রাতভর ওপারে গুলি এপারে আতঙ্ক

প্রকাশ : ২৭ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  এএইচ সেলিম উল্লাহ, কক্সবাজার

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘাতের জের ধরে নাফনদীর ওপারে মংডু শহর ঘিরে তুমুল লড়াই চলছে। গত মঙ্গলবার বিকাল থেকে শুরু হওয়া লড়াই চলছে বুধবার বেলা ১১টা পর্যন্ত। টেকনাফ সীমান্ত এলাকার মানুষ জানিয়েছেন, মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৪টার পর থেকে ভোর ৩টা পর্যন্ত মিয়ানমারের কাউয়ারবিল এবং পেরাংপুরু এলাকায় একের পর এক মর্টারশেল, ব্রাশ ফায়ার, রকেট লাঞ্চার হামলা হয়েছে। এক ঘণ্টা বিরতির পর আবার বুধবার ভোর ৪টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত চলছে। টেকনাফের মানুষ বলছেন, এ রকম বিকট শব্দ আর কখনো শোনেননি। সারারাত ধরে কেউ ঘুমাতে পারেনি। মুহুর্মুহু কেঁপে উঠছে বাড়িঘর।

সাবরাং ইউপির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ শরিফ বলেন, গত মঙ্গলবার বিকালে পর বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। রাতভর এমন বিস্ফোরণ এর আগে এমন তীব্র ছিল না। সীমান্ত এলাকার মানুষ পুরো রাত ঘুমহীন ছিলেন। শাহপরীর দ্বীপের বাজারপাড়ার ব্যবসায়ী নুরুল আমিন জানান, মিয়ানমারে সংঘাতের পর এমন বিকট শব্দ আর শোনা যায়নি। সীমান্তের ওপারে সকালের পর যুদ্ধ বিমানও দেখা মিলেছে। ঘুমহীন রাত অতিবাহিত হওয়ার পর সীমান্তের মানুষ আতঙ্কে রয়েছেন। সীমান্ত এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘাতের জের ধরে নাফনদীর ওপারে মংডু শহরের নিকটবর্তী খায়েনখালী খালের পাশে রোহিঙ্গাবোঝাই নৌকা রয়েছে। এরা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সীমান্ত এলাকার লোকজন। টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়া থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এবং সাবরাং এর পূর্বে নাফনদীর ওপারে মংডু শহর। ওই মংডু শহরের নাফ নদী দিয়ে প্রবেশ পথ খায়েনখালী খালটি। ওই খালের মোহনায় মঙ্গলবার বিকালের পর থেকে রোহিঙ্গাবোঝাই কয়েকটি নৌকা দেখা গেছে। ওই সীমান্ত এলাকায় বিকালের পর থেকে প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী বিদ্রোহী আরাকান আর্মির দখলে থাকা এলাকা উদ্ধারের জন্য এমন গোলাগুলি বলে সীমান্ত এলাকার লোকজন মনে করছেন। সীমান্ত এলাকার লোকজন জানান, নৌকায় অপেক্ষামান রোহিঙ্গারা মংডু শহরের বিভিন্ন গ্রাম থেকে বিতাড়িত হয়েছে। এরা বাংলাদেশে অনুপ্রেবশের চেষ্টার আশঙ্কা করছেন তারা। টেকনাফ উপজেলার সীমান্ত এলাকার লোকজন ও জনপ্রতিনিধিদের দেয়া তথ্য বলছে, গত ১৮ জুন মঙ্গলবার সকাল থেকে মিয়ানমারের ওপার থেকে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ ভেসে আসতে শুরু করে, যা শনিবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত থেমে থেমে অব্যাহত রয়েছে। এর আগে ১৫ জুন শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ছয়টি ও রাত সাড়ে ১২টার দিকে থেমে থেমে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গিয়েছিল। ১৬ জুন রবিবার ও ১৭ সোমবার (ঈদের দিন) আর কোনো শব্দ শোনা যায়নি। ঈদের পরের দিন ১৮ জুন মঙ্গলবার থেকে আবারও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে থেমে। সর্বশেষ শুক্রবার থেকে মাঝরাতে মর্টারশেল ও শক্তিশালী গ্রেনেড বোমার বিস্ফোরণের ঘুম ভাঙল টেকনাফ সীমান্তে বাসিন্দাদের। গত শুক্রবার রাত দেড়টা পর থেকে মিয়ানমার সীমান্তের ওপার থেকে বিকট শব্দ ভেসে আসে। মাঝরাত থেকে শনিবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত থেমে থেমে মুহুর্মুহু বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। শনিবারের পর থেকে বিস্ফোরণের শব্দ বন্ধ ছিল। মঙ্গলবার থেকে আরও শোনা যাচ্ছে। সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুর হোসেন বলেন, দুই দিন বন্ধ থাকার পর আবারও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। নাফনদীর ওপারে নৌকায় রোহিঙ্গাদেরও দেখে গেছে বলা হচ্ছে। অনুপ্রেবশ ঠেকাকে সীমান্ত এলাকার লোকজনকে সর্তক থাকতে বলা হয়েছে। টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, মংডু শহরের খায়েনখালী খালটি নাফনদীর মোহনা। ওপারে মর্টারশেল, গ্রেনেড বোমার বিস্ফোরণের শব্দের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের অবস্থান শোনা যাচ্ছে। তবে নাফ নদী অতিক্রম করে মিয়ানমারের লোকজনের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে সতর্ক অবস্থায় আছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্টগার্ড বাহিনী। গোয়েন্দা নজরদারি, টহলও বাড়ানো হয়েছে। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণ সংঘাতে আবারও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। অনুপ্রবেশ ঠাকাতে বাংলাদেশ সীমান্তে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের টহল জোরদার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।