দেশে মৃত্যুর ১৭.৪৫ শতাংশ হার্ট অ্যাটাক ও হৃদরোগে

প্রকাশ : ২৫ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

বিশ্বে প্রতি ২ মিনিটে একজন কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে মারা যাচ্ছেন। বিশ্বব্যাপী কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যানুযায়ী, ২০২২ সালে দেশে মোট মৃত্যুর ১৭.৪৫ শতাংশ ঘটেছে হার্ট অ্যাটাক ও হৃদরোগে। হৃদরোগসহ অন্যান্য কার্ডিওভাসকুলার রোগে আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে মৃত্যুর হার ২১.১২ শতাংশ। এই অবস্থায় স্কুল এবং কলেজ পর্যায়ে সিপিআর ট্রেনিং দিতে পারলে প্রত্যেক ঘরে ঘরে একজন বিশেষজ্ঞ তৈরি করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনের শপথ কক্ষে আইপিডিআই ফাউন্ডেশন এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পার্লামেন্টারি স্টাডিজের (বিআইপিএস) যৌথ উদ্যোগে অসংক্রামক রোগ বিষয়ক সচেতনতা ও সিপিআর প্রশিক্ষণ কর্মশালায় বক্তারা এ কথা বলেন। কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী স্বেচ্ছাসেবকদের শেখানো হয় কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হওয়ার লক্ষণ কী, এক্ষেত্রে কীভাবে সিপিআর দিতে হবে। এসময় বক্তারা বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক সিপিআর ট্রেনিংয়ের পাশাপাশি পাঠ্যপুস্তকে এটি পড়ানো গেলে এবং এগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলে অসংখ্য কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্ত ব্যক্তির জীবন রক্ষা পাবে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা।

সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সেক্রেটারি কে. এম. আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অসংক্রামক রোগ-বিষয়ক আলোচনা ও প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন আইপিডিআই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী। অনুষ্ঠানের মূল বক্তা আইপিডিআই ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি জেনারেল ও প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ডা. মহসীন আহমদ তার বক্তব্যে বলেন, কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্ত ব্যক্তির জীবন বাঁচানোর পেছনে সিপিআর’র ভূমিকা অনস্বীকার্য। উন্নতবিশ্বে এই গুরুত্ব সঠিকভাবে উপলব্ধ হয়েছে বিধায় সেখানে সিপিআর প্রশিক্ষণের ব্যাপারে সচেতনতা সহজেই প্রতীয়মান হয়।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট এবং সিপিআর সম্পর্কে জনসাধারণের ধারণা না থাকায় এ ধরনের কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয় না। এই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যেই হেলো- আইপিডিআই ফাউন্ডেশন কাজ করে যাচ্ছে। কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে জীবন বাঁচায় সিপিআর, ঘরে ঘরে হোক এর ট্রেনিং সেন্টার- এই অঙ্গীকার নিয়ে আমাদের আজকের এই কর্মশালার আয়োজন। আমাদের মূল লক্ষ্য স্কুল ও কলেজের পাঠ্যক্রমে বেসিক লাইফ সাপোর্ট ও সিপিআর অন্তর্ভুক্ত করা। কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, সারা বিশ্বের অসংখ্য মানুষ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। একটু সচেতন হলেই সিপিআরের মাধ্যমে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্ত ব্যক্তিকে বাঁচানো সম্ভব।

তিনি বলেন, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেড়ে চলেছে। আমাদের দেশও এর ব্যতিক্রম নয়। আইপিডিআই ফাউন্ডেশনের এমন সময়োপযোগী উদ্যোগ দেশব্যাপী একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, যেকোনো বিষয়ে সচেতনতাই হলো বড় প্রতিরোধ। দেশে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে প্রান্তিক পর্যায়ে সচেতনতা পৌঁছাতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বিশেষ করে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বিষয়ে সচেতনতায় গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা তার বক্তব্যে বলেন, জনসাধারণের মধ্যে অনেকেই জানেন জ্বরের প্রাথমিক চিকিৎসা প্যারাসিটামল। একইভাবে হৃদরোগের ক্ষেত্রে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে কেউ আক্রান্ত হলে কী করণীয় তা জানা থাকলে জীবনের ঝুঁকি অনেক কমে আসবে। কর্মশালায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সব সংসদ সদস্য, সংসদের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রায় ২০০ জনকে সিপিআর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবার সুস্বাস্থ্য কামনা করে এমন একটি মহৎ উদ্যোগ হাতে নেওয়ায় আইপিডিআই ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ জানানোর মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সভাপতি কে. এম. আব্দুস সালাম অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।