বাজেটে খাতভিত্তিক বরাদ্দ বাড়ল

প্রকাশ : ০৭ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

বছর ঘুরে জাতীয় বাজেট এলে নতুন-পুরোনো খাতভিত্তিক বরাদ্দের গুরুত্ব বাড়ে। এরই ধারাবাহিকতায় এবারের বাজেটেও খাতভিত্তিক বরাদ্দ বাড়িয়েছে সরকার। গতকাল ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা।

এবারের বাজেটের মূল স্লোগান- ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার’। এর আগে মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপনের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শিক্ষা খাত : শিক্ষা এবং প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৯৪ হাজার ৮০৯ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৫৫ হাজার ৮৯১ কোটি টাকা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৮ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রতিরক্ষা : বাজেটে প্রতিরক্ষা খাতে ৪২ হাজার ১৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা গত বারের তুলনায় ৪ হাজার ২১২ কোটি টাকা বেশি। গত বছর বাজেট ছিল ৩৭ হাজার ৮০২ কোটি টাকা। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিরক্ষা সার্ভিসে ৪০ হাজার ৮২ কোটি, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য সার্ভিসে ১ হাজার ৮৮৬ কোটি ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের জন্য ৪৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়।

পানি মন্ত্রণালয় : পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জন্য পরিচালনা ও উন্নয়ন খাতে ১১ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

আইন ও বিচার বিভাগ : বাজেটে আইন ও বিচার বিভাগের জন্য ২ হাজার ২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

বয়স্ক ভাতা : নতুন অর্থবছরে বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা ২ লাখ বৃদ্ধি করে ৬০ লাখ ১ হাজার জনে উন্নীত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ খাতে ৪ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে। এছাড়া ভাতাপ্রাপ্ত বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারীর সংখ্যা বিদ্যমান ২৫ লাখ ৭৫ হাজার জন থেকে বৃদ্ধি করে ২৭ লাখ ৭৫ হাজার জনে উন্নীত করারও প্রস্তাব করা হয়।

শিল্প খাতে : শিল্প মন্ত্রণালয়ের জন্য ২ হাজার ৫১০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য খাত : স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণের অব্যাহত অগ্রগতি বজায় রাখতে ৪১ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ছিল ৩৮ হাজার ৫১ কোটি টাকা।

কৃষিখাত (কৃষি, খাদ্য এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ): কৃষিখাতে ২ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। ৩৮ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ছিল ৩৫ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা।

নবায়নযোগ্য জ্বালানি : নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে ১০০ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুতের ৪০ শতাংশ থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। এছাড়া এবার বিদ্যুৎ বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ২৩০ কোটি টাকা এবং জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের জন্য ১ হাজার ৮৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

যোগাযোগব্যবস্থা উন্নয়ন : প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে বরাদ্দ গতবারের চেয়ে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা কমেছে। বাজেটে সড়ক, রেল, নৌ ও বিমান পরিবহন উন্নয়নে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮০ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৮৫ হাজার ১৯১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে বরাদ্দ কমল ৪ হাজার ৬৯৩ হাজার কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চেয়ে এবারের বাজেটের আকার বাড়ছে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। এটি দেশের ৫৩তম, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ২৫তম ও অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর প্রথম বাজেট।

বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। বাকি ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা থাকবে। ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) এরই মধ্যে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

চলতি অর্থবছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা সাত শতাংশের বেশি নির্ধারণ করা হয়েছিল এবং আগামী অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ হতে পারে। প্রস্তাবিত বাজেটে সরকার ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে, যা গত অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৪১ হাজার কোটি টাকা বেশি।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। পরে এটি সংশোধন করে সাত লাখ ১৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা করা হয়।

এবারের বাজেটে দ্রব্যমূল্যসহ ১১টি বিষয়ে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে রয়েছে- দ্রব্যমূল্য সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া; কর্মোপযোগী শিক্ষা ও যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা; আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা; লাভজনক কৃষির লক্ষ্যে সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থা, যান্ত্রিকীকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে বিনিয়োগ বৃদ্ধি; দৃশ্যমান অবকাঠামোর সুবিধা নিয়ে এবং বিনিয়োগ বাড়িয়ে শিল্পের প্রসার ঘটানো; ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়ানো; নিম্ন আয়ের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা সুলভ করা; সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় সবাইকে যুক্ত করা।