দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশ-ভারতের বহুমাত্রিক সম্পর্ক আরো গভীর হবে

প্রকাশ : ১১ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

ধারাবাহিকভাবে তৃতীয়বার ভারতের প্রধানমন্ত্রীর পদে শপথগ্রহণ করেছেন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতা নরেন্দ্র মোদি। গত রোববার শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেন শেখ হাসিনা। তবে অনুষ্ঠানটি উপলক্ষ্যে ভারতীয় শীর্ষপর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কুশল বিনিময়ের পাশাপাশি আমন্ত্রিত বিভিন্ন দেশের প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক করেন শেখ হাসিনা। পরস্পরের খোঁজখবর নেন। খুবই সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে কুশল বিনিময় করেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গত রোববার সন্ধ্যায় মোদি সরকারের মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠানের পর শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি ঢাকা-নয়াদিল্লির মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো দৃঢ় করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে একান্ত বৈঠকে তারা এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

নরেন্দ্র মোদির শপথগ্রহণ শেষে গতকাল দিল্লির আইটিসি মৌর্য হোটেলে ভারতের কংগ্রেস পার্টির নেত্রী ও রাজ্যসভা সদস্য সোনিয়া গান্ধী, তার পুত্র ও লোকসভার বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধী এবং ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গান্ধী পরিবারের সঙ্গে শেখ হাসিনার সাক্ষাতের পাশাপাশি শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ হয়। শ্রীলঙ্কার চরম অর্থনৈতিক ক্রান্তিকালে বাংলাদেশের সহায়তার জন্য রনিল বিক্রমাসিংহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান। কৃষি খাতে বাংলাদেশের প্রযুক্তি এবং পর্যটন খাতে শ্রীলঙ্কার দক্ষতা ও বিনিয়োগ সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। গত রোববার ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বর্ষীয়ান নেতা লাল কৃষ্ণ আদভানির সঙ্গে তার বাড়িতে গিয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তারা সৌহার্দ্য বিনিময় ও স্মৃতি রোমন্থন করেন। ৯৬ বছর বয়সি এলকে আদভানি ১৯৮০-এর দশকে ভারতীয় জনতা পার্টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে জেনারেল সেক্রেটারি ও পরে দলটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৮৮ সালে তিনি বিজেপি সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন। ২০০২ সাল থেকে ২০০৪ পর্যন্ত ভারতের উপ-প্রধানমন্ত্রীর পদে ছিলেন তিনি।

দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আবাসস্থলে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী দাশো শেরিং তোবগ। বৈঠকে ভারতের মধ্য দিয়ে ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ সময় ভুটানের প্রধানমন্ত্রীকে শেখ হাসিনা জানান, জলবিদ্যুৎ আমদানির জন্য একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তির প্রয়োজন এবং আমরা এরইমধ্যে ভারতের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। এসব বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, সৌজন্য সাক্ষাতের সময় দুই দেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সম্পূর্ণ বিষয়াদি আলোচনায় উঠে আসে। উভয় দেশ বিদ্যমান বহুমুখী সম্পর্ক বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী তার দেশে একটি বার্ন ইউনিট নির্মাণ এবং এক বছরের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। তিনি শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন। শেখ হাসিনা বলেন, ভুটান বাংলাদেশের হৃদয়ে একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। কেননা ভুটান ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে প্রথম স্বীকৃতি দেয়। তিনি বলেন, আমরা ভুটানকে সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত। তিনি কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ভারতকে দেওয়া জায়গার যথার্থ ব্যবহারের ওপর জোর দেন এবং আশা করেন ভুটান সেখানে শিল্প গড়ে তুলবে। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে ভুটানের বিনিয়োগ চেয়েছেন। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর একমাত্র কন্যা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক সায়মা ওয়াজেদের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং তার সাম্প্রতিক ভুটান সফরের কথা উল্লেখ করেন।

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির আইটিসি মৌর্য হোটেলে গতকাল সোমবার ভোরে মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, পরপর তৃতীয়বারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদির শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সাথে একান্তে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় নরেন্দ্র মোদি এবং এনডিএ জোটকে নির্বাচনে বিজয়ের জন্য আবারো অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। রাষ্ট্রপতি ভবনে সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই দেশের বন্ধনকে আরো দৃঢ় করতে নরেন্দ্র মোদির নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করার আন্তরিক আগ্রহ ব্যক্ত করেন বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে এবং নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশ ও ভারতের অনেক কাজের সুযোগ রয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির বৈঠক নিয়ে কথা বলেন। দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে অত্যন্ত উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। দুই নেতা আশা প্রকাশ করেছেন, বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আগামী দিনগুলোতে আরো গভীর হবে।’

প্রতিবেশী দুই দেশের এই দুই প্রধানমন্ত্রীর একে অপরের কাছ থেকে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বহুমুখী সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে অনেক বিষয় জড়িত। যেহেতু উভয় সরকার দীর্ঘদিন ধরে দেশ পরিচালনা করছে, তাই তাদের মধ্যে একসঙ্গে কাজ করার কিছু সুবিধাও আছে।’ উভয় দেশের জনগণ বিভিন্ন দিক থেকে উপকৃত হচ্ছে জানিয়ে হাছান মাহমুদ আশা প্রকাশ করেন, ‘আমাদের বহুমাত্রিক সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও সম্প্রসারিত ও গভীর হবে।’ দুই দেশের যোগাযোগসহ অবকাঠামো উন্নয়নে একযোগে কাজ করে যেতে হবে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। গত শনিবার নয়াদিল্লি যান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান শেষে গতকাল দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।