বাংলাদেশে কর্মরত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর বিবৃতি

দেশে শিশু-মাতৃমৃত্যু কমলেও ‘এসডিজি’ অর্জন অনেক দূরে

প্রকাশ : ২৬ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রসবকালীন নারী ও শিশু মৃত্যুর হার তুলনামূলক কমে এলেও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) থেকে বাংলাদেশ অনেক দূরে অবস্থান করছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশে কর্মরত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো। এই অবস্থায় ৬০ লাখ শিশু এবং প্রায় ২০ লাখ নারীর অপরিহার্য স্বাস্থ্যসেবা উন্নত করতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যৌথ অংশীদারিত্বে ‘প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য স্বাস্থ্যব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ’ শীর্ষক ৫ বছর মেয়াদি প্রকল্প হাতে নিয়েছে ইউনিসেফ, ইউএনএফপিএ ও কানাডা। গতকাল মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কানাডা ইউনিসেফ ও ইউএনএফপি’এর সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে নারী, শিশু ও কিশোরীদের জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা উন্নত করতে বাংলাদেশকে সহায়তা করছে। পাঁচ বছরব্যাপী এই প্রকল্পের লক্ষ্য মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো এবং অনুন্নত অঞ্চলগুলোতে স্বাস্থ্যসেবা উন্নত করা। এই প্রকল্পে বিশেষ করে পাঁচটি অনুন্নত গ্রামীণ এলাকায় (কুড়িগ্রাম, ভোলা, খাগড়াছড়ি, শেরপুর ও সুনামগঞ্জ) স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার গুরুতর ঘাটতি পূরণ করবে এবং লিঙ্গ সমতা ও মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির বিষয়গুলোকে তুলে ধরার পাশাপাশি মা ও শিশুর মৃত্যুহার কমাবে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত একদশকে অগ্রগতি সত্ত্বেও বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যু হার উল্লেখযোগ্য মাত্রায় উদ্বেগ হিসেবে রয়ে গেছে। এই হার ২০১০ সালের প্রতি ১ লাখ জীবিত জন্ম নেয়া শিশুর মধ্যে ১৯৪ জনের মৃত্যু থেকে ২০২৩ সালে কমে ১৩৬ জন হয়েছে, অর্থাৎ প্রায় ৩০ শতাংশ কমেছে। তবে শিশু মৃত্যুর এই হার ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি ১ লাখ জীবিত জন্ম নেয়া শিশুর মধ্যে ৭০ জনে নামিয়ে আনার যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) রয়েছে, তা থেকে অনেক দূরে। এসব মৃত্যুর অনেকগুলোই হয় রক্তক্ষরণ ও খিঁচুনির মতো প্রতিরোধযোগ্য কারণে। কানাডীয় অর্থায়নে এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রজনন বয়সী ১৯ লাখের বেশি নারী, যাদের দুই তৃতীয়াংশ কিশোরী এবং নবজাতক ও ৫ বছরের কম বয়সি শিশুসহ প্রায় ৬০ লাখ শিশু, যাতে তাদের অপরিহার্য স্বাস্থ্যসেবা পায় তা নিশ্চিত করা হবে। যৌথ অংশীদারিত্ব প্রসঙ্গে কানাডার হাইকমিশনার ড. লিলি নিকোলস বলেন, কানাডা বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা উন্নত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, বিশেষ করে নারী ও মেয়েদের উপকারের জন্য। এই প্রকল্পের লক্ষ্য শুধু স্বাস্থ্যগত দিক দিয়ে খারাপ অবস্থানে থাকা পাঁচ জেলার মানুষের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটানো নয়, একই সঙ্গে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা, বাজেট ও মানবসম্পদ নিয়ে আরো ভালো পরিকল্পনা এবং সেবার মান উন্নত করাও এই প্রকল্পের লক্ষ্য। আমরা আশা করি এই প্রকল্প অন্য জেলাগুলোর জন্য একটি মডেল হিসেবে কাজ করবে। বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেন, এই প্রকল্প শুধু শিশু ও নারীদের জীবন বাঁচাবে না, একই সঙ্গে নিরাপদ একটি পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে আরো টেকসই স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা গড়ে তুলবে, যেখানে শিশু ও নারী, বিশেষ করে কিশোরীরা সুন্দরভাবে বেড়ে উঠতে ও উন্নতি করতে পারবে। তিনি আরো বলেন, প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা এবং জাতীয়, জেলা ও স্থানীয় পর্যায়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। এটি যৌন, প্রজনন, মাতৃ, নবজাতক, শিশু ও কিশোরী স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে লিঙ্গ ও অধিকারভিত্তিক সেবাগুলোর প্রতিও নজর দেবে। ইউএনএফপিএ বাংলাদেশের প্রতিনিধি ক্রিস্টিন ব্লকহাস বলেন, কয়েক দশক আগের তুলনায় বর্তমানে বাংলাদেশে একজন সন্তানসম্ভবা নারী হওয়া অনেক বেশি নিরাপদ, কিন্তু আমাদের থেমে যাওয়ার সময় এখনো আসেনি। এই প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা সম্মিলিতভাবে সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে তার চূড়ান্ত গন্তব্যে পৌঁছাতে সহায়তা করব।