ঢাকা ১১ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ঈদযাত্রায় পথে পথে ভোগান্তি

* ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়, বাসেও বিলম্ব * বাস ও লঞ্চে অতিরিক্ত বাস ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ
ঈদযাত্রায় পথে পথে ভোগান্তি

ঈদযাত্রায় যাত্রীর চাপ বাড়ায় বাস ও ট্রেনের সিডিউল লন্ডভন্ড হয়ে পড়েছে। ঢাকা-উত্তরবঙ্গ, ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ধীরগতিতে চলছে যানবাহন। অন্যদিকে ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে নির্ধারিত সময়ে ছাড়ছে না ট্রেন। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকার যাত্রাবাড়ী ও সায়েদাবাদ এলাকার যানজটের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের যাত্রীরা। ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে বাসের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার থেকে সাইনবোর্ড মোড় পর্যন্ত যানজট ছড়িয়ে পড়েছে। তীব্র যানজটে আটকে আছে ঢাকা মদনপুর বাইপাস সড়কের কাঞ্চন সেতু থেকে ভুলতা ও বস্তল থেকে মদনপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত। একই অবস্থা কমলাপুর রেলস্টেশনে। কম-বেশি ১ মাস আগে থেকেই শিডিউল বিপর্যয় সমস্যায় ভুগছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ঈদে যাত্রীদের চাপ বাড়ায়, ট্রেনের শিডিউল সামলাতে পারছে না। ঈদযাত্রার প্রথম দিনেই রেলের শিডিউল বিপর্যয় বাড়ে। ঢাকা (কমলাপুর) ছেড়ে যাওয়া বেশির ভাগ ট্রেন রওনা হয় নির্ধারিত সময়ের পর। কোনো ট্রেন স্টেশন ছাড়তে দেরি করেছে, কোনোটি পথ চলতে গিয়ে বিলম্ব করেছে। শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে রেলপথে যাতায়াত করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছে ঘরমুখী মানুষ। বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ঈদে বাড়তি যাত্রীর চাপ সামাল দেয়ার জন্য এবার আগে থেকেই বিভিন্ন ট্রেনের জন্য ইঞ্জিন প্রস্তুত করে রাখা হয়েছিল। তবে ঈদযাত্রায় সকালে বিপত্তি বাধায় ঢাকা-সিলেটের মধ্যে চলাচল করা পারাবত এক্সপ্রেস। ট্রেনটি কমলাপুর থেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে। কিন্তু পয়েন্ট কানেকশন ও শান্টিংয়ের ভুলের কারণে পারাবত এক্সপ্রেসওয়ে প্রায় ২ ঘণ্টা বিলম্বে কমলাপুর থেকে সিলেটের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। এর প্রভাব পড়ে দিনের অন্য ট্রেনগুলোয়ও।

ঢাকা-রংপুরের মধ্যে চলাচল করা আন্তঃনগর ট্রেন রংপুর এক্সপ্রেস কমলাপুর স্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়ার নির্ধারিত সময় সকাল ৯টা ১০ মিনিট। তবে ট্রেনটি কমলাপুর থেকে ছাড়তে বিলম্ব করেছে। একই সময়ে ঢাকা থেকে পঞ্চগড় অভিমুখে ছেড়ে যাওয়া আন্তঃনগর একতা এক্সপ্রেস। ঢাকা থেকে সিলেটের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনটি বিলম্বে ছাড়া হয়। ঢাকা টু চিলাহাটিগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেন, ঢাকা টু চট্টগ্রামগামী কর্ণফুলী মেইল, ঢাকা টু রাজশাহী রুটের সিল্কসিটি এক্সপ্রেস বিলম্ব করে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ছেড়ে যায়।

অন্য ট্রেনগুলোর মধ্যে ঢাকা-নোয়াখালীর মধ্যে চলাচল করা উপকূল এক্সপ্রেস ৫০ মিনিট, ঢাকা-তারাকান্দির মধ্যে চলাচল করা অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস ১ ঘণ্টা, ঢাকা-কিশোরগঞ্জের মধ্যে চলাচল করা কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ১ ঘণ্টা ৫ মিনিট, ঢাকা-মোহনগঞ্জের মধ্যে চলাচল করা মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ১ ঘণ্টা ২৫ মিনিট, ঢাকা-জামালপুরের মধ্যে চলাচল করা জামালপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি ২ ঘণ্টা ৫ মিনিট বিলম্বে চলাচল করেছে।

ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় সম্পর্কে বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ঈদুল আজহার জন্য আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল রেলওয়ে। কোনো ট্রেন যেন বিলম্বে ছেড়ে না যায়, সেজন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো সতর্ক ছিল। কিন্তু ঢাকা স্টেশনে একটি ট্রেনের শান্টিংয়ের সামান্য ভুলের কারণে কয়েকটি ট্রেন নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বিলম্বে ছেড়েছে।’

ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ের পাশাপাশি বাসেও দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মীর মো. সাজেদুর রহমান জানান, অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব প্রান্তের সংযোগ সড়কে চার লেনের কাজ চলছে। রাতে ট্রাকে করে ঢালাইয়ের সামগ্রী সড়কে নামানো হচ্ছে। এটাও যানজটের অন্যতম কারণ।

ঢাকার মাতুয়াইলের বাসিন্দা রাবেয়া খাতুন জানান, সকাল সাড়ে সাতটায় সাইনবোর্ড এসেছি।

সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে বাসটি আসার কথা ছিল। তবে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বাসটির দেখা মেলেনি। ছোট সন্তানকে নিয়ে এমন ভোগান্তি এড়াতে টিকিট ফেরত দিতে চেয়েছিলেন রাবেয়া। তিনি বলেন, টিকিট ফেরত দিয়ে আগামীকালের চেয়েছি। কিন্তু কাউন্টার থেকে বলছে, ঈদের আগের কোনো টিকিট পাওয়া যাবে না। বাধ্য হয়ে তাই বসে আছি।

জানতে চাইলে স্টার লাইন পরিবহনের টিকিট বিক্রেতা আবদুল আজিজ বলেন, রাজধানীর টিটিপাড়া থেকে সায়েদাবাদ পর্যন্ত তীব্র যানজট। গাড়িও কম। ফলে গাড়ি আসতে দেরি হচ্ছে। পরিবার নিয়ে ঈদ করতে কিশোরগঞ্জে যাবেন নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী মো. মাসুম। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বাসগুলোতে ২০০ টাকা বেশি ভাড়া নেয়া হচ্ছে বলে তার অভিযোগ। মাসুম বলেন, ৩০০ টাকার ভাড়া ৫০০ নিতেছে। রাস্তায় বাসও নাই। বাড়তি ভাড়া নিয়ে পুলিশের কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।

ঈদযাত্রায় বরাবরের মতো এবারও বাড়তি ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। কিন্তু বাস্তবতা আগের মতোই, অতিরিক্ত হারেই চলছে ভাড়া আদায়। বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে নজরদারি হচ্ছে। নির্দেশ অমান্য করে মহাসড়কের পাশে হাট বসালে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শিমরাইল হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক শরফুদ্দিন আহমেদ বলেন, যাত্রীরা যেন ভোগান্তি ছাড়াই গ্রামে যেতে পারেন, এ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি আছে। ঈদ যাত্রায় আজ মানুষের চাপ বেশি থাকায় গাড়ির চাপও বেড়েছে কয়েক গুণ। ফলে কিছু জায়গায় ভোগান্তি হচ্ছে; তবে পুলিশ দ্রুতই এসব এলাকায় যান চলাচল স্বাভাবিক করতে কাজ করবে। মহাসড়কটি ছয় লেনে উন্নীত করার পর বেশ কিছু ইউটার্ন ও ইউলুপ তৈরি করা হয়েছে। দূরপাল্লার যানবাহনের জন্য চারটি দ্রুতগতির লেন রয়েছে। ফলে মহাসড়কটিতে যানজট হচ্ছে না। তবে সড়কের প্রশস্ততা অনুযায়ী বাড়তি যানবাহন ও সড়কটিতে উন্নয়ন কাজের কারণে সিলেটের পথে যানবাহনের কিছুটা ধীরগতি আছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত