এবার ঢাকার দুই সিটি ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন

প্রকাশ : ১২ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরিফুল ইসলাম

ষষ্ঠ উপজেলা ভোট শেষ করার পর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। উপজেলা ভোটে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ায় ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে ভোটার বাড়ানোর জন্য আগে থেকে উদ্যোগ নেবে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, ২০২০ সালে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে ভোটগ্রহণ হয় ইভিএমে। ঢাকা উত্তরে ২৫ শতাংশ এবং দক্ষিণে ২৯ শতাংশ ভোট পড়ে। সেবার রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি ভোটে অংশ নেয়নি। এবারও বিএনপির অংশগ্রহণ করার সম্ভবনা কম। তাই দলগুলোর অংশগ্রহণ বাড়ানোর দিকে নজর দিচ্ছে ইসি। কি উপায়ে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর যায়, সেই পন্থা বের করার চেষ্টা করছে ইসি।

নির্বাচন পরিচালনা শাখা জানায়, ঢাকার উত্তর সিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় ২ জুন ২০২০ সালে। দক্ষিণ সিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় ৩ জুন ২০২০ সালে। এ হিসেবে ঢাকার উত্তর সিটির চলতি বছরের ৪ ডিসেম্বর দিন গণনা শুরু হচ্ছে। আর দক্ষিণ সিটির দিন গণনা শুরু হচ্ছে ৫ ডিসেম্বর। দুই সিটিতে মেয়াদ শেষ হবে ১ জুন ২০২৫ ও ২ জুন ২০২৫ সালে। দিন গণনার শুরুর দিন থেকে যে কোনো দিন ভোট করতে পারবে ইসি।

জানা যায়, নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ২০২০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি দুই মেয়র শপথ নেন। এর পর ১৩ মে ঢাকা উত্তরের দায়িত্ব নেন আতিকুল ইসলাম এবং ১৬ মে ঢাকা দক্ষিণের চেয়ারে বসেন শেখ ফজলে নূর তাপস। নির্বাচন ঘিরে ১ ফেব্রুয়ারি আতিকুল ইসলাম ইশতেহারে ৩৮ ও তাপস ৫০টি প্রতিশ্রুতি দেন।

দুই সিটিতে ভোটার সংখ্যা ৫৪ লাখ ৬৩ হাজার ৪৬৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২৮ লাখ ৪৩ হাজার ৮ ও নারী ভোটার ২৬ লাখ ২০ হাজার ৪৫৯ জন। সিটি করপোরেশন হিসেবে ঢাকা উত্তর সিটিতে ভোটার রয়েছেন ৩০ লাখ ১০ হাজার ২৭৩ জন; যার মধ্যে পুরুষ ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ৫৬৭ ও নারী ১৪ লাখ ৬০ হাজার ৭০৬ জন।

এদিকে গত সোমবার রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসির আয়োজনে ‘আরএফইডি টক’ অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পাঁচ ধাপ মিলিয়ে ৪৬৯টি উপজেলায় ভোট হয়েছে। এসব উপজেলায় গড়ে মোট ৩৬.৫৬ শতাংশ ভোট পড়েছে। তিনি বলেন, এবার নির্বাচন অনেকটা শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। অনেকে প্রভাব সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। তবে আমাদের তৎপরতায় সফল হয়নি।

আগামী নির্বাচনের আগে সংলাপের উদ্যোগ কে নেবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলব না, আমাদের দেশের যারা বিশিষ্টজন আছেন তারা আমাদের চেয়ে ভালো বুঝেন কীভাবে সংলাপের উদ্যোগ নিতে হবে।

ভোটের পরিবেশ তৈরি করতে পারেননি এ দায় আপনাদের উপর দেয়া হয়- এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী? জবাবে সিইসি বলেন, নির্বাচন কমিশনের কাজ নির্বাচন করা। ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো কিন্তু নির্বাচন কমিশনের কাজ নয়। নির্বাচন কমিশনের একটি কাজ হচ্ছে তফসিল ঘোষণা করা। এরপর প্রতীক বরাদ্দ দেয়ার পরই শুরু হয় নির্বাচনী প্রচারণা। প্রতারণার কাজ সিইসি মাঠে গিয়ে করেনা। যেসব দল প্রার্থী দেন তারাই প্রচারণা চালায়। আর তাদের দক্ষতার উপর নির্ভরশীল করে ভোটার উপস্থিতি। ভোটার উপস্থিতি পুরোপুরি নির্ভর করে প্রার্থীর ওপর। ভোটার উপস্থিতির হার কত হবে তার দায় আমরা নিতে পারবো না। মনে রাখতে হবে নির্বাচনটা রাজনীতি নয়। নির্বাচন কমিশন একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে চলে। তিনি বলেন, ভোটারদের উদ্ধুদ্ধ করার জন্য আমরা নানা রকম প্রচারণা চালাচ্ছি। তবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের যে পরিমাণ গণসংযোগ চালানো দরকার, তার কমতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমি বলব, নির্বাচনের সাথে রাজনৈতিক পরিবেশটা যদি অনুকূল হয়ে ওঠে তাহলে ভোটের ব্যাপারে মানুষের আগ্রহ আরো বাড়তে পারে।

প্রসঙ্গ ক্রমে জেনারেল আজিজ নিয়ে সিইসি বলেন, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের দুই ভাইয়ের মিথ্যা তথ্য দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র নেওয়ার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আজিজ আহমেদের ভাই বোন, বঙ্গবন্ধুর খুনি মোসলেম উদ্দিনের পরিবার ও হারিছ চৌধুরী ভুল তথ্য দিয়ে এনআইডি করেছে বলে জেনেছি। ২০ থেকে ২৫ বছর পর হঠাৎ করে এসব তথ্য জানা গেল। এখন দুটো তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী আজিজ আহমেদের দুই ভাই হারিছ আহমেদ ও তোফায়েল আহমেদ (জোসেফ) নিজেদের নামের পাশাপাশি বাবা-মা’র নামও পরিবর্তন করেছেন। হারিছ আহমেদ তার নাম পরিবর্তন করে হয়েছেন মোহাম্মদ হাসান। আর জোসেফ নাম পরিবর্তন করে হয়েছেন তানভীর আহমেদ তানজীল। তাদের এনআইডি’র তথ্য পরিবর্তনে আজিজ আহমেদ সুপারিশ করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠে। এদিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার পলাতক আসামি রিসালদার মোসলেম উদ্দিনের সন্তানরা কীভাবে জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) তাদের বাবার নাম পাল্টেছেন, সে বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অনুরোধে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) এনআইডি শাখা এ তদন্তে নেমেছে।