ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সাদিক এগ্রোতেও টাকা ঢেলেছেন বেনজীর

সাদিক এগ্রোতেও টাকা ঢেলেছেন বেনজীর

দেশে মাংস উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে সরকারের পশু আমদানি নিরুৎসাহিত করার উদ্যোগকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে চলেছেন ‘ছাগলকাণ্ডে’ আলোচিত সাদিক এগ্রোর স্বত্বাধিকারী পরিচয় দেওয়া মো. ইমরান হোসেন। আইনের তোয়াক্কা না করে দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে চারটি দেশ থেকে গরু আনছেন তিনি। অবৈধভাবে গরু আনতে একটি মাফিয়া সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন ইমরান। তার ওই সিন্ডিকেটে রয়েছেন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এছাড়া জানা গেছে, ইমরানের সাদিক এগ্রোতেও বড় অংকের টাকা ঢেলেছেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ।

আইনের তোয়াক্কা না করে দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারত, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশকিছু দেশ থেকে গরু আনছেন ‘ছাগলকাণ্ডে’ আলোচিত সাদিক এগ্রোর স্বত্বাধিকারী মো. ইমরান হোসেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারত, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশকিছু দেশ থেকে বিভিন্ন জাতের গরু দেশে এনে চড়া দামে বিক্রি করছিলেন সাদিক এগ্রোর স্বত্বাধিকারী ইমরান। এসব গরু আনতে সরকারি কোনো কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেননি তিনি। আবার যেসব জাতের গরু আমদানি নিষিদ্ধ সেসব গরুও নিয়ে এসেছেন তিনি। যদিও প্রাণিসম্পদ অধিদফতর বলছে, থাইল্যান্ড থেকে কোনো গরু বাংলাদেশে আনার সুযোগ নেই। ২০০৮ সালে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ সংলগ্ন ভাঙা মসজিদের গলিতে ২০ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন ইমরান হোসেন। বর্তমানে হাজার কোটি টাকার মালিক তিনি। থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার থেকে সংগ্রহের পর গরুগুলো উখিয়া হয়ে নরসিংদীর শেখ ক্যাটল ফার্মে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে ট্রাকে করে ঢাকার মোহাম্মদপুরে সাদিক এগ্রোতে নিয়ে আসা হয়। জানা গেছে, সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে গরু পাচার কারবারে সাদিক এগ্রোর স্বত্বাধিকারী ইমরান হোসেনের সঙ্গে জড়িত প্রভাবশালী বেশকিছু ব্যক্তি। সম্প্রতি ইমরান মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে ১২টি গরুর একটি চালান নিয়ে আসেন। গরুগুলো থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার থেকে সংগ্রহের পর উখিয়া হয়ে নরসিংদীর শেখ ক্যাটল ফার্মে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে গরুগুলো ট্রাকে করে ঢাকার মোহাম্মদপুরে সাদিক এগ্রোতে নিয়ে আসা হয়। এ কাজে তাকে সহযোগিতা করেন তারই ঘনিষ্ঠ শেখ জাফর ছোটন, নজিবুল্লাহ ও কক্সবাজারের হলুদিয়া পালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস। একদিকে অবৈধ পথে চোরাকারবারির মাধ্যমে দেশে পশু আনছেন ইমরান, অন্যদিকে সংবাদ সম্মেলন করে অবৈধ পথে পশু আমদানি না করতে নিষেধ করছেন। কোরবানির ঈদের আগে এমন প্রতারণার আশ্রয় নেন তিনি। অবৈধভাবে বিদেশ থেকে আনা এসব গরু চড়া দামে বিক্রি করছেন ইমরান। সম্প্রতি চোরাই পথে সীমান্ত দিয়ে রাজস্থান থেকে আটটি গরু আনেন ইমরান। এসব গরুর প্রতিটি ১২ থেকে ২০ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে বলে জানান সাদিক এগ্রোর সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং ম্যানেজার মোহাম্মদ মহিদুল ইসলাম। অবৈধভাবে সীমান্ত দিয়ে আনা বেশকিছু গরু সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের খামারেও পাঠান ইমরান। সাদিক এগ্রোতে বেনজীরের নিয়মিত আসা-যাওয়া ছিল। এমনকি সাদিক এগ্রোতে বেনজীর আহমেদের বড় অংকের আর্থিক বিনিয়োগ রয়েছে বলেও জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের গোপালগঞ্জের গরুর খামারটি প্রস্তুত করে দেন ইমরান। অবৈধভাবে সীমান্ত দিয়ে আনা বেশকিছু গরু বেনজীরের খামারেও পাঠান ইমরান। সাদিক এগ্রোতে বেনজীরের নিয়মিত আসা-যাওয়া ছিল। এমনকি সাদিক এগ্রোতে বেনজীর আহমেদের বড় অংকের আর্থিক বিনিয়োগ রয়েছে বলেও জানা গেছে।

বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তার যোগসাজশে গরু চোরাচালানের মাফিয়া হয়ে ওঠেন ইমরান। অভিযোগ রয়েছে, চোরাচালান বিষয়ে অন্য কোনো খামারের মালিক বা সংশ্লিষ্ট কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের বিভিন্ন মামলায় ফাঁসিয়ে দিতেন ইমরান। এজন্য অনেকে মুখ বন্ধ রেখেছেন।

সাদিক এগ্রোর কয়েকজন কর্মী জানান, বিদেশ থেকে আনা গরুর বেশিরভাগই রাখা হয় আমিনবাজার এলাকায় সাদিক এগ্রোর আরেকটি খামারে। সেখান থেকে সুযোগ বুঝে নেয়া হয় বিভিন্ন খামারে।

বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তার যোগসাজশে গরু চোরাচালানের মাফিয়া হয়ে ওঠেন ইমরান। চোরাচালান বিষয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের বিভিন্ন মামলায় ফাঁসিয়ে দেন তিনি।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ডা. মো. মাহবুবুল আলম ভূঞা বলেন, আমার জানা মতে গত পাঁচ বছরে থাইল্যান্ড থেকে গরু আমদানির কোনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি। তবে সাদিক এগ্রোর স্বত্বাধিকারী ইমরান হোসেনের থাইল্যান্ড থেকে চোরাই পথে আটটি গরু আনার প্রমাণের কথা বললে তিনি এ বিষয়ে আর কোনো কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত