শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশে সমন্বিত কর্মসূচির আহ্বান

প্রকাশ : ৩০ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশের জন্য জাতীয়ভাবে সমন্বিত কর্মসূচি গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যসংক্রান্ত সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো প্রতিকারের জন্য প্রয়োজনীয় সেবার আওতায় আনার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করতে পারেন মা-বাবাসহ অভিভাবকরা। এজন্য মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ে তাদের সচেতন, উদ্বুদ্ধ করে তোলা জরুরি। এটি সম্ভব হলে তারা শিশুদের মানসিক বিকাশের বাধাগুলো চিহ্নিত করতে পারবেন, মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যাগুলো ধরতে পারবেন এবং সমস্যা অনুযায়ী তাদের সঙ্গে আচরণ করতে পারবেন এবং প্রয়োজনে পরামর্শক ও চিকিৎসকদের সহায়তা নিতে পারবেন। গণমাধ্যম ও যোগাযোগ উন্নয়ন সংগঠন ‘সমষ্টি’ আয়োজিত ‘শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশে অভিভাবকদের ভূমিকা’ শীর্ষক এক জাতীয় সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দাতব্য সংস্থা হিউম্যানিটি বিয়ন্ড ব্যারিয়ার্সের সহযোগিতায় বাংলাদেশ শিশু একাডেমির সভাকক্ষে গতকাল শনিবার এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একুশে পদকপ্রাপ্ত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘শিশুদের সুস্থ-স্বাভাবিক-পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশ জরুরি হলেও এটি সব মহলে তেমন গুরুত্ব পচ্ছে না। এজন্য নীতি-নির্ধারণী উদ্যোগ ও কর্মসূচি দরকার। শহরের পাশাপাশি গ্রামের শিশুদের জন্য এরকম কর্মসূচি প্রয়োজন।’ তিনি আরো বলেন, ‘অভিভাবকরা অনেক সময় শিশুদের ওপর অযথা চাপ প্রয়োগ করেন, তাদের প্রতিযোগিতার দৌড়ে নামিয়ে দেন। এরকম চর্চা শিশুদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং তাদের মানসিক ক্ষতির কারণ হতে পারে।’ তিনি বাবা-মাসহ অভিভাবকদের শিশুদের প্রতি সহনীয় আচরণ করার আহ্বান জানান। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ শিশু একাডেমির মহাপরিচালক আনজির লিটন বলেন, ‘শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশে সরকারিভাবে একটি জাতীয় রূপরেখা তৈরি করা প্রয়োজন। বাংলাদেশ শিশু একাডেমির পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত উদ্যোগ নেওয়া হবে। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি অভিভাবক সাক্ষরতার কার্যক্রমটি আরো ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেবে।’ তিনি শিশুদের মানসিক বিকাশের জন্য খেলাধুলাসহ অন্যান্য সৃজনশীল কাজে অংশগ্রহণ করার সুযোগ বাড়ানোর ওপর জোর দেন। সভাপতির বক্তব্যে সাবেক সিনিয়র সচিব ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব আবু আলম শহীদ খান বলেন, ‘পারিবারিকভাবে যেমন এখানে গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, তেমনি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্কুল-কলেজ থেকেও শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের পর্যবেক্ষণ জরুরি। এক্ষেত্রে সচেতনতা বাড়ানো একান্ত প্রয়োজন।’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট পরিচালিত জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য জরিপ ২০১৮-১৯ বলছে, বাংলাদেশের জনসংখ্যার ১৬.৮ ভাগ মৃদু থেকে গুরুতর মানসিক অসুস্থতায় ভুগছে। এই সমীক্ষা অনুযায়ী, ৭ থেকে ১৭ বছর বয়সি ১৪ ভাগ শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা। এর মধ্যে ৯৫ ভাগ কোনো ধরনের পরামর্শ বা চিকিৎসার আওতায় আসে না। অভিভাবকরা শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টিকে চিহ্নিতও করতে পারেন না। এ অবস্থা সমস্যাটিকে আরো প্রকট করে তোলে। সেমিনারে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি, গণমাধ্যমব্যক্তিত্ব, শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। উল্লেখ্য, ‘সমষ্টি’ গঞ্জনা ও বৈষম্য কমিয়ে শিশুদের সুস্থ বিকাশের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে অভিভাবকদের সচেতনতা বৃদ্ধি শীর্ষক একটি প্রকল্প পরিচালনা করছে। প্রকল্পের আওতায় ঢাকা, বরগুনা ও টাঙ্গাইলের ১০টি স্কুলের ৪০০ জন অভিভাবককে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য সাক্ষরতা সম্পর্কে সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।