স্বস্তির জয়ে বিশ্বকাপ শুরু বাংলাদেশের

প্রকাশ : ০৯ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

দীর্ঘদিন ধরেই লাল-সবুজ দলকে ভোগাচ্ছে টপ অর্ডার। প্রস্তুতিমুলক সিরিজ, ওয়ার্ম আপ ম্যাচ এমনকি আসল লড়াইয়ে সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে। সেই সঙ্গে চোটের মিছিল তো আছেই। যে কারণে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের টাইগারদের নিয়ে শঙ্কা ভর করেছিল সমর্থকদের মাঝে। তবে সব সংশয় আর শঙ্কা উড়িয়ে স্বস্তির জয় দিয়ে কুড়ি ওভারের বিশ্বকাপে যাত্রা শুরু করল বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এটিই প্রথম জয় মাহমুদউল্লাহ-লিটনদের। দাপুটে বোলিংয়ে প্রতিপক্ষকে অল্পে আটকে জয়ের মঞ্চটা তৈরি করে দিয়েছিলেন বোলাররাই। টপ অর্ডারের ব্যর্থতায় সহজ কাজটি কঠিন হয়ে দাঁড়ায় বাংলাদেশের ব্যাটারদের জন্য। চারপাশের গ্যালারিতে তখন ‘শ্রীলঙ্কা শ্রীলঙ্কা’ স্লোগানে মুখরিত। ‘নাগিন ডান্স’ দিচ্ছেন তাদের কেউ কেউ। তখন ঠিক উল্টো অবস্থা বাংলাদেশের সমর্থকদের। সবাই ম্রিয়মান। আরো একবার আশা ভঙ্গের শঙ্কায় সবার চোখেমুখে উৎকণ্ঠার ছাপ। চাপের মধ্যে দৃঢ়তা দেখালেন লিটন দাস। এরপর তাওহিদ হৃদয়ের ঝড়ো ইনিংসের পরও বাকিদের ব্যর্থতায় ফের জেগে উঠল শঙ্কা। একপর্যায়ে সেটি এসে দাঁড়িয়েছিল স্নায়ুর লড়াইয়ে। এবার হাল ধরলেন অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। পাল্টে গেল ম্যাচের চিত্র। দাসুন শানাকার ফুল টসে মিড উইকেট দিয়ে বল গ্যালারিতে পাঠালেন মাহমুদউল্লাহ। গ্যালারির ছবিটাও পাল্টে গেল একটি পলকেই। এবার লাল-সবুজের গর্জনে কেঁপে উঠল যেন গোটা গ্র্যান্ড প্রেইরি এলাকা। শ্রীলঙ্কার নীল জার্সি গায়ে চাপানো হাজারও দর্শক তখন ডুবে গেলেন নীল বেদনায়। পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা ম্যাচের ভাগ্য বাংলাদেশের দিকে হেলে পড়ল।

গতকাল শনিবার ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কাকে ২ উইকেটে হারাল বাংলাদেশ। ১২৫ রানের লক্ষ্য ৬ বল বাকি থাকতে ছুঁয়ে ফেলল তারা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তিনবারের দেখায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম জয় এটি। টানা দুই ম্যাচ হেরে সুপার এইট খেলার সম্ভাবনা অনেকটাই ম্রিয়মাণ হয়ে গেল লঙ্কানদের জন্য। সামনের ম্যাচগুলোর জন্য বড় প্রেরণা পেল বাংলাদেশ। ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ২২ রানে ৩ উইকেট নেন রিশাদ হোসেন। তার পরপর দুই বলে দুই উইকেটেই বোলিংয়ে বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু। পরে শঙ্কা ছাপিয়ে জয় পাওয়ার পর ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন তরুণ লেগ স্পিনারই। তুলনামূলক ছোট লক্ষ্যে আরও একবার শুরুতেই ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। প্রথম ওভারে রানের খাতা খোলার আগেই ধানাঞ্জয়া ডি সিলভার বলে মিড অনে ক্যাচ দেন সৌম্য সরকার। এ নিয়ে সবশেষ তিন ইনিংসে দুবার খালি হাতে ফিরলেন তিনি। সব মিলিয়ে ৮৪ ম্যাচের ক্যারিয়ারে সৌম্যর ১৩তম শূন্য এটি। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এটিই সবচেয়ে বেশি শূন্যের রেকর্ড। ১৪৩ ইনিংসে আয়ারল্যান্ড অধিনায়ক পল স্টার্লিংয়ের শূন্যও ১৩টি। পরের ওভারে নুয়ান থুশারার দারুণ ডেলিভারিতে বোল্ড হন আরেক ওপেনার তানজিদ হাসান। ৪ নম্বরে নেমে নাজমুল হোসেন শান্তও টিকতে পারেননি। পাওয়ার প্লে’র শেষ ওভারে ১৩ বলে ৭ রান করে ফেরেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।

চতুর্থ উইকেট জুটিতে চাপ সামাল দেন লিটন দাস ও হৃদয়। দুজন মিলে মাত্র ৩৮ বলে ৬৩ রান যোগ করেন। নবম ওভারে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার বলে ইনিংসের প্রথম ছক্কা মারেন হৃদয়। এক ওভার পর মাথিশা পাথিরানার বল পুল করে ছক্কায় ওড়ান লিটন। হাসারাঙ্গার পরের ওভারে তাণ্ডব চালান হৃদয়। পরপর তিন বলে ছক্কা মারেন তরুণ মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান। চতুর্থ বলেই অবশ্য প্রতিশোধ নিয়ে নেন হাসারাঙ্গা। সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হন ২০ বলে ৪০ রান করা হৃদয়। রিভিউ নিয়ে তার বিদায় নিশ্চিত করে শ্রীলঙ্কা। নিজের পরের ওভারে লিটনকেও ফেরান হাসারাঙ্গা। সবশেষ ৫ ইনিংসে ২০ ছুঁতে না পারা লিটন এদিন ২ চার ও ১ ছক্কায় করেন ৩৮ বলে ৩৬ রান। তখনও তেমন শঙ্কা জাগেনি বাংলাদেশের জয়ে।

চার ওভারে ১৮ রানের সমীকরণে পাথিরানার শর্ট বলে ডিপ থার্ড ম্যানে ক্যাচ দেন সাকিব আল হাসান। মাহিশ থিকশানার দুর্দান্ত ক্যাচে ১৩ বলে ৭ রান করে ফেরেন সাকিব। পরের ওভারে অন্য প্রান্তে দাঁড়িয়ে রিশাদ হোসেন ও তাসকিন আহমেদের বিদায় দেখেন মাহমুদউল্লাহ। পরপর দুই বলে দুজনকে ফেরান থুশারা। শেষ দুই ওভারে জয়ের জন্য বাকি থাকে ১১ রান। মূল বোলারদের কোটা পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় দাসুন শানাকাকে বোলিংয়ে আনেন হাসারাঙ্গা। প্রথম বলেই তিনি করেন নিচু ফুল টস। নিজের আয়ত্বে পেয়ে ডিপ মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা মারেন মাহমুদউল্লাহ। ম্যাচ চলে আসে হাতের নাগালে।

ওভারের শেষ বলে মিড অফের দিকে খেলে দ্রুত রানের জন্য ছোটেন দুই ব্যাটসম্যান। বল সোজা হাসারাঙ্গার হাতে যাওয়ায় পিচের মাঝে দাঁড়িয়ে পড়েন মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু স্ট্যাম্পে লাগাতে পারেননি হাসারাঙ্গা। ওভার থ্রোয়ে নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের জয়। এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে পাথুম নিসাঙ্কার ঝড়ে দারুণ শুরু করে শ্রীলঙ্কা। প্রথম ছয় ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ৫৩ রান করে ফেলে তারা। পঞ্চম ওভারে সাকিবের বলে চারটি চার মারেন নিসাঙ্কা। এরপর থেকেই ধীরে ধীরে বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু। পরের ১৪ ওভারে মাত্র ৭০ রান খরচায় আরো ৭ উইকেট নেয় তারা। নিসাঙ্কার ২৮ বলে ৪৭ রান ছাড়া শ্রীলঙ্কার আর কেউই তেমন কিছু করতে পারেননি।

বাংলাদেশের প্রথম বিশেষজ্ঞ লেগ স্পিনার হিসেবে বিশ্বকাপ খেলতে নেমেই বাজিমাত করেন রিশাদ। প্রথম দুই ওভারে উইকেট না পেলেও ১৫তম ওভারে পরপর দুই বলে চারিথ আসালাঙ্কা ও হাসারাঙ্গাকে ফেরান রিশাদ। নিজের শেষ ওভারে ধানাঞ্জয়াকে স্ট্যাম্পিং করে শ্রীলঙ্কাকে আরো চাপে ফেলে দেন তরুণ লেগ স্পিনার। রিশাদ ছাড়াও মুস্তাফিজুর রহমান, তাসকিনরাও করেন দারুণ বোলিং। চোট কাটিয়ে ফেরা তাসকিন ২৫ রানে নেন ২ উইকেট। নিজের প্রথম বলেই উইকেট পাওয়া মুস্তাফিজের তিন শিকার ধরতে ৪ ওভারে খরচ মাত্র ১৭ রান।