ফের বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট জয়ের পথে

প্রকাশ : ০৫ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ভোট গণনায় যে ফলাফল দেখা যাচ্ছে, তা বুথ ফেরত জরিপের সঙ্গে সম্পূর্ণ বিপরীত। এতে বিপাকে পড়েছে ক্ষমতাসীন বিজেপি। তাদেরকে এখন নির্ভর করতে হচ্ছে এনডিএ জোটের ওপর। এনডিএ জোট ২৯২ আসনে এগিয়ে রয়েছে। ফলে এ জোট জয়ের পথে।

অন্যদিকে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ‘ইন্ডিয়া’ জোট এগিয়ে রয়েছে ২৩২টি আসনে। সেক্ষেত্রে যে দল সরকার গঠন করতে চাইবে, তাদের জোট বেঁধে সরকার গঠন করতে হবে। কোনো দল এককভাবে সরকার গঠন করতে পারবে না।

গতকাল সন্ধা ৭টা পর্যন্ত বিজেপি ২০৩ আসনে এগিয়ে ছিল। কংগ্রেস এগিয়ে ছিল ১০১ আসনে। সমাজবাদী পার্টি (এসপি) ৩৮ আসনে এগিয়ে ছিলো। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেস এগিয়ে ছিল ২৯ আসনে। ফলাফলে এটা নিশ্চিত যে, বিজেপি এককভাবে ক্ষমতায় আসতে পারছে না। লোকসভার মোট ৫৪৩ আসনের মধ্যে সরকার গড়তে প্রয়োজন ২৭২ আসন। বিজেপি যেসব আসনে এগিয়ে রয়েছে, সেগুলোতে জয় ধরলেও আসনসংখ্যা দাঁড়ায় ২৩৯। ফলে সরকার গঠন করতে বিজেপিকে অন্য দলের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে।

জানা যায়, এনডিএ জোটের অন্যতম দুইটি দল হলো চন্দ্রবাবু নাইডুর টিডিপি ও নিতিশ কুমারের জনতা দল ইউনাইটেড। বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতায় যে ঘাটতি রয়েছে তা পূরণ করতে পারে তারা। ২০১৪ সালের পর প্রথম এই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হলো।

এনডিএ জোটের অন্য দুইটি বড় দল হলো ছয়টি আসনে এগিয়ে থাকা একনাথ শিন্দের শিবসেনা ও পাঁচটিতে এগিয়ে থাকা চিরাগ পাসোয়ানের লোক জনশক্তি পার্টি।

ভারতে সরকার গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে এরই মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। এনডিটিভিকে একটি সূত্র জানিয়েছে, বিজেপির সভাপতি জেপি নাড্ডা আজ বুধবার এনডিএ জোটের বৈঠক ডেকেছেন। এছাড়া মোদি ও অমিতশাহ দুইজনেই নাইডুর সঙ্গে আজ কথা বলেছেন।

অন্যদিকে ইন্ডিয়া জোটও আজ বৈঠকে বসতে যাচ্ছে। এনসিপির প্রধান শারদ পাওয়ার এ তথ্য জানিয়েছেন। তথ্য ছড়িয়েছে, শারদ পাওয়ার নাইডু ও নিতিশ কুমারের সঙ্গে কথা বলেছেন। এ তথ্য সত্য হলে। যদি শারদ পাওয়ার নাইডু ও নিতিশ কুমার বিজেপি জোট থেকে বেড়িয়ে আসে, তখন বিজেপি একক ভাবে সরকার গঠন করতে পারবে না।

জানা যায়, শেষ পর্যন্ত জোট সঙ্গীদের নিয়ে সরকার গঠন করলেও ভবিষ্যতে অনেক কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নতুন ধরনের সমস্যায় পড়তে হবে বিজেপিকে। এ ধরনের সমস্যায় তারা গত দুইবার পড়েনি। এর ফলে ভারতের রাজনীতির একটা নতুন অধ্যায় সূচিত হবে বলেও মনে করছে পর্যবেক্ষকদের একাংশ।

অমর্ত্য সেনের প্রতীচি ইনস্টিটিউটের মুখ্য জাতীয় গবেষক সাবির আহমেদ বলেন, শরিক দলগুলোকে নিয়ে পরবর্তী সরকার চালানো এনডিএ জোটের জন্য একটা নতুন ধরনের অভিজ্ঞতা হবে।

সাবির আহমেদ বলেন, এত দিন বিজেপি একাই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেত। অবশ্যই এনডিএ ছিল। কিন্তু বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কার্যকর ছিল না। সব সময় বিজেপির সিদ্ধান্ত বা নীতি অগ্রাধিকার পেত। বিশেষ করে বিভিন্ন বিলকে আইনে পরিণত করার প্রশ্নে। এবারে কিন্তু তাদের শরিকদের কথা শুনতে হবে এবং এটা নিয়ে মোদি-শাহের সরকার বেশ খানিকটা চাপে থাকবেন। বিশেষত যখন বিরোধীদের শক্তি অনেকটাই বাড়ল।

১৯৯৯ সালে অটল বিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট একাধিক শরিক নিয়ে পাঁচ বছর সরকার চালিয়েছিল। তার অসুবিধা হলেও অটল বিহারী বারবারই বলতেন, ইন্দিরা গান্ধী ও কংগ্রেসের বিরোধিতা করে জোট ঘরানার রাজনীতিতে তিনি অভ্যস্ত ও স্বচ্ছন্দ।

কিন্তু এখনকার বিজেপি তা নয়। নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি এককভাবে বারবার জিততেই অভ্যস্ত। শরিকদের ওপর নির্ভর করে এবং তাদের ভরসায় রাজ্য বা কেন্দ্র কোথাও সরকার চালাননি নরেন্দ্র মোদি। এই নতুন সমীকরণের সঙ্গে তিনি কীভাবে খাপ খাইয়ে নিচ্ছেন, কীভাবে ওঠাবসা করছেন সেই সব বন্ধুর সঙ্গে, যাদের ওপর আগামী দিনে তার সরকারের বাঁচা-মরা নির্ভর করবে

ভারতের ভবিষ্যতের রাজনীতিতে সম্ভবত এটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হতে চলেছে, যেমনটা হয়েছিল ২০০৪ সালে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্সের জোট সরকার চালানোর ক্ষেত্রে।

বিষয়টি মাথায় রেখেই নরেন্দ্র মোদির দপ্তর গতকাল ঘোষণা করে যে ৯ জুন যখন চন্দ্রবাবু নাইডুর নতুন সরকার অন্ধ্র প্রদেশের বিধানসভায় শপথ নেবে, তখন সেখানে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং। লোকসভার সঙ্গে সঙ্গেই অন্ধ্র প্রদেশ বিধানসভার নির্বাচনও হয়েছিল। এর কারণ, কেন্দ্রে চন্দ্রবাবু বা নীতিশ কুমারের মতো শরিকদের ওপরে যে বিজেপি তথা এনডিএর বাঁচা-মরা নির্ভর করবে আগামী দিনে।

এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যদি টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করেন, তাহলে বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ ও সবচেয়ে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলা অর্থনীতির দেশটির ৭৩ বছর বয়সি এই হিন্দু জাতীয়তাবাদী নেতার সঙ্গেই আরো পাঁচ বছর কাজ করতে হতে পারে পশ্চিমা বিশ্বের। মোদির নেতৃত্বে ভারত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী আসনের জন্য জোর তদবির চালিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ তাকে মনে করেছেন চীনের বিপরীতে এক গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিসেবে। অধিকার কর্মীরা অবশ্য মোদির শাসনের মধ্যে কর্তৃত্ববাদ দেখতে পাচ্ছেন, যার সমালোচনাও কম নয়।

নরেন্দ্র মোদি একই সঙ্গে অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করে চলেছেন। ওয়াশিংটনের কাছ থেকে সর্বাধুনিক ড্রোন কিনছেন তিনি, ফ্রান্স থেকে যুদ্ধবিমান ও সাবমেরিন কেনার পথে রয়েছেন। আবার ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার নিন্দায় তাকে বিশেষ সরব হতে দেখা যায়নি। উল্টো জাতিসংঘে ভোটাভুটিতে রাশিয়ার পক্ষ নিতে দেখা গেছে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় দেশটিকে।

অন্যদিকে চীনের সঙ্গে ভারতের বিরোধ থাকলেও ব্রিকস জোটে রয়েছে দেশ দুটি। এই জোটকে শক্তিশালী করার উদ্যোগেও রয়েছেন মোদি। অন্যদিকে প্রতিবেশী পাকিস্তানের সঙ্গে বৈরিতা নিরসনে তাকে সাম্প্রতিক সময়ে বিশেষ উদ্যোগী হতে দেখা যায়নি। ২০১৫ সালে অবশ্য একবার দেশটি সফর করেছিলেন তিনি।