ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চ্যালেঞ্জে সরকার

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চ্যালেঞ্জে সরকার

দেশের যোগাযোগব্যবস্থাসহ সামগ্রিক উন্নয়ন ও জনসাধারণের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে প্রত্যেক বছরের মতো এবারও জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করেছে সরকার। তবে এবারের বাজেটে নতুনত্ব তেমন কিছু না থাকলেও এবারের বাজেট বাস্তবায়নে শতভাগ প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এতে বাজেটের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে সামঞ্জস্য ফিরবে। একইসঙ্গে বাজারে দ্রব্যমূল্যের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

গত বৃহস্পতিবার ২০২৪-২৫ নতুন অর্থবছরের বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। বাজেট ঘোষণার একদিন পর গতকাল রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে অর্থ মন্ত্রণালয়। ওই সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৬ মাস অপেক্ষা করতে হবে। এই বছরের শেষের দিকে এটি কমতে শুরু করবে। সেজন্য এবার বাজেটের আকার কমিয়ে রাখা হয়েছে। যাতে করে মূল্যস্ফীতির ওপর কোনো চাপ না পড়ে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয় ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। বিশাল অঙ্কের এ বাজেটের ঘাটতি ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। আর অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। যা মোট জিডিপির ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। প্রস্তাবিত বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। করবহির্ভূত ও অন্যান্য আয়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। কর ছাড়া প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৪৬ হাজার কোটি টাকা। আর বৈদেশিক অনুদান থেকে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে ৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ঠিক করেছে। যদিও গত ১৪ মাস ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের উপরে রয়েছে। আগামী অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ঠিক করেছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। যা চলতি অর্থবছরে ছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। পরে তা কমিয়ে সাড়ে ৬ শতাংশ করা হয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। যদিও সংশোধিত বাজেটের এ আকার কমিয়ে ৭ লাখ ১৪ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা করা হয়েছে।

ব্যাংকে তারল্য সংকটের সময় বাজেটে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, এতে ব্যাংকে তারল্য সংকট হবে কি না এমন প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া এটা সব বাজেটেই সব অর্থমন্ত্রীরা করে থাকেন। সব সরকার করে থাকেন। উন্নত দেশগুলো আরো অনেক বেশি নিয়ে থাকে, আমরা তো মাত্র ৫ শতাংশের মধ্যে এটা ধরে রেখেছি। কাজেই এটা এত গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়। এটা নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই।

অর্থমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক কারণে মুদ্রার ওপর চাপ বাড়ায় টাকার মান কমেছে। সেজন্য বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ঘরে রয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে যে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার নিয়েছি। আরও যেসব পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন নেব। ২০২৫ সালের পর সরকারি চাকরিতে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমে যুক্ত হতে হবে বলেও জানান অর্থমন্ত্রী।

সমুদ্র অর্থনীতি বিষয়ে বাজেটে কোনো উদ্যোগ আছে কি না এমন প্রশ্নে অর্থপ্রতিমন্ত্রী বেগম ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে সুনীল অর্থনীতির গবেষণায় ও অন্যান্য বিষয়ের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) জনবল বৃদ্ধির উদ্যোগের বিষয়ে অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার বলেন, জনবল নিয়োগের বিষয়ে এনবিআর থেকে চিঠি এসেছিল। আমরা জনবল বৃদ্ধি করেছি। আশা করছি সামনে আরও বৃদ্ধি করা হবে। রাজস্ব আয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অটোমেশনের বিষয়টি শুরু হয়েছে। অর্থবিভাগ থেকে জনবল নিয়োগের বিষয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, অডিট সংক্রান্ত কারণে কিছু ব্যবসায়ী তাদের বৈধ সম্পদও দেখাতে পারছেন না। সে কারণে তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই অপ্রদর্শিত টাকাকে সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ব্যবসায়ী মহলের পক্ষ থেকে একটা দাবি এসেছিল, সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে একটা দাবি এসেছিল, অডিট সংক্রান্ত কারণে কিছু ব্যবসায়ী তাদের বৈধ সম্পদ দেখাতে পারছেন না, সে কারণে এই সুযোগটা দেওয়া হয়েছে। কালো টাকা যারা তৈরি করেন, তারা অর্থনীতিতে সেই টাকা ব্যবহারের উদ্দেশ্যে করেন না উল্লেখ করে তিনি বলেন, কালো টাকা মূলত দেশের বাইরে চলে যায়। কালো টাকাটা ভোগ-বিলাসের জন্য তৈরি করা হয়। জমি ক্রয়-বিক্রির সময় কিছু টাকা কালো হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে যারা রিটার্নে যেসব সম্পদ দেখাতে পারেননি, সেই সম্পদ দেখানোর জন্য এ সুযোগ দেওয়া হয়েছে, যা অনেক দেশেও দেওয়া হয়ে থাকে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার পেয়েছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফেরানো। একইসঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতির উন্নয়ন ও রাজস্ব আয় বাড়ানোর চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সেজন্য এবার বাজেটের আকার তুলনামূলকভাবে ছোট রেখে উন্নয়ন ব্যয় বাড়ানোর দিকে মনোযোগ না দিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বৈদেশিক লেনদেনে স্থিতিশীলতা আনা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বিনিয়োগ উৎসাহিত করার পদক্ষেপ থাকছে আওয়ামী লীগ সরকারের বর্তমান মেয়াদের প্রথম বাজেটে। লাগামহীন নিত্যপণ্যের বাজারে শৃঙ্খলা ফেরানোর ব্রত নিয়ে অর্থমন্ত্রী ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার জাতীয় বাজেট সংসদে উপস্থাপন করেছেন। বিদায়ী অর্থবছরের বাজেট ছিল ৭ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ বাজেট বেড়েছে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ।

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ কিছু পণ্যের ওপর সরকার কিছু করছাড়ের প্রস্তাব দিয়েছে। এ প্রস্তাব ভালো, তবে দেখার বিষয় হলো এটা কীভাবে বাস্তবায়ন হয়। কারণ, দেখা যায় কর কমালেও সেটার বাজারে প্রভাব পড়ে না। এজন্য বাজার ব্যবস্থাপনা মনিটরিং গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত