ঢাকা দুই সিটির পশুর হাট

গো খাদ্যের বাড়তি দামের প্রভাব কোরবানির হাটে

অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চান পশু বেপারিরা

প্রকাশ : ১৩ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ফারুক আলম

ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশনের স্থায়ী ও অস্থায়ী পশুর হাট বসানো হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পশু হাটে নিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা। তবে হাটে পশুর দাম চড়া হওয়ায় ক্রেতাদের ভিড় কম দেখা গেছে। পশু কেনাকাটায় ক্রেতাদের আনাগোনা কমের ব্যাপারে পশু ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঢাকার বাসিন্দারা কোরবানি ঈদের দুয়েক দিন আগে পশু কেনাকাটা করেন। কারণ, তাদের কোরবানির পশু রাখার পর্যাপ্ত খালি জায়গা নেই। পাশাপাশি পশুর খাবারের ঝামেলায় এড়াতে চান। সেজন্য কোরবানি ঈদের দুয়েক দিন আগে রাজধানীতে পশু বিক্রি ব্যাপক হয়। মূলত ওই দুই দিনের অপেক্ষায় আছেন পশু বেপারিরা।

এবারও কোরবানির পশুর দাম চড়া হবে বলে জানান খামারি ফরিদ প্রধান। এর কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে। তাই একটু লাভ করতে হলে বেশি দামে পশু বিক্রি করতে হবে। আশা করছি, এবার ঈদে ভালো দাম পাব।

আগামী ১৭ জুন সারাদেশে ঈদুল আজহা পালন করবেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। সেই হিসেবে আর মাত্র চার দিন বাকি। তবে রাজধানীবাসীর সুযোগ-সুবিধার কথা বিবেচনায় নিয়ে বরাবরের মতো এবারও ঢাকার বেশকিছু জায়গায় কোরবানির পশুর হাট বসানোর অনুমতি দিয়েছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। ঈদের আগের চার দিন ও ঈদের দিন এসব হাটে পশু বিক্রি হবে। কিন্তু এরই মধ্যে হাটে পশু আনছেন বেপারিরা।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের তথ্য মতে, এবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় কোরবানির ১০টি অস্থায়ী পশুর হাট বসবে। পাশাপাশি স্থায়ী একটি হাটেও পশু কেনাবেচা হবে। হাটগুলো হচ্ছে- খিলগাঁও রেলগেট মৈত্রী সংঘ ক্লাব-সংলগ্ন, হাজারীবাগের ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি কলেজ-সংলগ্ন, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট-সংলগ্ন, বনশ্রীর মেরাদিয়া বাজার-সংলগ্ন, লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাব-সংলগ্ন, কমলাপুর স্টেডিয়ামণ্ডসংলগ্ন বিশ্বরোডের, দনিয়া কলেজ-সংলগ্ন, ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল-সংলগ্ন, আমুলিয়া মডেল টাউন, লালবাগে রহমতগঞ্জ ক্লাব-সংলগ্ন ডেমরার সারুলিয়ায় সিটি কর্পোরেশনের স্থায়ী পশুর হাট থেকেও কোরবানির পশু কেনা যাবে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অস্থায়ী নয়টি হাট হচ্ছে- ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট-সংলগ্ন, ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাঁচকুড়া ব্যাপারিপাড়া রহমান নগর আবাসিক প্রকল্প এলাকা, খিলক্ষেতের ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের মাস্তুল চেকপোস্ট, ভাটারার সুতিভোলা খালের কাছের খালি জায়গা, উত্তরার ১৬ ও ১৮ নম্বর সেক্টরের কাওলা শিয়ালডাঙ্গা, বউবাজার এলাকা, বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং (আফতাবনগর) ব্লক ই, এফ, জি, এইচ, এল, এম, এন, মিরপুর সেকশন-৬ (ইস্টার্ন হাউজিং ওপেন স্পেস), মোহাম্মদপুরের বসিলায় ৪০ ফুট রাস্তার পাশের খালি জায়গায়।

জানা গেছে, কোরবানির পশুর হাট কেন্দ্র করে রাজধানীতে যাতে যানজটের ভোগান্তি পোহাতে না, সেজন্য আজ থেকে পুরোদমে চলবে পশু বিক্রি। সেজন্য ট্রাক ও পিকআপ করে দলবদ্ধ হয়ে হাটে কোরবানির পশু নিয়ে আসছেন খামারি ও ব্যবসায়ীরা। হাট শুরুর আগেই নির্ধারিত স্থানে গবাদি পশু রেখে পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। উৎসুক ক্রেতারা আগেই হাটে এসে দরদাম জানার চেষ্টা করছেন। ইজারার শর্তানুযায়ী, পাঁচ দিন কোরবানির পশু কেনাবেচা করতে পারবেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।

সরেজমিন শনিরআখড়াসহ রাজধানীর কয়েকটি পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, দনিয়া কলেজের সামনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উত্তর পাশে ফাঁকা জায়গায় বাঁশ পুঁতে, শামিয়ানা টানিয়ে শত শত গরু বেঁধে রাখা হয়েছে। হাটের সীমানা যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজার থেকে প্রায় শনিরআখড়া পর্যন্ত চলে গেছে। হাটে ট্রাক ও পিকআপে করে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পশু নিয়ে আসছেন বেপারিরা। তবে হাট এখনো জমে ওঠেনি। অনেককে দরদাম করতে দেখা গেছে। কোরবানির পশু নিয়ে হাটে এসেছেন ব্যবসায়ীরা। হাট শুরুর আগেই নির্ধারিত স্থানে গবাদি পশু রেখে পরিচর্যা করছেন। হাজারীবাগ, ঢাকা পলিটেকনিক কলেজ মাঠ, মিরপুর ৬ নম্বর ইস্টার্ন হাউজিংয়ের মাঠে কোরবানির পশু উঠেছে। দেশের সর্ববৃহৎ হাট গাবতলী ও সারুলিয়ার স্থায়ী হাট পশুতে ভরে উঠেছে। ধোলাইখাল, রহমতগঞ্জে পশুর হাটেও দেখা গেছে প্রায় একই চিত্র। ট্রাক ও পিকআপ চলাচলের নিষেধাজ্ঞা, অতিরিক্ত ভাড়া ও সড়কের দুর্ভোগ এড়াতে আগেভাগেই হাটে এসেছেন।

মিরপুর ১০ নম্বর এলাকার বাসিন্দা কাজী হাসানুজ্জামান বলেন, কোরবানির ঈদ কাছাকাছি এসেছে, আগেভাগে পশুর দামের ধারণা নিতে গাবতলী হাটে এসেছি। গত বছরের তুলনায় এবার পশুর দাম একটু বেশি মনে হচ্ছে। সেজন্য ঈদের দুয়েক দিন আগে পশু কিনব। বাড়িতে পশু রাখার জায়গা না থাকায় এটা করি।

সিরাজগঞ্জ থেকে আসা পশু বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, ট্রাকে বাড়তি ভাড়া ও সড়কের দুর্ভোগ এড়াতে আগেভাগে শনিরআখড়া হাটে পশু নিয়ে এসেছি। আশা করি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে পশু বিক্রি করে বাড়ি ফিরে যেতে পারব। হাটের সার্বিক পরিবেশ ভালো রয়েছে, তেমন কোনো অসুবিধা নেই। তবে গরমের কারণে সড়কের পাশে থাকা কষ্ট হচ্ছে।

ধোলাইখালের সাদেক হোসেন খোকা মাঠের সামনে বাঁশের খুঁটিতে চারটি গরু বেঁধে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, প্রত্যেক বছর হাটে গরু নিয়ে আসেন। এবারও এসেছেন। গরু বিক্রির বাজার ভালো যাবে বলে আশা তার। প্রতি বছর গরুর খাবারের দাম বাড়ছে। বাধ্য হয়ে বেশি দামে গরু বিক্রি করতে হবে। এভাবে পশু খাদ্যের দাম বাড়তে থাকলে কোরবানির পশুর দাম নাগালের বাইরে যাবে। রংপুরের গরুর বেপারি জলিল মিয়া গতকাল ১০টি গরু নিয়ে গাবতলী হাটে এসেছেন। রাস্তায় গরুগুলো নিয়ে কয়েক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি ভেবেছিলেন আগেভাগে কোরবানির পশু নিয়ে এসে ভালো জায়গায় অবস্থান করবেন। কিন্তু সেটি তার ভাগ্যে আর হয়নি, জলিল মিয়া গাবতলী হাটে এসে দেখেন, আগেভাগেই পছন্দের জায়গায় অন্য পশু বেপারিরা অবস্থান নিয়েছেন।

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থেকে ২০টি গরু নিয়ে সোমবার রাতে শনিরআখড়া হাটে আসেন সাইফুল ইসলামসহ আরও তিনজন। সাইফুল বলেন, কোরবানির হাট এখনও জমে ওঠেনি, সেজন্য মানুষ আসছে দাম জিজ্ঞেস করে চলে যাচ্ছেন। এবার গরুর দাম গত বছরের চেয়ে বেশি হবে জানিয়ে তিনি বলেন, গরুর খাদ্যের দাম অত্যাধিক বেশি। এক বস্তা খাদ্য গত বছর যেটা ১ হাজার ৫০০ টাকায় কিনছি, এইবার সেইটা হইছে ২ হাজার টাকা। ভুষি ছিল ৫৫০ টাকা, এইবার হইছে ৭৫০ টাকা। আমরা নিজেদের গরু আনছি, আবার কিনেও আনছি, গতবারের চেয়ে প্রতিটি গরু ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা বেশিতে কিনতে হয়েছে। গাবতলী হাটে আসা মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, হাটে গরু দেখতে এসেছেন, তবে দামে বনছে না। বেপারিরা যেই দাম বলেন, তাতে গরু কেনা যাবে না। প্রথম দিন বলে হয়তো তারা দাম বেশি চাচ্ছেন। আমিও কিনছি না। আরো সময় গেলে হয়তে দাম কম বলবে। আমিও আরো দুয়েকটি হাট দেখে পরে কিনব।