ড. ইউনূস প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী

আমি বঙ্গবন্ধুকন্যা, দেশ বেচি না, জেলাসিও করি না

প্রকাশ : ২৬ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  বিশেষ প্রতিনিধি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর মেয়ে। যে জায়গায় আর কেউ কখনো আসতে পারবে না। আর সেটাই আমার গর্ব। প্রধানমন্ত্রী তো সামান্য ব্যাপার। আমি দেশ বেচি না, দেশের স্বার্থও বেচি না। শেখ হাসিনা কারো সঙ্গে জেলাসি করে না।’ গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে গণভবনে সাম্প্রতিক ভারত সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের প্রশ্নোত্তর পর্বে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘আমি সব সময় দেশের স্বার্থ রক্ষা করেই চলি। যে কারণে আমি ক্ষমতায় মাঝে আসতেও পারিনি। তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না। আমার কাজ দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা। দেশের মানুষের মাথা যেন উঁচু থাকে। আমার কাজ সেটাই। আমি এর কাছে, ওর কাছে ধর্না নিয়ে বেড়াই না।’

গত সোমবার টাইম ম্যাগাজিনে ড. ইউনূস প্রসঙ্গে একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ ছাপা হয়েছে। সেই প্রবন্ধে আপনার নামও এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে- বাংলাদেশ সরকার ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে সব ধরনের চেষ্টা করে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ওনি তো (ড. ইউনূস) সাজাপ্রাপ্ত আসামি। সরকারের নয়, লেবার কোর্টে সাজাপ্রাপ্ত একজন আসামিকে নিয়ে সাংবাদিক লেখে কী করে? আইএলও কনভেনশনে আমরা স্বাক্ষর করেছি। শ্রমিকের স্বার্থরক্ষা করতে আমরা বাধ্য। আমাদের তো লেবার কোর্টের ব্যাপারে কিছুই করার নাই। গ্রামীণ ব্যাংক তৈরি করা হয়েছিল এরশাদের আমলে। তিনি তো সেখানে এমডি হিসেবে চাকরি করতেন, বেতন পেতেন। ব্যাংকটি তার নিজের করা না। গ্রামীণ ব্যাংক হচ্ছে সরকারের সংবিধিবদ্ধ সংস্থা। টাকা ও বেতন সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হতো। বাইরে যেতে হলে সরকারের জিও নিতে হতো। তিনি এমনভাবে প্রচার করেছেন, যেন এটা তার নিজেরই করা। ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত একজন এমডি থাকতে পারবে। অথচ তিনি নিয়ম ভঙ্গ করেই এমডি পদে ছিলেন। অর্থমন্ত্রী মুহিত সাহেব অনুরোধ করলেন- আপনার তো বয়স হয়েছে এমডি না উপদেষ্টা হিসেবে থাকেন। তিনি সেটা মানেননি। তিনিই কিন্তু মামলা করেছেন দুটি। দুটিতেই তিনি (ড. ইউনূস) হেরে যান। তার বিরুদ্ধে কিন্তু সরকার কোনো মামলা করেনি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘গ্রামীণ ফোনের ব্যবসাটাও আমিই তাকে দিয়েছিলাম। এটা মনে রাখা উচিত। ব্যবসার টাকাটাও আমি দিয়েছিলাম। আমার সরকার ও আমি নিজে তখন তাকে প্রথমে ১০০ কোটি এরপর ২০০ কোটি পরে আবার ১০০ কোটি টাকার সহায়তা করি। ফোনের ব্যবসার মুনাফায় গ্রামীণ ব্যাংক চলবে। জিজ্ঞাসা করেন তার কোনো টাকা গ্রামীণ ব্যাংকে গেছে কি না? যায়নি। বরং নতুন নতুন ব্যবসা খুলে ব্যবসা করেছেন। কিন্তু কোনো ট্যাক্স দেননি। তার বিরুদ্ধে যখন মামলা হয়েছে। তখনই তিনি কিছু ট্যাক্স পরিশোধ করেছেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে লেবাররা লেবার কোর্টে মামলা করেছেন। আমি বা আমরা করিনি। এখানে আমার কী দোষ। তার উঠার পেছনে তো আমারই সহায়তা ছিল। তার দারিদ্র্য বিমোচনের বিষয়ে কথা বলেছি। তখন তিনি কিন্তু পরিচিত ছিলেন না। ভাবছিলাম তিনি ভালো মানুষ। পরে দেখি, তিনি দারিদ্র্যমুক্ত না দারিদ্র্য লালন-পালন করেন। কারণ, উচ্চহারে সুদ দিতে হয়। প্রথম সুদ যখন কেউ দিতে পারে নাম তখন আরেক ঋণে সেই সুদ পরিশোধ করতে হতো। সেটার আবার উচ্চ সুদ হার দাঁড়াত। এভাবে ৪০ থেকে ৪৫ ভাগ সুদ দিতে হতো। হিলারি ক্লিনটনকে নিয়ে সেসব পরিবারকে ক্ষুদ্র ঋণ দেয়া হয়েছিল তাদের অনেকে সুদের চাপে আত্মহত্যা করেছেন। খোঁজ নেন। জমিজমা বেচে ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে। এই সুদের চাপে। আমি বলেছিলাম এত সুদ কেন? সহনশীল করা উচিত। তিনি এতই যদি করলেন, তাহলে দারিদ্র্য বিমোচন হলো না কেন? দারিদ্র্য বিমোচন কত করলাম আমি। আজকে ৪৮.৬ ভাগ থেকে নামিয়ে দারিদ্রের হার ১৮.৭ ভাগে নামিয়ে এনেছি আমি। সে ক্রেডিটও তারা দেয়নি। অথচ কোনো কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা লেখে ফেলে গ্রামীণ ব্যাংক করেছে। আমি কখনো তদবির করতে যাইনি।’