ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সাত নদীর পানি বিপৎসীমার উপরে

উত্তরাঞ্চলে বন্যার আভাস

উত্তরাঞ্চলে বন্যার আভাস

ভারী বৃষ্টিতে দেশের সাতটি নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ বিপৎসীমার ৮০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে সুরমা নদীর পানি। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী দুই দিন ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীর পানি বাড়ছে, যা আগামী ৭২ ঘণ্টায় অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পেয়ে কয়েকটি পয়েন্টে বিপৎসীমায় পৌঁছাতে পারে।

জানা যায়, সুরমা ছাড়া দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এদিকে গঙ্গা-পদ্মা নদীগুলোর পানি বাড়ছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।

তথ্য অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পার্শ্ববর্তী উজানে মাঝারি থেকে ভারী এবং আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল ও উজানে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নেত্রকোনা জেলার কয়েকটি নিম্নাঞ্চলে ও সিলেট, সুনামগঞ্জ জেলায় চলমান বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। এছাড়া আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চলের দুধকুমার, তিস্তা ও ধরলা নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে এবং কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর জেলার কয়েকটি নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে পানি স্বল্পমেয়াদে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। বিপৎসীমার উপরে থাকা নদীগুলোর মধ্যে আছে- তিস্তা, সুরমা, কুশিয়ারা, মনু, খোয়াই, পুরোনো সুরমা এবং সোমেশ্বরী।

উজানের বৃষ্টির বিষয়ে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে কোচবিহারে ১৩৬ মিলিমিটার। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ থেকে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরের অন্য দিকে মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় রয়েছে।

গতকাল সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে- রংপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রাজশাহী, ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে। আগামীকালের পূর্বাভাসেও দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে পঞ্চগড়ে ১৫৩ মিলিমিটার। এর বাইরে সিলেট ও হবিগঞ্জে ১১০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।

এদিকে ভারতে সিকিমে পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই পানি বাংলাদেশের দিকে প্রবেশ করায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি নিয়ন্ত্রণে ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে নদী পাড়ে বাসিন্দারা। গতকাল বিকাল ৩টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫১ দশমিক ৯১ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ২৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার)। তিস্তায় পানি বেড়ে যাওয়ায় লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলার ৩ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিস্তার পানি বৃদ্ধিতে আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, কালমাটি, রাজপুর ইউনিয়ন কিছু এলাকা, গোকুণ্ডা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী চরে বাদামের খেত, বিছন ধান, মিষ্টি কুমড়াসহ বিভিন্ন ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ এলাকার তিস্তা পারের বাসিন্দা সোহেল রানা বলেন, তিস্তার পানি বাড়েছে। পানি বাড়ায় তিস্তার চরে থাকা ফসল পানিতে ডুবে গেছে। এরই মধ্যে কিছু ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে। আদিতমারি উপজেলার মহিষখোচা গ্রামের বাসিন্দা আকলিমা খাতুন বলেন, বাড়িতে পানি উঠেছে, চুলা ডুবে গেছে। রান্না করতে পারিনি। এ বিষয়ে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রাশেদীন ইসলাম বলেন, ভারতের সিকিমে প্রচুর পরিমাণ বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এদিকে গত চারদিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার কলমাকান্দায় নদ-নদীর পানি বাড়ছে। এতে বিভিন্ন কলমাকান্দা উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে বেশ কিছু গ্রামীণ সড়ক। পানি ঘরবাড়িতেও প্রবেশ করছে। ফলে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে এসব এলাকার মানুষের।

এদিকে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত