ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

৭৫ পেরিয়েও তারুণ্যে টগবগে আওয়ামী লীগ

৭৫ পেরিয়েও তারুণ্যে টগবগে আওয়ামী লীগ

আজ ঐতিহাসিক ২৩ জুন। উপহমাদেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী (প্লাটিনাম জয়ন্তী)। স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী দলটি এবার ৭৫ পেরিয়ে ৭৬-এ পা রাখছে। ১৯৪৯ সালের এই দিনে পুরান ঢাকার রোজগার্ডেনে প্রতিষ্ঠা লাভ করে দলটি। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মাটি ও মানুষের দল। জনগণই আওয়ামী লীগের মূলশক্তি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ ভূখণ্ডে প্রতিটি প্রাপ্তি ও অর্জন সবই জাতির পিতা ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই হয়েছে। মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষা থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত বাঙালির অর্জন এবং বাংলাদেশের সব উন্নয়নের মূলেই রয়েছে আওয়ামী লীগ।’

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বাঙালির আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে আওয়ামী লীগ নাম। দলটির অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধের চর্চা বাঙালির প্রাণস্পন্দনে পরিণত করেছে। বাঙালির সুদীর্ঘ ইতিহাসের পরতে পরতে রয়েছে এ দলটি। জাতির পিতা বঙ্গবুন্ধ শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বাঙালিকে এনে দিয়েছে স্বাধীনতা। স্বাধীনতা-পরবর্তী দেশের গণতন্ত্র-উন্নয়ন ও বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল করেছে এ দল। টানা চতুর্থ মেয়াদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। এর আগে ১৯৯৬ সালেও ক্ষমতায় এসেছিল। বঙ্গবুন্ধর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বল্প উন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা এনেছে আওয়ামী লীগ সরকার।

বাংলা ও বাঙালির জন্য অনেক ত্যাগ রয়েছে এ দলের। বিভিন্ন সময় ষড়যন্ত্র, হত্যা, খুন ও গুমের স্বীকার হয়েছে দলটির নেতাকর্মীরা। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর নানা চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে টিকে থাকতে হয়েছে দলটিকে। ১৯৮১ সালের ১৭ মে নির্বাসন থেকে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।

আন্দোলন-সংগ্রামের পাশাপশি দুর্যোগ-দুর্বিপাকেও মানুষের সেবা দিয়েছে এ দল। যা আজও চলমান। বৈশ্বিক মহামারিকালে দেশের মানুষকে চতুরমুখী সেবা দিয়েছে দলটির নেতাকর্মীরা। ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে খাদ্য বিতরণ, মৃতদেহ কাফন-দাফন, অ্যাম্বুলেন্স সেবা, কৃষিকাজে সহায়তা ইত্যাদি। আওয়ামী লীগ সরকার দেশের ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় জমিসহ ঘর উপহার দিচ্ছে। যা ইতিহাসে বিরল। সময়ের পরিক্রমায় আওয়ামী লীগ আজ মহিরুহে পরিণত হয়েছে। তৃণমূলে দলটির শক্ত অবস্থান রয়েছে।

প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল হলেও সময়োপযোগী কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়নের মধ্যদিয়ে তারুণ্য ধরে রেখেছে দলটি। জন্মলগ্ন থেকেই তারুণ্যকে প্রাধ্যান্য দিয়ে এগিয়েছে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানুষের চাহিদা অনুযায়ী রাজনৈতিক কর্মসূচি হাতে নিচ্ছে এবং তা বাস্তবায়ন করছে। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল হলেও আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের সবচেয়ে আধুুনিক সংগঠন। ডায়নামিক ও ক্যারিশমেটিক লিডারশিপের কারণে আওয়ামী লীগ তার তারুণ্য ধরে রাখতে পেরেছে। পাশাপাশি মানুষের চাহিদা অনুযায়ী সর্বদা বাস্তবিক কর্মসূচি গ্রহণ করে এগিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের এ তারুণ্য প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে প্রবাহিত হবে। দলের অর্জন-সফলতা তারুণ্যকে চিরন্তন করে রাখবে।

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবির) গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মশিয়ার রহমান (মশিউর) আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, জন্মলগ্ন থেকেই তারুণ্য চিন্তানির্ভর আওয়ামী লীগ। ইতিহাস ও ঐতিহ্যে গড়ে ওঠা এ দল দেশ ও জাতির কল্যাণে নিবেদিত। বাঙালির সব প্রত্যাশাই পূরণ করেছে দলটি। ভাষা, স্বাধীনতা, উন্নয়ন সব এসেছে আওয়ামী লীগের হাত ধরে। আদর্শ আর সাংগঠনিক দক্ষতা দিয়েই আওয়ামী লীগ টিকে আছে এবং ভবিষ্যতেও টিকে থাকবে। বাঙালির অস্তিত্বের সংগ্রাম আর সব অর্জনে বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একে অপরের পরিপূরক। সততা ও আদর্শের পাল তুলে যুগান্তকারী চালিকা শক্তি, কর্মদক্ষতা, বিশ্বাস আর ভালোবাসা দিয়ে মানুষের আস্থা অর্জন করে চলেছে। তাই ৭৫ বছরেও আওয়ামী লীগ চির সবুজ।

আওয়ামী লীগের জন্ম ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ১৯৪৭ সালে সম্পূর্ণ পৃথক দুটি ভূখণ্ড, স্বতন্ত্র ভাষা ও সংস্কৃতির অঞ্চল নিয়ে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মাত্র ৪ মাস ২০ দিনের মধ্যে তখনকার তরুণ যুবনেতা শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি গঠন করেন সরকারবিরোধী ছাত্র সংগঠন পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ। এরই ধারাবাহিকতায় পরের বছর ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার কেএম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর উদ্যোগে আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে গঠন করা হয় পূর্বপাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সভাপতি, টাঙ্গাইলের শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক, শেখ মুজিবুর রহমানকে (কারাবন্দি ছিলেন) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করে গঠিত হয় আওয়ামী (মুসলিম) লীগের প্রথম কমিটি। ১৯৫৫ সালে এই দল ধর্মনিরপেক্ষতাকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে। দলের নামকরণ হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ।’ মুক্তিযুদ্ধের পরে পাকিস্তান শব্দটি বাদ গিয়ে দলটি ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ নামে কার্যক্রম শুরু করে। এদিকে সংগ্রাম ও সাফল্যের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে বর্ণাঢ্য আয়োজনে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের শতবছর হতে ২৫ বছর বাকি। ইতিহাসসমৃদ্ধ আওয়ামী লীগ। গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত