গাজার শোকাবহ পরিবেশে শুরু হলো এবারের হজ

মুসল্লিরা কাল যাবেন আরাফাত ময়দানে

প্রকাশ : ১৫ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

গাজা যুদ্ধের শোকাবহ পরিবেশে সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে শুরু হয়েছে হজের আনুষ্ঠানিকতা। আরবি হিজরি সন ১৪৪৫ এর জিলহজ মাসের ৮ তারিখ আজ। আরবি বর্ষপঞ্জিকার শেষ মাস জিলহজের ৮ তারিখ থেকে শুরু হয় হজ। এরপর ৯ জিলহজে হয় আরাফাতের দিন। আর ১০ জিলহজে পশু কোরবানি করেন হাজিরা। পশু কোরবানি শেষে আরও দুই দিন থাকে হজের বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা। অর্থাৎ, হজ সম্পন্ন করতে সবমিলিয়ে সময় লাগে পাঁচ দিন। প্রথম দিন হজযাত্রীরা (পুরুষ) সেলাই ছাড়া ইহরাম বা সাদা কাপড় পরেন। অপর দিকে নারীরা ঢিলেঢালা পোশাক পরেন। এদিন আরও কিছু নিয়ম নীতি মানতে হয়। যেমন কারো সঙ্গে রাগারাগি না করা এবং যৌন সম্পর্কে লিপ্ত না হওয়া। ইহরাম বাধার পর দলে দলে হাজিরা মিনায় যান। বেশিরভাগ মানুষ বাসে ও গাড়িতে গেলেও কেউ কেউ হেঁটেও মিনায় যান। এটি ৮ কিলোমিটারের একটি পথ। হজযাত্রীরা এদিন মিনাতেই কাটান। এর পরের দিন ভোরে তারা সেখান থেকে চলে আসেন। হজযাত্রীরা মিনায় নামাজ এবং আল্লাহকে স্মরণ করে সময় কাটান। দ্বিতীয় দিন হজযাত্রীরা যান আরাফাতের ময়দানে। সেখানে তারা পুরো দিনটি কাটান। আরাফাত শুধু হজের কারণেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি ইসলামিক বর্ষপঞ্জিকার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। আরাফাত ময়দানে অবস্থিত আরাফাত পাহাড়ে দাঁড়িয়ে নিজের জীবনের শেষ ভাষণটি দিয়েছিলেন হযরত মোহাম্মদ (সা.)। মিনা থেকে ১৪ দশমিক ৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে আরাফাতের ময়দানে উপস্থিন হন লাখ লাখ মানুষ।

আরাফাতের ময়দানে সারাদিন কাটানোর পর সূর্যাস্তের পর মুজদালিফায় যান হাজিরা, যা ৯ কিলোমিটারের একটি পথ। সেখানে খোলা আকাশের নিচে রাত্রি যাপন করেন তারা। ওই সময় প্রতীকী শয়তানের দিকে ছুড়ে মারার জন্য ছোট পাথর সংগ্রহ করেন তারা। তৃতীয় দিনের শুরুটা হয় মুজদালিফায়। কিন্তু এদিন সূর্যোদয়ের আগে হজযাত্রীরা মুজদালিফা থেকে মিনার দিকে রওনা দেন। মিনায় পৌঁছে তারা প্রতীকী শয়তানকে লক্ষ্য করে ছোট ছোট সাতটি নুড়ি পাথর নিক্ষেপ করেন।

মহান আল্লাহ ইব্রাহিম (আঃ)-কে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তিনি যেন তার পুত্রকে কোরবানি করেন। মিনার এই স্থানে যখন আল্লাহকে খুশি করতে ইব্রাহিম (আঃ) তার পুত্রকে নিয়ে আসেন, তখন এখানে উপস্থিত হয় শয়তান, যেটি নবী ইব্রাহিমকে আল্লাহর আদেশ অমান্য করতে প্ররোচনা দিচ্ছিল। ওই সময় ইব্রাহিম (আঃ) শয়তানকে লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করেন। এখন হাজিরা এই স্থানে প্রতীকী শয়তানকে লক্ষ্য করে পাথর মারেন।

পাথর নিক্ষেপ শেষে হাজিদের কোরবানি করতে হয়। ইব্রাহিম (আঃ) যখন তার পুত্রকে কোরবানি করতে যান তখন সেখানে আল্লাহতায়ালা একটি ভেড়াকে এনে দেন।

কোরবানি শেষে হাজিরা (পুরুষ) তাদের মাথা মুণ্ডন করেন এবং ইহরামের কাপড় খোলেন। এরপর তারা কাবা তাওয়াফ করতে মক্কায় যান, যা মূল তাওয়াফ হিসেবে পরিচিত। কাবায় সাত চক্কর দেওয়ার পাশাপাশি সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে তারা সাতবার আসা যাওয়া করেন। সবকিছু শেষ হওয়ার পর মিনায় তারা তাদের ক্যাম্পে ফিরে যান। চতুর্থ ও পঞ্চম- এ দুই দিনও প্রতীকী শয়তানকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়েন তারা। এই সময় প্রতীকী শয়তানের তিনটি স্তম্ভের প্রত্যেকটিতে সাতটি করে নুড়ি পাথর ছোড়েন হাজিরা। এখানে হাজিরা আরো দুই দিন অবস্থান করবেন। মিনার আনুষ্ঠানিকতা শেষে হজযাত্রীরা মক্কায় ফিরে যান এবং শেষবারের মতো কাবা তাওয়াফ করেন, যা ‘বিদায়ি তাওয়াফ’ নামেও পরিচিত। নিজ বাড়িতে বা দেশে ফিরে যাওয়ার আগে বেশিরভাগ হাজি যান মদিনায়। যেখানে শায়িত আছেন শ্রেষ্ঠ নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.)। মদিনায় হাজিরা নবীজীর রওজা পরিদর্শন করেন।

গাজা যুদ্ধের ভয়াবহ পটভূমির এবং কষ্টকর গ্রীষ্মের উত্তাপের মধ্যেই হজ শুরু হওয়ায় গতকাল ১৫ লাখেরও বেশি হাজী মক্কায় অবস্থান করেন। হজ পালনকারীরা মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদের মাঝখানে অবস্থিত কাবাঘর তাওয়াফ করবেন। এদের অনেকেই ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে আট মাস ধরে চলা যুদ্ধের ব্যাপারে দুঃখ প্রকাশ করেন। মরক্কোর ৭৫ বছর বয়সি জাহরা বেনিজাহরা কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান ‘ফিলিস্তিনে আমাদের ভাইয়েরা মারা যাচ্ছেন এবং আমরা আমাদের নিজের চোখে তা দেখতে পাচ্ছি।’

বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ্যার ইন্দোনেশিয়ার বেলিন্ডা এলহাম বলেন, তিনি ‘প্রতিদিন প্রার্থনা করবেন, যাতে ফিলিস্তিনে যা ঘটছে, তার যেন অবসান ঘটে। হামাস শাসিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, হামাসের বিরেুদ্ধে ইসরায়েলের পাল্টা আগ্রাসনে গাজায় কমপক্ষে ৩৭, ২৩২ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই এবং নারী ও শিশু।

সরকারি ‘সৌদি প্রেস এজেন্সি’ জানিয়েছে, সৌদি বাদশাহ সালমান সোমবার ‘গাজা উপত্যকায় হামলায় শহীদ ও আহতদের পরিবার থেকে ১ হাজার হজযাত্রীকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য একটি আদেশ জারি করেছেন। এতে চলতি বছর ফিলিস্তিনের হজযাত্রীর সংখ্যা বেড়ে ২ হাজার জনে দাঁড়াবে। আর এ বছরের হজে ফিলিস্তিনের হজযাত্রীরদের বিশেষ সম্মান জানানো হবে।

এদিকে উপসাগরীয় এ দেশের ধর্মীয় অনুষ্ঠান হজের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী তৌফিক আল-রাবিয়াহ গত সপ্তাহে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, এক্ষেত্রে ‘কোনো রাজনৈতিক কার্যকলাপ’ বরদাস্ত করা হবে না। তবে হজযাত্রীরা কীভাবে ফিলিস্তিনিদের সাথে সংহতি প্রকাশ করতে পারে, তা স্পষ্ট নয়।

সূত্র : গালফ নিউজ, আলজাজিরা