কেবলই দোষারোপ

নির্বাচন নিয়ে স্বস্তিতে নেই ইসি

প্রকাশ : ০৪ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরিফুল ইসলাম

ভোটার উপস্থিতি ও দলগুলোর অংশগ্রহণ নিয়ে অধিকাংশ মহল থেকে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) দোষারোপ করা হয়। তবে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটির কতটুকু সক্ষমতা রয়েছে, সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, ইসির তেমন জনবল নেই, রিটার্নিং কার্মকর্তা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সরকারের কাছ থেকে নিতে হয়। সেক্ষেত্রে ইসির নির্দেশনা কতটা, সবাই মানে এ নিয়ে সংশয় রয়েছে।

সূত্র জানায়, কমিশনার অনেক সময় মাঠ পর্যায়ে নির্দেশনা দিলেও সেটা পালন করা হয় না ঠিকমতো। ভোটের আগে কমিশনাররা মাঠপর্যায়ে যাচ্ছেন। ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আসতে বলেছেন, ভোটাররা না এলে ইসির কী করার থাকে। এছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোকে অংশ নিতে আহ্বান জানাচ্ছে ইসি। কিন্তু অধিকাংশ দল অংশ নিচ্ছে না। ফলে অনেক দিক দিয়ে স্বস্তিতে নেই ইসি।

এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বৈরিতা অত্যন্ত প্রকট। এটি ধরে রাখলে সামনে এগিয়ে যাওয়া কঠির হবে। তিনি বলেন, সবার সহযোগিতা ছাড়া নির্বাচন কমিশন একা কখনোই ভোট সুষ্ঠু করতে পারবে না।

নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ করা নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের কাজ হচ্ছে নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ করা। সমস্যা অনেকটাই রাজনৈতিক। রাজনৈতিক সমস্যা নিরসন না হলে, নির্বাচন ব্যবস্থাটা আরো স্টেবল হবে না। পলিটিক্যাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়ে গেলে নির্বাচনটা আরো সুন্দর হতে পারে।

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা নিয়ে সিইসি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এখনো কোনো আলাপ-আলোচনা দেখছি না। তাদের মধ্যে বৈরিতা অত্যন্ত প্রকট। এত প্রকট বৈরিতা নিয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি সিইসি নয়, এই প্রকট বৈরিতাটা রাখলে সামনে এগিয়ে যাওয়া খুব কঠিন হবে। এই বৈরিতা পরিহার করে আলোচনার টেবিলে বসতে হবে। টিআইবিকে বলেছি, আপনাদের মতো আরো সিভিল সোসাইটি আছে, তারাও ভূমিকা পালন করতে পারেন। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তাব করেছি নির্বাচন ব্যবস্থা পরিবর্তন করা যায় কিনা, সেক্ষেত্রে আমরা আনুপাতিক ভিত্তিক প্রতিনিধিত্ব করার প্রস্তাব দিয়েছি। ইসিও আমাদের সাথে একমত হয়েছে।

এছাড়া জাতীয় নির্বাচন কয়েক দফা করা যায় কিনা, সে বিষয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে। সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন আমাদের বলেছে যদি পাঁচ দফায় নির্বাচন করা যায় এবং ইভিএম ব্যবহার করা যায়, তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব বলে তাদের ধারণা।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, নির্বাচন কমিশনের সাথে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়েও আমাদের আলোচনা হয়েছে। ২০০৮ সালে যেভাবে নির্বাচন হয়েছিল সেভাবে তো নির্বাচনের সম্ভাবনা আমরা আর দেখছি না। কারণ, আমাদের সংবিধানও সাপোর্ট করে না। কিন্তু যেটা সম্ভব, পৃথিবীর অনেক দেশেই আছে নির্বাচনকালীন সরকার, যার সমস্ত স্বার্থের দ্বন্দ্ব মুক্ত করে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। তবে এর জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে।

জানা যায়, নির্বাচনের দায়িত্বে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা বিশেষ করে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনকে অন্যতম চ্যালেঞ্জ বা প্রতিবন্ধক বলে মনে করছে ইসি। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দেখা গেছে, পুলিশ ও প্রশাসনের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি ইসি।

ইসি কর্মকর্তারা বলেন, কারও বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনে অনীহা ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের শেষ ধাপে ৫৮টি উপজেলা নির্বাচন আগামীকাল বুধবার অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন উপলক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট এলাকায় সাধারণ ছুটি থাকবে।

ধাপে ধাপে জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর গতকাল বলেন, কমিশন এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। আমাদের বক্তব্য হলো- পদ্ধতি যেটাই হোক না কেন, পদ্ধতি ঠিক করবেন রাজনৈতিক দল, সংসদ, ভোটার তারাই ঠিক করবেন। যে পদ্ধতিই অনুসরণ করা হোক না কেন, সংবিধানে যে অবস্থা থাকবে, সেই অবস্থার মধ্যে আমরা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব নির্বাচনটা সুষ্ঠু করার। ওটা নিয়ে আমাদের ব্যক্তিগত পছন্দণ্ডঅপছন্দ নাই।

ইভিএমের বিষয়ে তিনি বলেন, সিদ্ধান্ত নয়, ইভিএমের ভালো দিকগুলো নিয়ে ব্যক্তিগত আলোচনা হয়েছে যে, ইভিএমে বিশ্বাস করা উচিত কারণ ইভিএমে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচন হওয়ার পর কিন্তু কোনো প্রার্থী বলেনি নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে। এই ধরনের একটি অভিযোগও আমরা পাইনি। সব রাজনৈতিক দল যদি ইভিএমের ভোটের বিষয়টি সমর্থন করত, তাহলে ভালো হতো- সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ধাপে ধাপে নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা আছে কি- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে আমার ব্যক্তিগত কোনো পছন্দ অপছন্দের বিষয় নয়। এটা হলো জাতীয় সংসদ, দেশের রাজনৈতিক দল যে পদ্ধতি নির্ধারণ করবেন। কমিশন সেই পদ্ধতি অনুসরণ করে নির্বাচন করবে। কমিশন কোনো গাইডলাইন দিতে পারে না, সুপারিশ করতে পারে না। বরং সংবিধানে কী আছে, সে অনুযায়ী কমিশনকে ফলো করতে হবে। সংবিধান রচনা করবেন মহান জাতীয় সংসদ। মহান জাতীয় সংসদে কারা আছেন? সংসদ সদস্যরা। রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরাই ঠিক করে দেবেন যে, এই দেশের শাসনব্যবস্থা কেমন হবে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কেমন হবে, সরকারব্যবস্থা কেমন হবে, নির্বাচনব্যবস্থা কেমন হবে।

ঝিনাইদহ-৪ আসনের নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, একজন সংসদ সদস্যের যদি সাধারণ মৃত্য কিংবা অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটে, তাহলে সেই ক্ষেত্রে ওই আসনে কী হবে? এটি কি সংবিধানের কোথাও উল্লেখ করা আছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, সংবিধানের ৬৬ বা ৬৭তে এ বিষয়ে আমরা কোনো কিছু উল্লেখ দেখি না। মৃত্যুজনিত কারণে সংসদ সদস্য পদ শূন্য হবে, এটি আমি এ পর্যন্ত সংবিধানে দেখিনি। সাধারণত এটি ধরে নেওয়া হয়, যদি সংসদ সদস্য মৃত্যুবরণ করেন তার পক্ষে তো আর সংসদে আসা সম্ভব নয়। এটি ধরে নিয়েই আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয় এবং আমাদের যখন জানানো হয়, আমরা সংবিধানের ১২৩ অনুযায়ী নির্বাচন করি।

ঝিনাইদহ-৪ আসনের ক্ষেত্রে কী হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্বাভাবিক বা অপমৃত্যু যাই হোক না কেন এটা হলো সংসদের দায়িত্ব। মাননীয় স্পিকার যখন মৃত্যু সনদ পাবেন তখন সংসদ আসটি শূন্য ঘোষণা করবে। শূন্য ঘোষণা করলে গেজেট আমাদের কাছে পাঠিয়ে দেবেন। এরপর আমরা নির্বাচনের ব্যবস্থা করব।

সংসদ সদস্যের মৃত্যু কারণে আসন শূন্য হবে, এটি সংবিধানে উল্লেখ নেই কেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি কেন উল্লেখ করা হয়নি এটি তো আমি বলতে পারব না। সংসদ সচিব সাহেবকে জিজ্ঞেস করবেন, ওখানে যারা মাননীয় সংসদ সদস্যরা আছেন, উনারা বললে পারেন।

এতে অসঙ্গতি হলো কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, থাকলে ভালো হতো। যেহেতু টানা ৯০ দিন অনুপস্থিত থাকলে স্পিকার সংসদ সদস্য পদ শূন্য ঘোষণা করেন। যদিও সংবিধানে স্পষ্ট করে বলা নাই মৃত্যুজনিত কারণে সংসদ সদস্য পদ শূন্য হবে।

ঝিনাইদহ-৪ আসনের আনারের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উনি মারা গেছেন কী, মারা যাননি; সেটি তো আমরা জানি না। আমরা অফিসিয়ালি জানি না। এটি সংসদ থেকে গেজেট করে যখন জানাবে তখন আমরা জানতে পারব উনি মারা গেছেন কিনা। সংসদ যদি আসনটি শূন্য ঘোষণা করে, তখন আমরা নির্বাচনের ব্যবস্থা করব। সবকিছু স্পষ্ট করে লেখা না থাকলে যে কাজ করা যাবে না, তাতো নয়। আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত গেজেট না পাব, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা নির্বাচন করতে পারব না।