প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সভা

ঈদুল আজহায় কোনো কৃত্রিম সংকট যাতে না হয়

প্রকাশ : ১৩ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা সুষ্ঠু, আনন্দময় ও উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপন নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের করণীয় নির্ধারণে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় কোনোরূপ কৃত্রিম সংকট তৈরি যাতে না হয়, সে লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সভায় কোরবানির পশুর সহজলভ্যতা, পরিবহণ, হাট ও অনলাইন মার্কেট ব্যবস্থাপনা এবং নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সভায় জানানো হয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে এ বছর কোরবানিযোগ্য পশুর যথেষ্ট জোগান রয়েছে। উদ্বৃত্ত পরিমাণ কোরবানির পশুর সরবরাহ থাকায় কোনো সংকট সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা নেই। বাজার ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে পরিচালিত হলে যৌক্তিক মূল্যে কোরবানির পশুর ক্রয়-বিক্রয় হবে বলে প্রত্যাশা করা যায়।

গতকাল প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং জানায়, গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। সভার শুরুতে উপস্থিত সবাইকে স্বাগত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে কোরবানির পশুর সহজলভ্যতা, পরিবহণ, হাট ব্যবস্থাপনা, অনলাইন মার্কেট মনিটরিং, ঈদযাত্রা, কোরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, চামড়া সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা, ঈদ ফিরতি যাত্রাসহ সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুতি, কার্যক্রম ও আন্তঃদপ্তর নিবিড় সমন্বয়ের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) একটি সমন্বিত প্রতিবেদন সভায় উপস্থাপন করেন। এরপর আলোচনার ওপর সিনিয়র সচিব/সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক, বিজিএমইএ’র প্রতিনিধি, বিভিন্ন দপ্তর/সংস্থার প্রধান ও প্রতিনিধিরা নিজ নিজ দপ্তরের প্রস্তুতি ও সমন্বয়ের বিষয়াদি সভায় বিস্তারিত তুলে ধরেন।

সড়কপথে ঈদযাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ, সেতু বিভাগ, জননিরাপত্তা বিভাগ, পুলিশ হেডকোয়াটার্স, হাইওয়ে পুলিশ, শিল্পাঞ্চল পুলিশ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং মাঠ পর্যায়ে বিভাগীয় কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো তাদের দীর্ঘ প্রস্তুতির বিষয়টি সভায় তুলে ধরেন। যানজটমুক্ত ঈদযাত্রা নিশ্চিত করতে হটস্পট চিহ্নিতকরণ, হটস্পটগুলোতে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর দায়িত্বশীল জনবলের উপস্থিতি ও প্রয়োজনীয় সমন্বয় নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানান পুলিশ মহাপরিদর্শক।

পুলিশ মহাপরিদর্শক যানজটমুক্ত চলাচল নিশ্চিতের বিষয়টি মহাসড়কের পাশে কিংবা যত্রতত্র কোরবানির পশুর হাট গড়ে উঠার সঙ্গে অনেকাংশে সম্পর্কযুক্ত বলে অভিমত ব্যক্ত করে হাট স্থাপনের অনুমতি প্রদানের ক্ষেত্রে আন্তঃদপ্তর সমন্বয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে গার্মেন্ট কর্মীদের ছুটির বিষয়টি সমন্বয়ের জন্য এফবিসিসিআই ও বিজেএমইসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানান। ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ঘরমুখী মানুষের রাজধানী ত্যাগকালে যানজট ও ভোগান্তিরোধে গৃহীত পরিকল্পনার কথা সভায় তুলে ধরেন।

সভায় সবার পক্ষ থেকে সড়কপথে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন ও যানজটমুক্ত রাখতে হটস্পট চিহ্নিতকরণ, হটস্পটগুলোতে অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ, দুর্ঘটনায় পতিত কিংবা বিকল যানবাহন তাৎক্ষণিকভাবে অপসারণে নিবিড় সমন্বয় ও কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে কার্য সম্পাদনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

ঈদে রেলযাত্রা, রেলের টিকিটপ্রাপ্তি এবং শিডিউল রক্ষার বিষয়ে গৃহীত পরিকল্পনা ও কার্যক্রম রেল সচিব সভায় তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব রেলের টিকিটপ্রাপ্তিতে যেকোনো ধরনের ভোগান্তি, হয়রানি, প্রতারণা রোধে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন। তিনি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে টিকিট বিক্রয়ের বিষয়টি নিবিড়ভাবে মনিটরিংয়ের ক্ষেত্রে সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে নজরদারির জন্য নির্দেশনা দেন। শিডিউল বিপর্যয় রোধে বিকল্প ট্রেন, রিলিফ ট্রেনের ব্যবস্থা রাখতে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানান। পাশাপাশি বিকল্প অতিরিক্ত বগি রাখার বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে অনুরোধ করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব।

বর্ষা মৌসুম বিবেচনায় রেখে ঈদে ঘরমুখী ও ফিরতি মানুষের নৌযাত্রায় গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব গৃহীত প্রস্তুতি সম্পর্কে সভাকে অবহিত করেন। সভাপতি নৌযানগুলোতে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহণ না করতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনার পাশাপাশি নৌযানগুলোর ফিটনেস নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দেন। তিনি লঞ্চ, ফেরী ও নৌঘাটগুলোর নিরাপত্তা, যাত্রীবান্ধব ঘাট ব্যবস্থাপনা এবং টিকিটপ্রাপ্তির সহজলভ্যতা নিশ্চিত করার জন্য সর্বদা সচেষ্ট থাকতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানান।

এছাড়া পশু কোরবানি ও আবর্জনা অপসারণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে সভায়। স্থানীয় সরকার বিভাগ হতে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদকে নির্দিষ্ট স্থানে পশু কোরবানির বিষয়ে যে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেছে সে বিষয়ে আলোচনা করা হয়। ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা সভায় সিটি করপোরেশনের প্রত্যক্ষ ও সরেজমিন তত্ত্বাবধানে স্বল্পতম সময়ে শতভাগ বর্জ্য অপসারণের কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন।

তারা জানান, আগে থেকেই পরিকল্পনা অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবং বর্জ্য পরিবহণকারী গাড়িসহ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণের পূর্ব প্রস্তুতি রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব সিটি করপোরেশনের পরিকল্পনামাফিক গৃহীত কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

এছাড়া দেশের সব ঈদের জামাতের নিরাপত্তা রক্ষার্থে স্থানীয় প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক নজরদারি রাখার বিষয়ে আলোচনা করা হয়। দেশের সব ঈদের জামাতের নিরাপত্তা বিধানকল্পে স্থানীয় প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাসহ সব প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ বিষয়ে সতর্ক নজরদারি করবে বলে সভায় জানানো হয়।

ঈদযাত্রায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থি ঠিক রাখতে ছিনতাই, রাহাজানি, প্রতারণার মতো গণউপদ্রব সৃষ্টিকারী চক্রগুলোর অপকৌশলকে নস্যাৎ করার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে আলোকপাত করা হয়। ঈদে গার্মেন্টস মালিকরা তাদের কর্মীদের প্রাপ্য মজুরি অগ্রিম বোনাসসহ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে আলোচনা হয়। যানজট এড়ানোর স্বার্থে সরকারি ছুটির সঙ্গে গার্মেন্ট খাতের ছুটি সমন্বয় করে আগে-পরে পর্যায়ক্রমে ছুটি নির্ধারণ করার বিষয়টি নিয়ে সভায় গুরুত্ব সহকারে আলোচনা করা হয়।

এ বিষয়ে কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে- শপিংমল, মার্কেট, বিপণিবিতানগুলোতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ঈদের সময় ঢাকার বাইরে গমনকারীদের মূল্যবান গহনা টাকা-পয়সা নিরাপদে রেখে যাবার বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে।

গার্মেন্ট মালিকরা তাদের কর্মীদের প্রাপ্য মজুরি অগ্রিম বোনাসসহ প্রদানের ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারি ছুটির সঙ্গে গার্মেন্ট খাতের ছুটি সমন্বয় করে আগে-পরে পর্যায়ক্রমে ছুটি নির্ধারণ নিশ্চিত করতে হবে।