পুলিশকে গুলি করে হত্যা

সাত দিনের রিমান্ডে কনস্টেবল কাউসার

প্রকাশ : ১০ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর বারিধারা ডিপ্লোমেটিক জোন এলাকায় ফিলিস্তিন দূতাবাসের পুলিশ বক্সের সামনে কনস্টেবল মনিরুল হককে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ঘাতক কাউসার আলীকে সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

গতকাল বিকালে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে কাউসার আলীকে তোলা হয়। পরে আদালত তার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ শাহিনুর রহমান বলেন, পুলিশ কনস্টেবল মনিরুলকে গুলি করে হত্যা করা পুলিশ সদস্য কাউসার আলীকে বিকালে রিমান্ড আবেদন করে সিএমএম আদালতে তোলা হয়। পরে আদালত তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

উল্লেখ্য, গত শনিবার রাত পৌনে ১২টায় বারিধারায় ফিলিস্তিন দূতাবাসের সামনে দায়িত্বরত পুলিশ কনস্টেবল কাউসার আলী আরেক পুলিশ সদস্য মনিরুল হককে এলোপাতাড়ি গুলি করে হত্যা করেন। এ ঘটনায় জাপান দূতাবাসের গাড়িচালক সাজ্জাদ হোসেন গুরুতর আহত হন। তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এদিকে ঘটনা ঘটার পর স্থানীয় নিরাপত্তা রক্ষীরা কাউসার আলীকে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন। এর আগে শনিবার দিবাগত রাত পৌনে ১২টা থেকে ১২টা ৫ মিনিটের মধ্যে রাজধানীর গুলশান-বারিধারার কূটনীতিক এলাকায় ফিলিস্তিন দূতাবাসের সামনে সহকর্মীর গুলিতে নিহত হন কনস্টেবল মনিরুল ইসলাম।

ঘটনার খবরে ঘটনাস্থলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত হন। মোতায়েন করা হয় সোয়াট টিম। পরে রাত পৌনে ২টার দিকে ঘাতক কনস্টেবলকে হেফাজতে নেয় গুলশান থানা পুলিশ। গত শনিবার দিবাগত রাত ২টায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন। ঘাতক কাউসার সম্পর্কে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক দিন ধরে কাউসার আলী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। গত পাঁচ থেকে ছয় দিন ধরে তিনি কারো সঙ্গে ঠিকভাবে কথা বলতেন না। বলতে গেলে গত পাঁচ থেকে ছয় দিন ধরে তিনি চুপচাপ ছিলেন, কারো সঙ্গে কথা বলতেন না। ঘটনা ঘটিয়েও ভারসাম্যহীন আচরণ করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, মনিরুল ইসলামকে গুলি করে হত্যা করার পর কাউসার আলী ঘটনাস্থলে আশপাশে ঘোরাফেরা করছিলেন। কিছু সময় তিনি দূতাবাসের সামনে বসেছিলেন। তার ঘুরাফেরা ও আচরণ দেখে মনে হচ্ছিল মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। রাতেই ডিএমপির ডিপ্লোম্যাটিক সিকিউরিটি জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার আরিফুল ইসলাম সরকার জানান, আমাদের প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে কাউসার আলী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় ছিলেন। প্রাথমিকভাবে আমরা আক্রমণকারী পুলিশ সদস্যের ব্যাপারে যতটুকু জেনেছি, তিনি পাঁচণ্ডছয় দিন থেকে খুব চুপচাপ ছিলেন। তার অন্যান্য সহকর্মীদের সঙ্গেও কথা বলছিলেন না। তার ব্যাচমেটদের সঙ্গে কথা বলে এসব জেনেছি। ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে এসে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ঘটনাস্থলে আমাদের লোক ছিল, ঘটনা যিনি ঘটিয়েছেন তিনিও আমাদের লোক। আসলে ঘটনাটা কী কারণে ঘটেছে সেটা আমরা জানার চেষ্টা করছি। গতকাল বেলা ১১টার দিকে গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) রিফাত রহমান শামীম জানান রাতেই ঘাতক কনস্টেবল কাউসারকে নিরস্ত্র করে হেফাজতে নেওয়া হয়। তাকে থানা হেফাজতে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, কিন্তু নিরুত্তাপ কনস্টেবল কাউসার। ডিসি রিফাত বলেন, তিনি দীর্ঘদিন পুলিশে কর্মরত। পাগলের বেশ ধরেছেন তিনি। ঘটনা স্পর্শকাতর। ঘটনা গুরুতর। এই অপরাধের শাস্তি সম্পর্কে জানেন কনস্টেবল কাউসার। সংগত কারণে তিনি পাগলের বেশ ধরতে পারেন। মুখে কুলুপ এঁটেছেন, অধিকাংশ প্রশ্নের উত্তর তিনি দিচ্ছেন না। একাধিক গুলি ছুড়ে কনস্টেবল মনিরুলকে হত্যা করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে কী মনে হয়? ঘাতক কাউসার মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বা ভারসাম্যহীন- এমন প্রশ্নের উত্তরে ডিসি রিফাত বলেন, পাগল প্রমাণ করতে পারলে তিনি মামলায় সুবিধা পেতে পারেন। সেটা জেনে-বুঝেই হয়তো পাগলের বেশ ধরেছেন। আমরা আরো জিজ্ঞাসাবাদ করব। তারপর বলা সম্ভব, ঘটনার আসল মোটিভ।