প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সন্ধ্যায় শপথ নিচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি

* জোট সরকার গঠনে আমন্ত্রণ রাষ্ট্রপতির * শেখ হাসিনা ছাড়াও মোদির শপথে থাকছেন যেসব বিদেশি নেতা * মোদির নতুন মন্ত্রিসভায় নীতীশ-নাইডুর অবস্থান কেমন

প্রকাশ : ০৯ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

টানা তৃতীয় মেয়াদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি। আজ রোববার ভারতীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি ভবনে টানা তৃতীয় মেয়াদে শপথগ্রহণ করবেন মোদি। দেশি-বিদেশি অতিথিদের সামনে তার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

মোদির দল বিজেপি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) গত শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে মোদিকে প্রধানমন্ত্রী পদে সমর্থন দেয়। এরপরই রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু নতুন জোট সরকার গঠনের জন্য নরেন্দ্র মোদিকে আহ্বান জানান।

টানা দুই মেয়াদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়েই ক্ষমতায় ছিল মোদির বিজেপি। তবে এবারের নির্বাচনে তারা একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে। যদিও সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট। সরকার গঠনের জন্য লোকসভায় ২৭৩ আসনের প্রয়োজন। বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট পেয়েছে ২৯৩ আসন। তাই জোটের শরিকদের ওপর ভর করেই তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন মোদি।

গত শুক্রবার ভারতের পার্লামেন্টের সেন্ট্রাল হলে আয়োজিত বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে এনডিএ জোটের সংসদীয় নেতা নির্বাচিত হন নরেন্দ্র মোদি। সেখানে মোদি বলেন, আমাদের গত ১০ বছর ছিল শুধু ‘ট্রেলার’। আমাদের আরো কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। দেশের উন্নয়ন আরো ত্বরান্বিত করতে হবে। এ সময় কংগ্রেসের সমালোচনা করে মোদি বলেন, এবারের নির্বাচনেও কংগ্রেস ১০০ আসন জিততে পারেনি। বিজেপি এবার ২৪০ আসনে জিতেছে। গত তিন নির্বাচন মিলেও এত আসনে জিততে পারেনি কংগ্রেস। ইন্ডি জোটের লোকেরা আস্তে আস্তে ডুবছিল, এবার আরো দ্রুত গতিতে ডুবে যাবে।

নতুন জোট সরকার টিকিয়ে রাখতে নরেন্দ্র মোদিকে যাদের ওপর নির্ভর করতে হবে তাদের একজন হলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। বৈঠকে তিনি বলেন, আমরা আত্মবিশ্বাসী যে, নরেন্দ্র মোদি ভারতের উন্নয়ন করবেন এবং আমরা তাকে আন্তরিকভাবে সমর্থন করব। আমরা সবাই আপনার নেতৃত্বে কাজ করব। আরেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা চন্দ্রবাবু নাইডু বলেন, ভারত সঠিক সময়ে সঠিক নেতার নেতৃত্বে রয়েছে। আমরা আত্মবিশ্বাসী যে, নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ভারত আগামী পাঁচ বছরে প্রথম অথবা দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হবে।

এরপর মোদি প্রবীণ বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদভানী, মুরলী মনোহর জোশী এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে রাইসিনা হিলে রাষ্ট্রপতি ভবনে যান মোদি। সেখানে তৃতীয়বারের মতো এনডিএ জোট সরকার গঠনের আনুষ্ঠানিক আহ্বান জানাতে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে আবেদন জানান তিনি। রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সামনে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে মোদি বলেন, এটুকু আশ্বাস দিতে পারি, গত দুই মেয়াদের উন্নয়নের যে গতি বজায় ছিল, তৃতীয় দফার পাঁচ বছরেও তা থাকবে। এরপরে তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি আমাকে ডেকেছিলেন। সরকার গড়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আমি তাকে জানিয়েছি, ৯ জুন রোববার সন্ধ্যায় শপথগ্রহণ হলে ভালো হয়। তার মধ্যেই মন্ত্রীদের তালিকা আমি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে দেব।

এদিকে ভারতের লোকসভায় কংগ্রেসের আসন ১০০ পার হয়েছে। মহারাষ্ট্রের সাংলি লোকসভা আসন ও বিহারের পূর্ণিয়া আসন থেকে নির্বাচিত স্বতন্ত্র দুই প্রার্থী কংগ্রেসের সঙ্গে থাকার কথা জানিয়ে দিয়েছেন। মহারাষ্ট্রের সাংলি থেকে জয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী বিশাল পাটিল গত বৃহস্পতিবার দিল্লি এসে কংগ্রেসের সঙ্গে থাকার কথা জানিয়ে দেন। বিহারের পূর্ণিয়া থেকে জয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজেশ রঞ্জন ওরফে পাপ্পু যাদবও একই কথা জানিয়েছেন।

অন্যদিকে মোদির নতুন মন্ত্রিসভায় দুটি মন্ত্রণালয় পাচ্ছে নীতীশ কুমারের জনতা দল ইউনাইটেড (জেডিইউ)। গতকাল মন্ত্রিসভা বণ্টনে এনডিএ’র বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। নতুন মন্ত্রিসভায় দুটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেতে এরই মধ্যে জেডিইউ’র দুই সিনিয়র নেতা লাল্লন সিং ও রাম নাথ ঠাকুরের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে দলের পক্ষ থেকে। তবে তারা কোন কোন মন্ত্রণালয় পেতে যাচ্ছে তা এখনো জানা যায়নি।

লোকসভা ভোটে লাল্লন সিং বিহারের মুঙ্গের থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। আর রাম নাথ ঠাকুর রাজ্যসভার বিধায়ক। তিনি শ্রী ঠাকুর ভারতরত্নপ্রাপ্ত কর্পুরী ঠাকুরের পুত্র। আরেক গুরুত্বপূর্ণ মিত্র চন্দ্রবাবু নাইডুর টিডিপি দুইটি কেন্ত্রীয় মন্ত্রী, দুইটি প্রতিমন্ত্রী ও একটি স্পিকারের পদ চেয়েছিল। তবে তারা একজন পূর্ণ মন্ত্রীর পাশাপাশি দুজন প্রতিমন্ত্রী ও ডেপুটি স্পিকার পদ পেতে পারে। পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে এরই মধ্যে দলের নেতা কিনজারাপু রামমোহন নাইডুর নাম শোনা যাচ্ছে। ৩৭ বছর বয়সি রামমোহন নাইডু ২০১২ সালে রাজনীতিতে যুক্ত হন। বাবা কিনজারাপু ইয়েরান নাইডুর মৃত্যুর পরই রাজনীতিতে আসেন তিনি।

২০১৪ এবং ২০১৯-এর মতো এবার এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি বিজেপি। দলটি পেয়েছে ২৪০টি আসন। সরকার গঠনে প্রয়োজন ২৭২টি আসন। বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় কেন্দ্রে সরকার গঠনে মূল কিং মেকার হয়ে ওঠে নীতীশ কুমারের জেডিইই ও চন্দ্রবাবু নাইডুর টিডিপি। এই দল দুটি যথাক্রমে ১২ ও ১৬টি আসন পেয়েছে। দল দুটি বেঁকে বসলে চাপে পড়ে যাবেন মোদি। তারা যাতে জোট ছেড়ে বেরিয়ে না যায়, তা নিয়ে তাই তৎপর বিজেপি। সূত্র জানায়, নরেন্দ্র মোদির শপথ অনুষ্ঠানে ভারতের বেশ কয়েকটি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এই একই অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীপরিষদের সদস্যরাও শপথ নেবেন।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যেসব বিদেশি নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে তাদের মধ্যে অনেকেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন এবং তারা আজ রোববারের মধ্যে দিল্লিতে এসে পৌঁছাবেন। যারা মোদির শপথে আসবেন তাদের তালিকা প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি। এতে দেখা যাচ্ছে এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও অংশগ্রহণ করবেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে। মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু। সিসিলিসের ভাইস প্রেসিডেন্ট আহমেদ আফিফ। মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী প্রবীন্দ কুমার জুগনাথ। নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কুমার ডাহাল। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী থেসেরিং তোবগে। গতকাল ভারতে গেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সিসিলিশের ভাইস প্রেসিডেন্ট। বাকি নেতারা আজ রোববার দিল্লিতে পৌঁছাবেন। এসব নেতার আগমন উপলক্ষ্যে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া লীলা, তাজ, আইটিসি মৌরাসহ বড় হোটেলগুলো কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান ছাড়াও এসব নেতা ভারতের প্রেসিডেন্ট দ্রৌপদী মুর্মুর আয়োজিত রাষ্ট্রীয় ভোজে অংশ নেবেন। তখন তাদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা হতে পারে।