ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিএনপির সমাবেশে মির্জা ফখরুল

খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দিলে ভয়াবহ পরিণতি হবে

খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দিলে ভয়াবহ পরিণতি হবে

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, আমরা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই- দেশনেত্রীকে মুক্ত করুন। অন্যথায় আপনাদের (সরকার) যে কোনো পরিণতির জন্য তৈরি থাকতে হবে। এ দেশের মানুষ কখনোই তাকে (খালেদা জিয়া) এভাবে অন্যায়ভাবে কারাগারে বন্দি অবস্থায় চলে যেতে দেবে না। এটা আপনাদের মনে রাখতে হবে। গতকাল শনিবার বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এই সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপি। এতে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। গতকাল বেলা আড়াইটার পর পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে সমাবেশ শুরু হয়। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এই সমাবেশে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে আমি দলের পক্ষ থেকে আহ্বান জানাতে চাই-দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের প্রতীক, আমাদের আন্দোলনের প্রতীক। তাকে রক্ষা করতে হলে, বাঁচাতে হলে একইসঙ্গে আমাদের গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হলে, আমাদের অধিকারকে ফিরিয়ে আনতে হলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। একইসঙ্গে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে আহ্বান জানাতে চাই, আসুন আজকে যেমন গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করছি, যুগপৎ আন্দোলন করছি, আজকে দেশনেত্রীর মুক্তির আন্দোলনকেও একইভাবে একীভূত করে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে সোচ্চার আওয়াজ তুলি।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের রাজপথে আরো তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। ভয়ে মারা যাওয়ার চেয়ে সাহস নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলাই হচ্ছে আসল কাজ। পরিবর্তন শুধু বয়সি লোকদের দিয়ে আসে না। পরিবর্তন আসে তরুণ, যুবক শ্রেণির মধ্য দিয়ে।

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ২৮ তারিখে আমরা আন্দোলনের ফসল ঘরে আনতে পারিনি। কারণ আমাদের মৃত্যু ভয় ছিল। খালেদা জিয়া অসুস্থ হওয়ার কারণে পুরো দেশ আজ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। সারা দেশ আজ চোর-বাটপারে ভরে গেছে। ইদানীং সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে সরকারের অনেক অপকর্ম ফাস হচ্ছে।

তিনি বলেন, মওলানা ভাসানী বলেছিলেন, পাকিস্তানিদের থেকে মুক্ত হয়েছি দিল্লির দাসত্ব করার জন্য নয়। বিদেশে আমাদের বন্ধু থাকতে পারে প্রভু নয়। আজকে আওয়ামী লীগ ভারতের সেবা দাসে পরিণত হয়েছে।

আব্বাস বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতেই হবে। চোর-ডাকাতরা মুক্তি পেলেও তিনি মুক্তি পাচ্ছেন না। চিকিৎসকরাও বলেছেন- এ দেশে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সম্ভব নয়। অথচ, সরকার বলছে তিনি ভালো আছেন। খালেদা জিয়ার মুক্তির যে আন্দোলন তা শুরু হয়েছে। আমরা তার সুচিকিৎসার দাবি করছি না। আমরা তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি। আওয়ামী লীগ আর গণতন্ত্র একসাথে যায় না। খালেদা জিয়া বন্দি মানে গণতন্ত্র বন্দি। খালেদা জিয়া মুক্তি পেলে মুক্তি পাবে গণতন্ত্র।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, যুদ্ধ করেই দেশ স্বাধীন করতে হয়েছে, তাই শুধু বক্তৃতায় বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলবে না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসনে দেশে আজ অনিয়ম নিয়মে পরিণত হয়েছে। তাই আমাদের জন্য প্রতিরোধ কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

ক্ষমতাসীনদের সমালোচনা করে আমীর খসরু বলেন, বাংলাদেশে আজ আইনের শাসন নেই, মানুষের ভোটাধিকার নেই, বাকস্বাধীনতা নেই, মানবাধিকার নেই, জীবনের নিরাপত্তা নেই। এখানে অন্যায়-অনিয়ম আজ নিয়মে-আইনে পরিণত হয়েছে। কেউ কথা বললে গুম হতে হয়, খুন হতে হয়। নেতাকর্মীদের জেলখানায় বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করতে হয়। সেই দেশে কি শুধু প্রতিবাদ করে আমরা বের হতে পারব না। এখানে প্রতিরোধ এখন কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে নতুন করে লড়াই শুরু হয়েছে জানিয়ে তাকে মুক্ত করা ছাড়া ঘরে ফিরে না যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান। তিনি বলেন, এজন্য আজকে নেতাকর্মীদের শপথ নিতে হবে।

ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, আমাদের সংগ্রাম শুরু হলো। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ঢাকার রাজপথ প্রকম্পিত করতে হবে। মুক্তির মিছিল শুরু হলো। এ সময় নেতাকর্মীদের নিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে সমস্বরে স্লোগান তোলেন দুদু।

সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, কয়েক দিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছেন, জনগণ থেকে সরে গেলে আমি আর বাঁচব না। দেশবাসী মনে করে, র‌্যাব-পুলিশ যদি আপনাদের কাছ থেকে সরে যায়, তাহলে আপনার সরকারের অপমৃত্যু ঘটবে। আপনার সরকার রাজপথে লুটোপুটি খাবে। আপনার সরকারের পতন ঘটবে।

সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে বন্দি করে রাখা হয়েছে। তাকে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। জনগণের ভাষা বুঝুন। অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন।

বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন- দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক, ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শহিদ চৌধুরী এ্যানী, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, শিশুবিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী প্রমুখ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত