ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আলোচিত ‘জল্লাদ’ শাহজাহানের মৃত্যু

আলোচিত ‘জল্লাদ’ শাহজাহানের মৃত্যু

বঙ্গবন্ধুর খুনিসহ কারাগারে বেশ কয়েকজন আলোচিত ফাঁসির আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা আলোচিত জল্লাদ শাহজাহান ভূঁইয়া মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। গতকাল সোমবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। সাভারের হেমায়েতপুরের জাদুরচর এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি।

গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির তেজগাঁও জোনের শেরে-বাংলা নগর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মশিউর আজম। পুলিশ জানায়, রাত সাড়ে ৩টার দিকে বুকে ব্যথা শুরু হলে তাকে ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

শেরে-বাংলা নগর থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) সজীব দে বলেন, ভোর সাড়ে ৫টার দিকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। পরিবারের সদস্যরা এসেছেন। আইনানুগ কার্যক্রম শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হবে। তার বোন ফিরোজা মরদেহ গ্রহণ করতে এসেছেন বলে জানা গেছে। আইনগত কার্যক্রম শেষে তার মরদেহ নরসিংদির পলাশ উপজেলার ইছাখালী গ্রামে দাফন করা হবে বলে জানান তিনি। ‘জল্লাদ’ শাহজাহানের পুরো নাম শাহজাহান ভূঁইয়া, তিনি নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের ইছাখালী গ্রামের মৃত হাছেন আলীর ছেলে। মায়ের নাম মেহের। ১৯৫০ সালের ২৬ মার্চ জন্ম নেওয়া শাহজাহানের বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তিন বোনের এক ভাই ছিলেন তিনি। এরই মধ্যে দুই বোন মারা গেছেন। জীবনের দীর্ঘ সময় কারাগারে বন্দি থাকায় ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অবিবাহিত ছিলেন। তবে কারামুক্তির পর এক তরুণীকে বিয়ে করেন। তবে সে সংসার টেকেনি। এ নিয়ে আইনি জটিলতায়ও পড়েন তিনি। দীর্ঘ ৩১ বছর ৬ মাস ২ দিন কারাভোগের পর ২০২৩ সালের ১৮ জুন দুপুরে কারাগার থেকে মুক্তি পান শাহজাহান। ডাকাতি করতে গিয়ে হত্যা ও অস্ত্র আইনের দুই মামলায় তার ৪২ বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল। কিন্তু কারাগারে জল্লাদের কাজ, সুশৃঙ্খল জীবনযাপন আর ভালো কাজের পুরস্কার হিসেবে তিনি ১০ বছর ৫ মাস ২৮ দিন রেয়াত (সাজা মওকুফ) পান। ওই দুই মামলায় তার ৫ হাজার টাকা করে মোট ১০ হাজার টাকা জরিমানা হয়। মুক্তির সময় কারা কর্তৃপক্ষ তা পরিশোধ করে দেয়। ছাত্রজীবনে স্থানীয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া শাহজাহান অপরাধ জগতে ঢুকতেও বেশি সময় নেননি। ডাকাতি ও খুনের মতো ভয়ংকর সব অপরাধ করার পর ১৯৯১ সালের ১৭ ডিসেম্বর তিনি প্রথম গ্রেপ্তার হয়ে মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে আসেন। এরপর দুই মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে ৪২ বছরের কারাদণ্ড হয় তার। কারাগারে তার কয়েদি নম্বর ছিল ২৫৮৯/এ। সাজা কমাতে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে জল্লাদ হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। এরপর সহযোগী হিসেবে গফরগাঁওয়ের নূরুল ইসলামকে ফাঁসি দিয়ে জল্লাদ জীবন শুরু করেন তিনি। একসময় মানিকগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে ঢাকা সেন্ট্রাল কারাগারে আনা হয় শাহজাহানকে। সেখানে তাকে প্রধান জল্লাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কারাগারের নথি অনুযায়ী, ‘জল্লাদ’ শাহজাহান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় ঘাতক (বজলুল হুদা, মুহিউদ্দিন, সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মহিউদ্দিন আহমেদ, আবদুল মাজেদ), চার যুদ্ধাপরাধী (জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লা, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, মীর কাসেম আলী), কুখ্যাত সন্ত্রাসী এরশাদ শিকদার, জঙ্গি নেতা বাংলা ভাই ও আতাউর রহমান সানী, শারমীন রীমা হত্যার আসামি খুকু মনির ও ডেইজি হত্যা মামলার আসামি হাসানসহ আলোচিত ২৬ জনের ফাঁসি কার্যকর করেন

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত