ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

টার্গেট ভোগান্তি নিরসন

দেশে ফিরছেন হাজীরা

* প্রথম ফ্লাইটে ৪১৭ হজযাত্রী * হজে গিয়ে মারা গেছেন ৩১ বাংলাদেশি * ফ্লাইট বিলম্বে বিমানের গাফিলতি নেই
দেশে ফিরছেন হাজীরা

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের মুসল্লিরা পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা শেষে দেশে ফিরতে শুরু করেছেন। হাজীদের ভোগান্তি দূরীকরণে বাড়তি নজর রাখছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। হাজীদের ফিরতি ফ্লাইটে সার্বিক সহযোগিতার পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবাসহ বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও হজ এজেন্সিগুলো।

জানা গেছে, এ বছর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ১০৭টি ফ্লাইটে ৪০ হাজার ৯৬৭ জন হজযাত্রী পরিবহন করে। পোস্ট হজে বিমান ১২৫টি ফ্লাইটের মাধ্যমে উক্ত যাত্রীদের বাংলাদেশে পরিবহন করবে। মদিনা থেকে ৩৪টি ফ্লাইট পরিচালিত হবে। এর মধ্যে মদিনা-চট্টগ্রামে ৯টি ফ্লাইট, মদিনা-সিলেট ৫টি ফ্লাইট পরিচালিত হবে। আর জেদ্দা থেকে মোট ৯১টি ফ্লাইট পরিচালিত হবে। এর মধ্যে জেদ্দা-চট্টগ্রাম-ঢাকা ১২টি ফ্লাইট, জেদ্দা-সিলেট-ঢাকা ৫টি ফ্লাইট পরিচালিত হবে। এর মধ্যে প্রথম ফ্লাইটে ৪১৭ হাজযাত্রী ঢাকা বিমানবন্দরে পৌঁছায়।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হজযাত্রীদের সেবার নামে যেসব ট্রাভেল এজেন্সির বিরুদ্ধে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ উঠেছে, সেসব এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে এবং ব্যবস্থা নেবে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এখন হাজীদের ফিরতি ফ্লাইটে যেন কোনো ধরনের ভোগান্তি না হয়, সেজন্যও বাড়তি নজর রেখেছে মন্ত্রণালয়। কারণ হজ করতে যারা গিয়েছেন, তাদের বেশিরভাগ বৃদ্ধ ও নারী। হজে তাদের প্রচুর শারীরিক পরিশ্রম হয়ে থাকে। হাজীদের প্রতিদিন ৫ থেকে ১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত হাঁটতে হয়। এরমধ্যে দেশে ফেরার পথে প্রত্যেক বছর বিমানের ফ্লাইট দেরি করে আসে, ধীরে ধীরে সমস্যার সমাধানও হয়ে যায়। তবে এবার ফ্লাইট নির্ধারিত সময়ে ঢাকায় পৌঁছানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, হাজীরা সময়মতো বিমানবন্দরে আসতে না পারায় ফ্লাইট ছাড়া যায় না। হাজীরা হজ শেষে সময়মতো বিমানবন্দরে আসেন না। তাদের যারা বিমানবন্দরে নিয়ে আসবেন, তাদের অনেক সময়ই পাওয়া যায় না। এসব বিবেচনা করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে দেরিতে বাংলাদেশের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করতে হয়। এখানে বিমানের কোনো গাফিলতি বা সমস্যা নেই।

গতকাল শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দেখা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টায় সৌদির কিং আবদুল আজিজ বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশি হাজীদের নিয়ে ফ্লাইট ছাড়া হয়েছিল। যা ভোর ৬টার দিকে ৪১৭ জন হাজীকে নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রথম ফ্লাইট (বিজি ৩৩২) অবতরণ করে বিমানবন্দরে। দীর্ঘ অপেক্ষা ও ভ্রমণ শেষে হাজীদের মধ্যে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

বিমানের জনসংযোগ শাখার মহাব্যবস্থাপক বোসরা ইসলাম বলেন, ঢাকার বিমানবন্দরে নামার পর ধর্ম মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং সিভিল অ্যাভিয়েশন ও বিমানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হাজীদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। দেশে নামার পর প্রত্যেক হাজীর হাতে জমজমের পানির বোতলও তুলে দেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হজযাত্রীদের সেবার নামে যেসব ট্রাভেল এজেন্সি অনিয়ম করেছে, তাদের নিবন্ধন বাতিল করা হবে।

এর আগে গত ১৬ জুন চিঠি দিয়ে সতর্ক করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের কারণে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া হজযাত্রীরা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। এ কারণে সৌদির হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ও বেশ ক্ষুব্ধ। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, দুটি এয়ারলাইন্সের দায়িত্ব পালনে সতর্ক না হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবুল কাশেম মুহাম্মদ শাহীন স্বাক্ষরিত চিঠিতে আরো বলা হয়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের শিডিউল ফ্লাইটে প্রায় প্রতিদিনই মদিনাগামী হজযাত্রীদের জেদ্দায় নিয়ে যায়। সেখান থেকে ৪৫০ কিলোমিটার দূরের মদিনায় তাদের নিয়ে যায় সড়কপথে। দীর্ঘ বিমান ভ্রমণের পর আবার এত দূরের পথ সড়কে পাড়ি দিতে গিয়ে অবর্ণনীয় ভোগান্তিতে পড়েন হজযাত্রীরা। কারণ হজযাত্রীদের বেশিরভাগই বৃদ্ধ ও নারী। হজযাত্রীদের এমন ভোগান্তির কারণে ক্ষুব্ধ সৌদির হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় জেদ্দায় অবস্থিত বাংলাদেশ হজ অফিসের কাউন্সেলর (হজ) মো. জহিরুল ইসলামকে ডেকে পাঠান।

এ বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মতিউল ইসলাম বলেন, ‘এয়ারলাইন্সের কারণে হজযাত্রীরা যাতে আর দুর্ভোগে না পড়েন, এ বিষয়ে আমরা দুটি এয়ারলাইন্সকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করেছি। এরপরও যদি এমন ঘটনা ঘটে তাহলে তাদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এর আগে গত ৮ জুন ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান দুলাল বলেছিলেন, চলতি বছর যেসব এজেন্সি হজযাত্রীদের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে বা ভোগান্তিতে ফেলেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এবার হজ পালন করতে গিয়ে ৩১ জন বাংলাদেশি হজযাত্রী মারা গিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরুর আগে ১৭ জন এবং বাকি ১৪ জন হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরুর পর। হজযাত্রীদের মৃত্যুর বিষয়ে হজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) বলছে, সৌদিতে হজ পালন করতে গিয়ে ৩১ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে ২৭ জনের তথ্য সৌদি সরকার অফিসিয়ালি ঘোষণা করেছে। বাকি চারজন নিখোঁজ। এই চারজনের খোঁজ মিলছে না বলে তাদের সঙ্গে থাকা মুয়াল্লিম এবং পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন হাবের সভাপতি শাহাদাত হোসেন তসলিম। তিনি জানান, নিখোঁজ তিনজন মারা গেছেন বলে তাদের সংশ্লিষ্ট এজেন্সি আমাকে নিশ্চিত করেছে।

এদিকে হজ সম্পর্কিত সবশেষ বুলেটিনে জানানো হয়েছে, মারা যাওয়া (অফিসিয়ালি ঘোষিত ২৭ জন) হজযাত্রীদের মধ্যে ২২ জন পুরুষ ও পাঁচজন নারী। তাদের মধ্যে মক্কায় ২০ জন, মদিনায় চারজন, মিনায় দুইজন এবং জেদ্দায় একজন মারা গেছেন। অন্যদিকে হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরুর পর যে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে ১০ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত