অসচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

সরকার শিক্ষাব্যবস্থাকে বহুমাত্রিক করেছে

প্রকাশ : ২৫ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পরিবর্তনশীল বিশ্বে বৈশ্বিক মান বজায় রাখতে সরকার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে অগ্রাধিকার দিয়ে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে বহুমাত্রিক ও সৃজনশীল করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা বহুমুখী শিক্ষাব্যবস্থার প্রচলন করেছি, যাতে দেশে ও বিদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়। গতকাল ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের (পিএমইএটি) মাধ্যমিক থেকে স্নাতক (পাস) এবং এর সমমানের অস্বচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপবৃত্তি ও টিউশন ফি বিতরণের উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত সারাদেশে ২৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও ৫৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। বৈশ্বিক চাহিদা অনুধাবন করে তার সরকার কৃষি, পশুচিকিৎসা, প্রাণিবিজ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, চিকিৎসা, ডিজিটাল ইসলামিক, আরবি, টেক্সটাইল, সামুদ্রিক, বিমান চলাচল, মহাকাশ এবং ফ্যাশন ও প্রযুক্তি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে বহুমাত্রিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও গবেষণাভিত্তিক শিক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। বিজ্ঞান, গবেষণা ও প্রযুক্তির জ্ঞান ছাড়া কোনো দেশই পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে না। তাই, আমরা বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার লক্ষ্যে ব্যবস্থা নিয়েছি। ১৯৭৫ সালের পর আওয়ামী লীগ সরকার প্রথম বাজেটে গবেষণার জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয়। আওয়ামী লীগ সরকার গবেষণা বৃদ্ধি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার প্রসারের জন্য বাজেটে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে।

তিনি বলেন, তারা মেধাবী অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের তাদের মেধাকে দেশ ও মানব কল্যাণের কাজে লাগাতে তাদের প্রতিভা বিকাশে সহায়তা করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট (পিএমইএটি) গঠন করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘দারিদ্র্য কোনো শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবনকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে না’ উক্তির স্মরণ করেন।

মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক ও সমমানের ৬৪ লাখ ৭০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর মধ্যে মোট ২ হাজার ২০৮ কোটি টাকা বিতরণ করা হবে। অর্থ বিতরণের উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী বলেন, উপবৃত্তি ও টিউশন ফি’র টাকা ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমে সরাসরি সুবিধাভোগীদের কাছে যাবে।

তিনি বলেন, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপবৃত্তি ও টিউশন ফি-র অর্থ বিতরণ করতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। শেখ হাসিনা ১৫ জন শিক্ষার্থীকে বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল প্রতিভা অনুসন্ধান পুরস্কার-২০২৪ (ক্রিয়েটিভ ট্যালেন্ট সার্চ অ্যাওয়ার্ড-২০২৪) এবং ২১ শিক্ষার্থীকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্কলার পুরস্কার-২০২৩ প্রদান করেন।

বঙ্গবন্ধু ক্রিয়েটিভ ট্যালেন্ট সার্চ পুরস্কারপ্রাপ্ত ১৫ জন শিক্ষার্থীকে সনদপত্র ও ২ লাখ টাকা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্কলার পুরস্কারপ্রাপ্ত ২১ জন শিক্ষার্থীকে সনদপত্র ও ৩ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বেগম শামসুন নাহার ও শিক্ষা সচিব সুলেমান খান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

হাজারীবাগ গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী নুসরাত জাহান মালিহা, দিনাজপুরের আমেনা-বাকী রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্রী আতিফা রহমান ও খুলনার সরকারি মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র পিনাক মুগ্ধ দাস ‘বঙ্গবন্ধু ক্রিয়েটিভ ট্যালেন্ট সার্চণ্ড২০২৪’(বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল প্রতিভা অনুসন্ধান-২০২৪)-এর পক্ষ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢা.বি) দুই শিক্ষার্থী জারিন তাসনিম রাইসা ও আল ফয়সাল বিন কাশেম কানন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্কলার অ্যাওয়ার্ড-২০২৩-এর পুরস্কার গ্রহন করেন। অনুষ্ঠানে তারা তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের প্রিয় শিক্ষার্থীদের বলব, আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পরই পাঠ্যপুস্তক, শিক্ষাক্রম সব কিছুতে পরিবর্তন এনেছি। আমরা পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সৃজনশীল শিক্ষার ব্যবস্থা, মেধা অন্বেষণ, মেধার মাধ্যমে শিক্ষাকে আরো আপন করে নেয়া, আনন্দমুখর পরিবেশে শিক্ষা গ্রহণ- সেই পদ্ধতিটাতে আমরা নিয়ে আসতে চাই।’

তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘এখন যদি সারাক্ষণ কেউ বলে পড়, পড়, পড়- এটা কি ভালো লাগে বলো? মোটেই ভালো লাগে না। এটা কিন্তু বাস্তব কথা, যাও বা একটা পড়ার ইচ্ছে থাকে, তাও নষ্ট হয়ে যায়। সেই জন্য এমনভাবে শিক্ষাব্যবস্থাটা করা, যাতে আগ্রহ নিয়েই ছেলেমেয়েরা পড়বে। পড়, পড়- করতে হবে না বা ধরে পেটাতে হবে না। নিজেরাই পড়বে, নিজেদের মধ্যেই সেই আকাঙ্ক্ষাটা থাকবে। আমরা সেই সিস্টেমটাই তৈরি করতে চাই।’

তিনি বলেন, ‘জানি, একটা পরিবর্তন এলে অনেকেই নানা ধরনের কথা বলে। তাছাড়া, ডিজিটাল বাংলাদেশ, সোশ্যাল মিডিয়ায় যার যা মনে আছে- সমালোচনা করতে পারলেই খুশি। আমরা বাঙালিরা আবার পরচর্চায় খুব পছন্দ করি। পরচর্চা ছাড়া তো আসরই জমে না। যে যা মনে করে লিখে দেয়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিজের মনে আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। নিজের ওপর বিশ্বাস থাকতে হবে। কেউ একটু সমালোচনা করলেই ওমনিই সেটার জন্য ভীত হয়ে যেতে হবে, আমি এটা বিশ্বাস করি না। আত্মমর্যাদাবোধ, আত্মবিশ্বাসই মানুষকে শক্তি দেয়। আমি আমাদের শিক্ষার্থীদের এটাই বলব, সব সময় এই চিন্তাটাই করতে হবে- কে কী বলল, সেটা শুনে ওমনিই চোখের পানি ফেলানো, মুখ লুকানো, তা নয়। নিজের বিশ্বাস থেকে চলা শিখতে হবে। তাহলে এই দেশকে তোমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।’

তিনি বলেন, ‘জনগণের সেবা করা, জনগণের পাশে দাঁড়ানো, জনগণের জন্য কল্যাণ করা- এটাই হবে মানুষের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। খালি আমি নিজে শিক্ষিত হব, নিজে অর্থ কামাই করব, নিজেই ভালো থাকব, আমি দেশকে কিছু দেব না। আশপাশের মানুষ দরিদ্র থাকবে, এটা হয় না। সকলে মিলেই আমাদের চলতে হবে, সকলে মিলে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। সেই নির্দেশনাটা জাতির পিতা দিয়ে গেছেন, আমরা সেটাই অনুসরণ করি। আমি বিশ্বাস করি, সকল বাধা অতিক্রম করে বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা আমাদের তরুণ সমাজই এগিয়ে নিয়ে যাবে।’