাজটা নিজে করাটাই সব থেকে সম্মানের এবং অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা আমাদের কমাতে হবে।’

তিনি ভিডিওচিত্র নির্মাণ ‘আমার চোখে বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক প্রতিযোগিতার আয়োজনে মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘এটা আমি মনে করি আমাদের ছোট্ট শিশুদের ভেতরে একটি আদর্শ (জাতির পিতার) এবং স্বাধীন বাংলাদেশের চেতনাটাই গড়ে উঠবে। যাতে তারা লেখাপড়া শিখে এদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।’