সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী

দেশের স্বার্থরক্ষা করেই ভারতের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক নবায়ন

প্রকাশ : ২৭ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশের স্বার্থে ও স্বার্থ সংরক্ষণ করেই ভারতের সঙ্গে নতুন সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর ও পুরোনো সমঝোতা স্মারক নবায়ন করেছে সরকার। গতকাল বুধবার দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রীর সদ্যসমাপ্ত ভারত সফর নিয়ে বিএনপির বিরূপ মন্তব্যের বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, বিএনপি মহাসচিব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের পার্থক্য না বুঝে, না পড়েই মন্তব্য করছেন। কারণে-অকারণে সরকারের বিরোধিতা করাই তাদের কাজ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে পারস্পরিক মর্যাদাপূর্ণ বলে অভিহিত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তৃতীয়বার সরকার গঠনের পর প্রথম সরকারপ্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ভারত আমাদের বিশ্বস্ত বন্ধু। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত যেভাবে সহায়তা করেছে, তাদের সৈনিকরা যেভাবে জীবন দিয়েছে, আমাদের প্রায় ১ কোটি মানুষকে যেভাবে আশ্রয় দিয়েছে, তাতে তাদের সঙ্গে আমাদের যে সম্পর্ক, তা অবিচ্ছেদ্য।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, তারা প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করতে পারেনি। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া নিজেই বলেছেন, তিনি ভারতে গিয়ে গঙ্গাচুক্তির কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলেন। আর ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গঙ্গাচুক্তি করেছেন বিধায় আমরা পানি পাচ্ছি।’ হাছান মাহমুদ বলেন, আজকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে দুই দেশের সম্পর্ক যে নতুন উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে, তার ফলেই আমরা নেপাল থেকে ভারতের ওপর দিয়ে ট্রান্সমিশন লাইন দিয়ে জলবিদ্যুৎ আমদানি করতে পারছি। ভুটানের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা চলছে। সম্পর্কের কারণেই এ বছর কোরবানির আগে ভারত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে। এ সময় ভারতের সঙ্গে ‘কানেক্টিভিটি’ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, ঢাকা-কলকাতা, খুলনা-কলকাতা রেল যোগাযোগ বিদ্যমান। ভারতের পাশাপাশি নেপাল, ভুটানসহ আঞ্চলিক রেল ও সড়ক যোগাযোগ উন্নয়নে কাজ চলছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোর সঙ্গে ভারতের নানা অঞ্চলের যোগাযোগ বহু দিন ধরে। ১৯৬৫ সালের পর অনেক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। সেগুলো আবার চালু করা হচ্ছে। এর আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সুইডেনের বিদায়ি রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দ্রা বার্গ ফন লিন্ডে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ সময় বাংলাদেশে অবস্থানকালে রাষ্ট্রদূতের কার্যক্রমের প্রশংসা করেন। রাষ্ট্রদূতও তার এ সময়কালকে অত্যন্ত হৃদ্যতাপূর্ণ ও ফলপ্রসূ বলে বর্ণনা করেন।

বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণ, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, প্রযুক্তি, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনসহ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরো এগিয়ে নেয়ার বিষয়ে আলোকপাত করেন তারা। বৈঠক শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতিদানকারী ইউরোপের দেশগুলোর অন্যতম সুইডেনের প্রায় ৫০টি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে অপারেট করছে। কাপ্তাইয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ-সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ১৯৬০ দশকের শুরু থেকে এবং সুইডিশ এনজিও সিডা বহু বছর ধরে এ দেশে কাজ করছে। আমরা তাদের ‘বর্জ্য থেকে শক্তি উৎপাদন’ এবং তথ্যপ্রযুক্তিসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছি। মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন পরিচালিত এ সভায় কূটনৈতিক ও দাপ্তরিক বিভিন্ন বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন মন্ত্রী। অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব ড. নজরুল ইসলাম ও সব উইংয়ের মহাপরিচালকরা সভায় অংশ নেন। প্রধানমন্ত্রীর সদ্য সমাপ্ত ভারত সফর-উত্তর কার্যক্রম, চীনে আসন্ন দ্বিপক্ষীয় সফরের প্রস্তুতিসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে সুসমন্বয়, দূতাবাসগুলোর কার্যক্রম তদারকি, প্রবাসীসেবার মানবৃদ্ধি, মিশনগুলোর ট্রেড টার্গেট বাস্তবায়ন ও কার্যক্রম ইন্সপেক্টর জেনারেল অব মিশনসের মাধ্যমে পরিদর্শনসহ মন্ত্রণালয় ও এর মিশনগুলোর নানা কার্যক্রমের ওপর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন ড. হাছান।