দেশে গরমের তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে গরমের মৌসুম। বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে কাল বৈশাখি ঝড়ের সেই চিরাচরিত লক্ষণের দেখা মেলেনি। এরই মধ্যে চলে আসছে আষাঢ় মাস। বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসের পর আষাঢ় মাস এলেও বৃষ্টির পরিমাণ হবে কম- এমনটাই আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদরা। তবে গতকাল বিকালে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেও ভ্যাপসা গরমের মাত্রা কমেনি। এভাবে খরার মৌসুম দীর্ঘস্থায়ী হতে থাকলে ফসল উৎপাদন ও সুপীয় পানির সংকট চরম আকারে ধারণ করতে পারে। একই সঙ্গে সমুদ্রের তীরবর্তী এলাকায় লবণাক্তের পরিমাণ বাড়বে মলে মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা।
গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রাজশাহীতে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বোনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ঠাকুরগাঁও ২২ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আষাঢ় মাস শুরু হওয়ার আগেই বৃষ্টির ঝুমঝুম শব্দে শীতল আবহাওয়ায় প্রকৃতি এক নতুন রূপে সাজে। কিন্তু এবার আষাঢ় এলেও বর্ষার আগমনী বার্তা নেই। বরং ভ্যাপসা গরম, রোদে প্রাণিকুল হাঁপিয়ে উঠছে, যা আবহাওয়া পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব।
আবহাওয়াবিদদের মতে, বাংলাদেশে বর্ষাকাল শুরু হয় জুনে। এ মাসে দেশে প্রচুর বৃষ্টি হয়। তবে এবার জুনের অর্ধেক দিন শেষ হলেও ভারি বর্ষণের সুষ্পষ্ট আভাস মিলছে না। আষাঢ়-শ্রাবণের সেই মুষলধারার বৃষ্টি আর ঝরছে না। বৃষ্টির পরিমাণও কমে গেছে। এতটাই কমেছে যে, সেটি স্বাভাবিকের চেয়ে গড়ে প্রায় ২৫ ভাগ। আষাঢ় মাস শুরু হওয়ার আগেই টানা কয়েক দিন বৃষ্টি হয়, কিন্তু এবার আষাঢ় এলেও বৃষ্টির দেখা নেই। শুধু মানুষ নয়, দাবদাহে পুড়ছে মাঠ-ঘাট এবং শস্যও। গত কয়েক দিন ধরে মাঝারি থেকে তীব্র দাবদাহে ফসলের মাঠ ফেটে চৌচির। বৃষ্টির অভাবে বীজতলার চারাও নষ্ট যাচ্ছে। যে কারণে মহাবিপাকে পড়েছেন কৃষক। অসহনীয় গরমে জনজীবনে দেখা দিয়েছে বিপর্যয়। বাড়ছে নানা রোগের আশঙ্কা। আবহাওয়ার এই পরিবর্তনের কারণে এরই মধ্যে অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন ডায়রিয়া, আমাশায়, সর্দি-জ্বরসহ নানা রোগে।
জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি এবং বাতাসের গতিবেগ কিছুটা কম হওয়ার কারণে এমন গরম অনুভূত হচ্ছে। ভ্যাপসা গরমের জন্য জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি এবং বাতাসের গতিবেগ কিছুটা কম। ঢাকায় বাতাসের বেগ প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার। বৃষ্টির দেখা মেলেনি, উল্টো বাড়ছে তাপমাত্রা। দিনভর তাপ বিলাচ্ছে সূর্য। সন্ধ্যা নামলেই ভ্যাপসা গরম। আবহাওয়া অধিদপ্তরও দিতে পারছে না বৃষ্টির আগাম সুখবর। ফলে বর্ষাকালের ভরা মৌসুম বৃষ্টিবিহীন পার হওয়ার শঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে।
আষাঢ় মাস আমন রোপণের উপযুক্ত সময়। এই সময়ে জমিতে আমন ধান লাগানো প্রায় শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু এবার বৃষ্টি না থাকায় ধান রোপণ করা যাচ্ছে না। আমন ধান চাষে খরচ কম ও লাভজনক। তাই আমনচাষে বিঘ্ন ঘটলে প্রান্তিক চাষিরা লোকসানে পড়বেন। কৃষকরা জানান, বৃষ্টি নেই, জমি ফেটে চৌচির হয়ে আছে। বৃষ্টির আশায় অনেকেই শুকনো জমি চাষ করে রাখছে। কবে বৃষ্টি হবে, কবে জমিতে ধান রোপণ করবে সেই অপেক্ষায় আছেন কৃষকরা। তারা আরো বলেন, কেউ কেউ সেচ যন্ত্রের মাধ্যমে সেচের ব্যবস্থা করলেও অনেক কৃষক তা পারছে না।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ শুক্রবার রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়; চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। এদিনে সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামন্য বৃদ্ধি পেতে পারে। আগামীকাল শনিবারও আবহাওয়ার একই অবস্থা থাকবে। আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। অথচ আমাদের দেশের আবহাওয়া অনুযায়ী আষাঢ় মাসের আগমনিতে কয়েক দিন টানা বৃষ্টির আভাস দেখা যায়। এবার দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আটকে আছে বর্ষা মৌসুম। এতে আষাঢ়ে সামান্য বৃষ্টিপাত হতে পারে এখানে-সেখানে। তবে ভ্যাপসা গরম আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।