প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শেখ হাসিনা

আওয়ামী লীগের হাত ধরেই বাঙালির প্রতিটি অর্জন

প্রকাশ : ২৪ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

বাঙালির প্রতিটি অর্জনে আওয়ামী লীগ ওতপ্রোতভাবে জড়িত বলে জানিয়েছেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের সব অর্জন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে হয়েছে। আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেই তো বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য। যা আমরা প্রমাণ করেছি। গতকাল রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭৫-এর আগস্টের পর বার বার ক্ষমতা বদল হয়েছে। কিন্তু ক্ষমতা বদল হয়েছে অস্ত্রের মাধ্যমে; না হয় ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ছিল না, মানুষের মৌলিক অধিকার ছিল না। মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তনই তারা করতে পারেনি। আওয়ামী লীগের ওপর বারবার আঘাত এসেছে। খণ্ড-বিখণ্ড করা হয়েছে। বারবার এ দলকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা হয়েছিল। সেই আইয়ুব খানের মার্শাল ল থেকে শুরু তবুও এ সংগঠনের কেউ ক্ষতি করতে পারেনি। ফিনিক্স পাখির মতো যমন পুড়িয়ে ফেলার পরও ভস্ম থেকে জেগে ওঠে, আওয়ামী লীগও সেভাবেই জেগে উঠেছে। আওয়ামী লীগ গণমানুষের সংগঠন, জনগণের অধিকার আদায়ের সংগঠন, জনগণের আর্থসামাজিক উন্নতি করার সংগঠন। কাজেই বারবার আঘাত এলেও এ সংগঠনের কেউ ক্ষতি করতে পারেনি।

শেখ হাসিনা বলেন, খুব বেশি দিনের কথা নয়, ২০০৭ সালে চেষ্টা করা হয়েছিল আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে কিংস পার্টি গড়ে তুলবে, সেটাও সফল হয়নি। কারণ আওয়ামী লীগের মূল শক্তি হচ্ছে দেশের জনগণ, তৃণমূলের মানুষ, আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মী, মুজিব আদর্শের সৈনিক। এ সৈনিকরা কখনও পরাজয় মানে না; মাথা নত করে না।

দলের সাবেক নেতাদের ভুলের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হয়তো কখনও কখনও কোনো নেতা ভুল করেছেন, কেউ মনে করেছেন আওয়ামী লীগে থাকলে তারাই বড় নেতা, দলের চেয়েও নিজেকে বড় মনে করে দল ছেড়েছেন, দল ছেড়ে অন্য দল করেছেন। কেউ দল ছেড়ে চলে গেছেন। কিন্তু ভুল করেছেন। কেন? আপনারা দেখেন আকাশে মিটিমিটি তারা জ্বলে। তারা আলোকিত হয় সূর্যের দ্বারা। যেসব নেতা ভুল করেছিলেন, তারা ভুলে গিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ছিলেন বলেই আলোকিত ছিলেন। এখান থেকে চলে যাওয়ার পর তারা আর জ্বলেনি, আস্তে আস্তে মিইয়ে গেছে। কেউ ভুল বুঝে হয়তো ফেরত এসেছে, আমরাও নিয়েছি। আবার কেউ এখনও বিভিন্নভাবে আওয়ামী লীগের সরকার পতন, ধ্বংসসহ নানা জল্পনা-কল্পনা করে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ জনগণের শক্তিকে বিশ্বাস করে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ১৯৯৬ সালে সরকারে এসে আমরা অনেক দূর এগিয়েছিলাম। কাজ করেছি। বাংলাদেশের মানুষ প্রথম উপলব্ধি করেছিল একটি দলের কাজ হলো জনগণের সেবা করা।

আওয়ামী লীগকে আরো সুসংগঠিত ও শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে গড়ে তুলতে নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়ে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আমার একটাই আবেদন থাকবে আমাদের সংগঠনের প্রতিটি নেতাকর্মীর কাছে, সংগঠনকে সুসংগঠিত করতে হবে। যে কোনো একজন রাজনীতিবিদের জীবনে সংগঠনটি হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী।

প্রত্যেক নেতাকর্মীকে উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘প্রত্যেক নেতাকর্মীকে এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বলব, আপনারা একবার চিন্তা করে দেখেন, এই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কত কষ্ট করেছে। বারবার আঘাত এসেছে। পরিবারগুলো কষ্ট করেছে। কিন্তু সংগঠন ধরে রেখেছে। কাজেই যেমন সংগঠন করতে হবে, সেভাবে জনগণের আস্থা-বিশ্বাস, যেটা আমাদের মূল শক্তি, সেই আস্থা-বিশ্বাসটা অর্জন করতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, (জনগণের) সেই আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছি বলেই বারবার জনগণ আমাদের ভোট দিয়েছে। বারবার ক্ষমতায় এসে দীর্ঘ সময় বাংলাদেশের ইতিহাসে ২০০৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে। আর গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই আজ আর্থ-সামাজিকভাবে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশের উন্নতি হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ আজ বিশ্বদরবারে রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বিশ্বে আজ মাথা উঁচু করে চলার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কাজেই এটাকে (আস্থা-বিশ্বাস) ধরে রেখেই আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০৪১, ২১০০ অনেক বয়স হয়েছে, তত দিন হয়তো বেঁচে থাকব না। কিন্তু আজ যারা নবীন, তারা আমার স্মার্ট বাংলাদেশের মূল সৈনিক হবে। আমরা স্মার্ট জনগোষ্ঠী গড়ে তুলব; স্মার্ট সরকার, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সোসাইটি গড়ে তুলে এই বাংলাদেশ বিশ্বে মাথা উঁচু করে এগিয়ে যাবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্লাটিনাম জুবিলিতে এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা।

মৃত্যুকে পরোয়া করেন না জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, হ্যাঁ, মৃত্যু যে কোনো সময় সবার হতে পারে। যে কোনো সময় মৃত্যু আসতে পারে। তার জন্য আমি কোনো দিন ভীত নই। কখনও ভয় পাইনি, পাবোও না। কিন্তু যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণ আশ। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে আমার বাবার যে চিন্তা-চেতনা, তা বাস্তবায়ন করে এ দেশের মানুষকে একটা উন্নত জীবন দেব- এটাই আমাদের লক্ষ্য। আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগের এই প্লাটিনাম জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, ১৪ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরাসহ দেশি-বিদেশি আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ সময় জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। পরে শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদের পায়রা ও বেলুন অবমুক্ত করেন। ৩টা ৪২ মিনিটে আলোচনা সভার মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়। সাংস্কৃতিক পর্ব পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিকবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল। শুরুতে পরিবেশন করা হয় আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর থিম সং। পরে বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি তুলে ধরে নাচ ও গান পরিবেশন করা হয়। সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় বদলে যাওয়া বাংলাদেশের গল্প তুলে ধরা হয়।

এদিকে দুপুর ১২টার পর থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসতে শুরু করেন আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বেলা ৩টা পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী জড়ো হন। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ব্যানার-ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড নিয়ে ঢাকঢোলের তালে নেচে-গেয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসেন অনেক নেতাকর্মী। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশপাশের এলাকায় উৎসবের আমেজ তৈরি হয়।

বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা : আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সকাল ৭টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তিনি বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। পরে দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে নিয়ে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা তার দলের পক্ষ থেকে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে আরেকটি পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

ফল-মিষ্টি উপহার : দলটির ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদ পরিবারের সদস্যদের জন্য উপহার হিসেবে ফলমূল এবং মিষ্টান্ন দেওয়া হয়। গতকাল বিকালে প্রধানমন্ত্রীর প্রোটোকল অফিসার-২ মো. আবু জাফর রাজু এবং সহকারী প্রেসসচিব এবিএম সরওয়ার-ই-আলম রাজধানীর মোহাম্মদপুর গজনবী রোডস্থ যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন কেন্দ্র (মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ার-১) এ যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে উপহারসামগ্রী হস্তান্তর করেন। দলটির ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজনের শিরোনাম দেওয়া হয়েছে- ‘গৌরবময় পথ চলার ৭৫ বছরে আওয়ামী লীগ, সংগ্রাম, সংকল্প, সততা, শপথে জনগণের সাথে’।