ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ঈদবাজারে পর্যাপ্ত মসলা আমদানি

তবুও দামের খড়গ ঢাকা ও চট্টগ্রামে

তবুও দামের খড়গ ঢাকা ও চট্টগ্রামে

কোরবানির ঈদে সংসারে মসলার প্রয়োজন কয়েকগুণ বেড়ে যায়। বিশেষ করে মাংস রান্নার জন্য পেঁয়াজ, রসুন, আদার মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সঙ্গে লাগে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে গরম মসলাও। তবে এসব পণ্যের ক্রেতাদের জন্য দুঃসংবাদ বাজারে। মসলার বাজারে খরচের বড় খড়গ লেগেছে। ঢাকার বিভিন্ন বাজারে গত বছরের তুলনায় এবার প্রায় সব ধরনের মসলার দাম বাড়তি। শেষ কয়েক দিনের ব্যবধানেও দাম বেড়েছে আরেক দফা। এখন রাজধানীর বাজারে দেশি পেঁয়াজ দামের দিক থেকে শতক ছুঁইছুঁই করছে। কোথাও ছুঁয়েছেও। তবে মোটা দাগে খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ৮০ টাকা আর একমাস আগে ৬০ টাকা ছিল।

একইভাবে গত একসপ্তাহে রসুনের দাম ২০ টাকা বেড়ে ২৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বড় লাফ দিয়েছে আদার দাম। ৮০ টাকা বেড়েছে কেজিপ্রতি। এখন বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা ছিল। এছাড়া অন্যান্য গরম মসলার দামও আকাশছোঁয়া। এমন পরিস্থিতিতে ঈদের প্রয়োজনীয় এসব মসলা কিনতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। একেবারে নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তরা নিত্যপণ্যের দরে ঊর্ধ্বগতিতে নাজেহাল হয়ে পড়ছেন। ক্রেতারা বলছেন ১ হাজার টাকা খরচ করেও প্রয়োজনের মসলা কিনতে পারছি না। এটা কোনো সাধারণ বিষয় নয় মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য। তবে দাম বাড়ার জন্য ছোট ব্যবসায়ীরা দায় চাপাচ্ছেন আমদানিকারক ও পাইকারদের ওপর। আর আমদানিকারক ও পাইকাররা দাঁড় করাচ্ছেন বিশ্ববাজার, ডলারের দর, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি ও রপ্তানিকারক দেশগুলোতে উৎপাদন কমে যাওয়াসহ নানা অজুহাত। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, রমজানের আগে যেমনি নিত্যপণ্যের দর বাড়ালেন কৌশলী ব্যবসায়ীরা তেমনি কোরবানির আগেও সেই পথেই হাঁটলেন তারা। সুযোগ নিলেন চাহিদা বাড়ার।

গরম মসলার বাজারে এ বছর সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে এলাচের। গত বছরের তুলনায় এখন মসলাটির দর প্রায় দ্বিগুণের কাছাকাছি। মানভেদে প্রতি কেজি এলাচ বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৬০০ থেকে ৪ হাজার ২০০ টাকা। গত বছর এ দর ছিল ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা। অর্থাৎ এখন ১০০ গ্রাম খোলা এলাচ কিনতে গুনতে হচ্ছে প্রায় ৪০০ টাকা। জিরার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকা। খুচরা নিলে প্রতি ১০০ গ্রাম ১০০ টাকা রাখা হচ্ছে। গত বছর কোরবানির আগে জিরার কেজি কেনা গেছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায়। প্রতি কেজি লবঙ্গের দাম ১ হাজার ৮০০ টাকা। ১০০ গ্রাম ২০০ টাকাও বিক্রি হচ্ছে। যা গত বছর ১৫০ টাকা ছিল। এছাড়া প্রতি ১০০ গ্রাম দারুচিনি ২০ টাকা বেড়ে ৫০ টাকা, লং ৪০ টাকা বেড়ে ২০০ টাকা, গোলমরিচ ১০০ টাকা, তেজপাতা ৩০ টাকা এবং কালো এলাচ ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে বেড়েছে শুকনো মরিচের দামও। প্রতি ১০০ গ্রাম শুকনো মরিচ ৫০ টাকা এবং কেজি ধরে কিনলে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ, গত বছরের তুলনায় কেজিপ্রতির দাম বেড়েছে প্রায় ১৫০ টাকা। দাম বাড়ার এই পরিসংখ্যান উঠে এসেছে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার দরের তথ্যেও। সংস্থাটির বাজারদর অনুযায়ী, এক বছরে দেশি পেঁয়াজের দাম প্রায় ১০ শতাংশ, রসুনের দাম সর্বোচ্চ ৬৯, আদার ২৩, দারুচিনি ১৯, লবঙ্গ ১১, এলাচ ৮৭ ও তেজপাতার ৮৫ শতাংশ বেড়েছে। এক বছরে জিরার দর না বাড়লেও এক মাসে বেড়েছে প্রায় ৭ শতাংশ।

এসব নিয়ে বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এনায়েত উল্লাহ জানান অন্যান্য মসলার দাম আমদানি খরচের হিসেবে তুলনামূলক বাড়েনি বরং কম রয়েছে। শুধু এলাচের দামটা একটু বেশি। কারণ, বেশিরভাগ এলাচ আসে ভারত থেকে। সেখানে এবার গরমের কারণে উৎপাদন কম হয়েছে। তিনি বলেন, এখন ডলারের দাম বেশি। বিশ্বব্যাপী মসলার দাম বেশি। মসলা আমদানিতে পরিবহন খরচ বেড়েছে। এসব কারণে দাম বেড়েছে। তিনি আরো বলেন, খুচরা বিক্রেতারা আবারও কিছুটা দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। পাইকারিতে দাম তার চেয়ে কম। খুচরা ব্যবসায়ীরা ২০, ৫০, ১০০ টাকার করে মসলা বিক্রি করেন, সেজন্য তারা দর কিছুটা বেশি নিচ্ছেন। তাদের ঘাটতি বেশি।

এদিকে চট্টগ্রামেও কোরবানির ঈদের আগে প্রতি বছরই বাড়ে সব ধরনের মসলার দাম। বাড়তি চাহিদাকে পুঁজি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দাম বাড়িয়ে দেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। অথচ চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসেই ৩২ হাজার ১৭০ টন লবঙ্গ, ২৯ হাজার ৬৪৬ টন গোলমরিচ, ৪১ হাজার ৩৪৬ টন জিরা, ২৪ হাজার ২৬৭ টন এলাচ আমদানি হয়েছে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ।

খাতুনগঞ্জে ভুটানের বড় দানার এলাচ ৪ হাজার টাকা, গুয়াতেমালার মাঝারি দানার এলাচ ২ হাজার ৯০০ থেকে ৩ হাজার ৩০০ টাকা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভারত, সিঙ্গাপুর ও ইন্দোনেশিয়ার ছোট দানার এলাচ প্রতি কেজি ২ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, জয়ত্রি ২ হাজার ৯০০ থেকে ৩ হাজার, জিরা ৭৫০ থেকে ৮০০, গোলমরিচ ৭৮০ থেকে ৮৫০ টাকা, জায়ফল ৭০০ থেকে ৭৬০ টাকা এবং কিশমিশ মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮৫০ টাকায়। বাজারে প্রতি কেজি হলুদ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায়। মানভেদে এক কেজি আদার দাম পড়ছে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা। রসুন বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৬০ টাকায়। ধনিয়া বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ১৮০ থেকে ২২০ টাকা। মানভেদে এক কেজি শুকনো মরিচের দাম পড়ছে ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা। ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ার কারণ হিসেবে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বৃদ্ধি, এলসি খুলতে অনীহাকে দায়ী করছেন। খাতুনগঞ্জের মসলা আমদানিকারক ফারুক আহমদ জানান মসলার আমদানি শুল্ক বেশি। মসলা আমদানি করতে গেলে ৫১ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। তাই দাম বেড়েছে। চট্টগ্রাম মসলা আমদানিকারক সমিতির সভাপতি অমর কান্তি দাস জানান, প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে অধিকাংশ মসলা আনা হয়। সেখানে দাম কমলে আমাদের এখানে কমে। যদি ভারতে দাম বেড়ে যায়, তাহলে খাতুনগঞ্জেও দাম বেড়ে যায়। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, সুযোগ সন্ধানী ব্যবসায়ীরা সবসময় সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। ঈদ ঘনিয়ে আসতেই মসলাসহ প্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। দাম বাড়ানোর পেছনে ব্যবসায়ীদের অজুহাত থাকে। এখন শুল্ক বেশি বা ডলারের দাম বৃদ্ধি ও সরবরাহ ঘাটতির কথা বলছে তারা। প্রশাসনের কঠোরতার অভাব ও নিয়মিত বাজার তদারকি না থাকার কারণেই ভোক্তাকে বাড়তি দামে মসলা কিনতে হচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত