এমপি আনার হত্যা

‘আ.লীগ নেতা মিন্টু সদুত্তর দিতে না পারলে গ্রেপ্তার’

প্রকাশ : ১৩ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়েছে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুকে। ডিবির তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত রয়েছে। ওই তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে মিন্টু যদি কোনো সদুত্তর দিতে না পারেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা (গ্রেপ্তার) নেবেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। গতকাল বিকালে মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এসব কথা বলেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।

মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুর কাছে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত বিচার বিশ্লেষণের পরই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাইদুল করিম মিন্টুকে ডাকা হয়েছে। মিন্টুর কাছে তথ্যগুলো জানতে চাওয়া হবে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে যদি মিন্টু সদুত্তর দিতে পারেন, তবে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। আর যদি কোনো প্রশ্নের সদুত্তর দিতে না পারেন, তবে তদন্তের ধারাবাহিকতায় যা করার তাই করা হবে। মিন্টুকে গ্রেপ্তার না দেখিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ডিবিপ্রধান বলেন, ‘আমাদের তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত রয়েছে। সে তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে মিন্টু যদি কোনো সদুত্তর দিতে না পারেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা তখনই আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।’

তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুকে নিয়ে আসি। আমরা যখন কাউকে নিয়ে আসি অবশ্যই কিছু তথ্য-উপাত্ত থাকে। প্রমাণের ভিত্তিতেই তাকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করি। জিজ্ঞাসাবাদে গ্যাস বাবু অকপটে স্বীকার করেন যে, ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়া ঘাতক শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে তিনি বৈঠক করেছিলেন। শিমুল ভূঁইয়া গ্যাস বাবুকে এমপি আনার হত্যার পর ছবি দেখিয়েছেন।’ ১৬ মে যদি হত্যাকাণ্ডের তথ্য ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু ও গ্যাস বাবু জেনে থাকেন তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তারা কেন জানালেন না? এটিও অপরাধ। এমন প্রশ্নের জবাবে হারুন অর রশীদ বলেন, ‘হ্যাঁ এটি সঠিক। কেন তারা হত্যাকাণ্ডের বিষয় গোপন করলেন এটিই জানতে চাওয়া হবে।’

এমপি আনার হত্যাকাণ্ডে এখন পর্যন্ত দুজনের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা পেয়েছেন। এমন আরো কতজন রাজনৈতিক ব্যক্তির সম্পৃক্ততা রয়েছে হত্যাকাণ্ডের পেছনে? এই প্রশ্নের উত্তরে ডিবিপ্রধান বলেন, ‘জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক গ্যাস বাবু রিমান্ডে রয়েছেন এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিন্টুকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এছাড়া অনেকের সম্পর্কে তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। সবকিছু ধীরে-সুস্থে এগোচ্ছি। এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত, যারা নির্দেশ দিয়েছেন এবং এর সঙ্গে যে বা যারাই জড়িত, তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এটাও বলে রাখতে চাই, কারো প্ররোচনায় কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিতে কোনো হয়রানি করা হবে না।’

তদন্তকারী কর্মকর্তারা স্বাধীনভাবে সব মামলার ঘটনা তদন্ত করেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাদের ওপর কোনো চাপ প্রয়োগ করে না। কারণ, তারা জানে ডিবির সব চৌকস টিম মামলার তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধী দেশে কিংবা বিদেশে থাকলেও তাদের খুঁজে বের করে আনে। কোনো নিরীহ লোককে হয়রানি করার প্রশ্নই আসে না।’

হারুন অর রশীদ আরো বলেন, ‘খুনিরা ঠান্ডা মাথায় এমপি আনারকে খুন করার পর মরদেহ গুম করেন। আমরা বাংলাদেশ থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করি। এর মধ্যে মূল ঘাতক আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া জিজ্ঞাসাবাদে সবকিছু স্বীকার করেছেন। আনার হত্যার ঘটনা ঘটেছে কলকাতায়। আমরা কলকাতায় গিয়েছিলাম এবং সেখানে গ্রেপ্তার আসামির সঙ্গে কথা বলেছি।’