এশিয়ার বৃহত্তম আদমজী জুট মিল

বন্ধের ২২ বছর আজ

প্রকাশ : ৩০ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  শরীফ সুমন, নারায়ণগঞ্জ

আদমজীর শ্রমিক, কর্মচারী, কর্মকর্তা ও আদমজী নগরবাসীর জন্য ৩০ জুন একটি বেদনাবিধুর দিন। ২০০২ সালের ৩০ জুন তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকার চিরতরে আদমজী জুট মিল বন্ধ করে দেয়। বন্ধের দিন কান্নার রোল পড়ে গোটা আদমজীতে। বন্ধঘোষিত এশিয়ার বৃহত্তম পাটকল আদমজী জুট মিলসটির ২নং ইউনিট চালুর আশ্বাস দিয়েছিল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার। তবে ২২ বছরেও সেই আশ্বাসের কোনো বাস্তবায়ন ঘটেনি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার আগে ও পরে আদমজী জুট মিলের ২নং ইউনিট পুনরায় চালু করার ঘোষণা দিয়ে আসলেও দীর্ঘ ২২ বছরেও তা আলোর মুখ দেখেনি।

জানা গেছে, পাকিস্তানের অন্যতম ধনাঢ্য আদমজী পরিবারের তিন ভাই এ. ওয়াহেদ আদমজী, জাকারিয়া আদমজী ও গুল মোহাম্মদ আদমজী যৌথভাবে আদমজী জুটমিল প্রতিষ্ঠা করেন। নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যার তীরে সিদ্ধিরগঞ্জের সুমিলপাড়ায় আদমজী জুটমিল গড়ে ওঠে ২৯৭ একর জমির ওপর। ১৭০০ হেসিয়ান ও ১০০০ সেকিং লুম দিয়ে এই মিলের উৎপাদন শুরু হয় ১৯৫১ সালের ১২ ডিসেম্বর। ওই সময় এই মিলের উৎপাদন থেকে প্রতি বছর প্রায় ৬০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হতো। স্বাধীনতার আগে ১৯৭০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত মিলটি ১৯ বছরে লোকসান দেয় মাত্র ২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। ১৯৭৪ সালের ২৬ মার্চ রাষ্ট্রপতি আদেশবলে আদমজী জুটমিল জাতীয়করণ করে জুটমিল কর্পোরেশনের হাতে ন্যস্ত করা হয়। ১৯৫১ সালে প্রতিষ্ঠিত আদমজীর বার্ষিক উৎপাদন ছিল ৭০ হাজার মেট্রিক টন। যার বিক্রয় মূল্য ছিল আনুমানিক ২১০ কোটি টাকা। মিলটিতে তৎকালে ২৪ হাজার ৯১৬ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিক চাকরি করতেন। মিলটি বন্ধ করার সময় কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের ৩৫ কোটি ৭৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়। সর্বশেষ ২০০০-০১ অর্থবছরে এই মিলের লোকসান দেখানো হয়েছিল ৫৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।

বন্ধ হয়ে যাওয়া আদমজী জুট মিলের ২নং ইউনিট চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নারায়ণগঞ্জের ইসদাইরস্থ ওসমানী পৌর স্টেডিয়ামে আওয়ামী লীগের সমাবেশে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আদমজী জুট মিল পুনরায় চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ২০১২ সালের ১৭ মার্চ সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড়ে ‘জর্জেট জামদানি শাড়ি পল্লী’ মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া জানিয়েছিলেন, ‘বন্ধ হয়ে যাওয়া আদমজী জুট মিলের ২নং ইউনিট চালুর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে। সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’ সরকারের বন্ধ কলকারখানা চালুকরণ নীতিমালার আওতায় বন্ধ আদমজী জুটমিলের ২নং ইউনিটের স্থানে ৫০ তাত বিশিষ্ট একটি অত্যাধুনিক ডাইভারসিফাইড প্রোডাক্ট তৈরির মিল স্থাপন এবং মনোয়ারা জুট মিলকে টিস্যু পেপার মিলে রূপান্তরের পরিকল্পনা ছিল সরকারের। তবে আদমজী জুট মিলের ২নং ইউনিটটি আর চালুর কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।

এশিয়ার বৃহত্তম পাটকল আদমজী জুট মিল বন্ধ হওয়ার কয়েক বছরের ব্যবধানে নারায়ণগঞ্জে বন্ধ হয়ে যায়, আরো অন্তত ১০টি পাটকল। বন্ধ হয়ে পড়া জুট মিলগুলোর মধ্যে রয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জে অবস্থিত তাজ জুট প্যাকিং কোম্পানী, প্রাইম জুটেক্স, শীতলক্ষ্যার পূর্বতীরে সোনাকান্দার সারোয়ার জুট মিল, নবীগঞ্জে জামাল জুট মিল, উত্তর নদ্যার আমিন ব্রাদার্স জুট অ্যান্ড কোঃ, কাঁচপুর এলাকায় আনোয়ার জুট মিল, এলাইড জুট মিল, রূপগঞ্জে তারাব এলাকায় নিশান জুট মিল, গাউছিয়া জুট মিল, মাসরিকী জুট মিল। যেগুলোর অনেকগুলোর অবকাঠামোও বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আবার অবকাঠামো থাকলেও বিক্রি করে দেয়া হয়েছে মেশিনারীজ। ওই সকল জুট মিলের লাখো শ্রমিকের কান্না আজো থামেনি। অনেক মিলের অবকাঠামো ব্যবহৃত হচ্ছে গোডাউন হিসেবে।