ভিডিও কনফারেন্সে হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

আশ্রয়ণের ঘর পেয়ে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে ভূমিহীনদের মধ্যে

‘ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি তৈরি করে দেব’

প্রকাশ : ১২ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়ে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে যাদের জমিসহ ঘর করে দেয়া হয়েছে, তাদের জীবন বদলে গেছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ঘর পেয়ে মানুষের যে পরিবর্তন হয়েছে। তাতে মানুষের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। মাথা উচু করে বেঁচে থাকার জন্য এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

গতকাল বেলা ১১টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সুবিধাভোগীদের জমির মালিকানা দলিলসহ বাড়ি হস্তান্তর কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা, কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলা এবং ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে সুবিধাভোগীদের কাছে জমির মালিকানা দলিলসহ বাড়ি হস্তান্তর করা হয়।

এ সময় আশ্রয়ন প্রকল্প থেকে যারা ঘর পেয়েছেন এটি তাদের নিজেদের সম্পত্তি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে ঘর পাচ্ছেন এটা আপনাদের নিজের সম্পত্তি, এটার যত্ন নেয়া আপনাদের দায়িত্ব। বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেক গ্রামকে আমরা নাগরিক সুবিধার আওতায় নিয়ে আসব। সেই নাগরিক সুবিধা আমরা নিশ্চিত করে যাচ্ছি। পাশাপাশি রাস্তাঘাট উন্নয়ন, বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা, দেশের মানুষের মৌলিক চাহিদা পুরন করছি, যার সুফল মানুষ ভোগ করছে। এ সময় চিকিৎসাসেবা, শিক্ষাবৃত্তি দেয়া, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, দারিদ্র্যের হার কমানোসহ আওয়ামী লীগ সরকারের নেয়া বিভিন্ন গণমুখী পদক্ষেপ ও অর্জন তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ কোথাও পিছিয়ে থাকবে না। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়বো কথা দিয়েছিলাম, গড়েছি। এখন আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদাও পেয়েছি। ২০২৬ সাল থেকে পথচলা শুরু হবে। সেজন্য আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি।

কোথাও যাতে অনাবাদি জমি না থাকে, সেজন্য দেশের মানুষের প্রতি পুনরায় অনুরোধ করে শেখ হাসিন বলেন, আমরা কারো কাছে ভিক্ষা করে চলতে চাই না, হাত পেতে চলতে চাই না। যতটুকু সম্পদক তা কাজে লাগিয়ে মাথা উচু করে চলব। এজন্য আপনাদের সহযোগিতা দরকার। পানিও বিদ্যুৎ মিতব্যয়ী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

তিনি বলেন, জাতির পিতা স্বপ্ন পুরন করাই আমার লক্ষ্য। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। তিনি দুখী মানুষের মুখে হাসি ফাঁটাতে চেয়েছিলেন। সেটিই আমাদের কর্তব্য বলে মনে করি। এজন্যই আমাদের এই প্রচেষ্টা। বঙ্গবন্ধুর মতো আজীবন দেশের মানুষে কল্যানে ও তাদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে চাই। দেশের মানুষের সেবক হিসেবেই বাবার মতো সেবা করে যাব। এই দেশের মানুষ ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত জীবন পাবে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।

এ সময় সম্প্রতি রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি পুনর্নির্মাণে সরকারের নেয়া পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কয়েক দিন আগে ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস হয়ে গেল। সেখানে হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরই মধ্যে আমরা তালিকা করেছি কোন কোন এলাকায় কতগুলো ঘর পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কতগুলো আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। যাদের ঘরবাড়ি সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে, তাদের আমরা ঘর তৈরি করে দেব। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ঘরগুলো নির্মাণের উপকরণ দিয়ে সহায়তা করব। প্রাকৃতিক দুর্যোগে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের পাশে আমরা আছি। প্রাথমিকভাবে যা যা প্রয়োজন তা দিয়ে যাচ্ছি। আপনাদের চিন্তার কোনো কারন নেই। প্রত্যেকে ঘর যাতে করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা আমি করে দেব। প্রত্যেক এলাকা থেকে তথ্য নিয়েছি। শেখ হাসিনা বলেন, আজকের দিনটা আমার জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছিল। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকতেও মিথ্যা মামলা দিয়েছিল। আবার সেই সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারও মিথ্যা মামলা দেয়। আমার সহযোগী সংগঠন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্র, দেশের সাধারণ মানুষ সে সময় প্রতিবাদ করেছিল। আজকের দিনে অর্থাৎ ১১ জুন আমি সেই বন্দিখানা থেকে মুক্তি পেয়েছিলাম। আশ্রয়ণের ঘর নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, জাতির পিতাকে হত্যা করার পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে ব্যস্ত ছিল। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে জনগণের সেবক হিসেবে যাত্রা শুরু করে। তখন থেকেই ভূমিহীন মানুষদের জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছিলাম। তখন বাংলাদেশের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। তারপরও ভূমিহীন মানুষদের মধ্যে ঘর তৈরি করার জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প নামে একটি প্রকল্প নিয়ে আমরা ঘর বানাতে শুরু করি।