দেড় যুগে আদমজী ইপিজেড

অর্ধলক্ষাধিক শ্রমিকের কর্মসংস্থান

প্রকাশ : ০১ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  শরীফ সুমন, নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে অবস্থিত এশিয়ার বৃহত্তম পাটকল আদমজী জুট মিল বন্ধ ঘোষণার পর শ্রমঘন সেই ঐতিহ্যবাহী জনপদের শ্রমিকদের মধ্যে কান্নার রোল পড়ে গিয়েছিল। তবে কয়েক বছরের ব্যবধানে ঘুরে দাঁড়িয়েছে ঐতিহ্যবাহী এই জনপদ। আদমজী জুট মিলের জমিতে গড়ে উঠা আদমজী ইপিজেডে গত দেড় যুগে বিনিয়োগ, রপ্তানি ও কর্মসংস্থান বেড়েছে। মাত্র ৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ দিয়ে ইপিজেডটি যাত্রা করলেও প্রতি বছরেই বেড়েছে বিনিয়োগ। গত দেড় যুগে বিনিয়োগ হয়েছে ৫ হাজার ৬২২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রতি বছরেই বেড়েছে রপ্তানিও। দেড় যুগে সর্বমোট রপ্তানি হয়েছে ৪৪ হাজার ৭২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য।

শুরুতে মাত্র ১ হাজার ৬২৫ জনের কর্মসংস্থান হলেও দেড় যুগের ব্যবধানে সেখানে কর্মরত রয়েছেন ৫৬ হাজার ৬৬৭ জন শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তা। জানা গেছে, আদমজী জুট মিলটি ২০০২ সালের ৩০ জুন তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকার চিরতরে বন্ধ করে দেয়। এতে করে কান্নার রোল পড়ে শ্রমিকদের মধ্যে। তবে ২০০৬ সালের মার্চে আদমজীর ঐতিহ্যবাহী সেই শ্রম জনপদে গড়ে ওঠা ইপিজেডে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে পেতে শুরু করে। বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ জোন (বেপজার) ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, বন্ধ হয়ে যাওয়া আদমজী জুট মিলের ২৯২ দশমিক ৬২ একর জমির ওপর ইপিজেডটি স্থাপিত হয়েছে। মোট প্লটের সংখ্যা ২৭৩টি। প্রতিটি প্লটের আয়তন ২ হাজার বর্গমিটার। বর্তমানে এ ইপিজেডে ৫৪টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান উৎপাদনে রয়েছে, যার মধ্যে বিদেশি মালিকানাধীন ৩৬টি, চীন ও হংকংয়ের যৌথ মালিকানাধীন সাতটি ও বাংলাদেশি মালিকানাধীন ১একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বিদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি, যুক্তরাজ্যের একটি, মরিশাসের একটি, সিঙ্গাপুরের দুটি, নেদারল্যান্ডের একটি, দক্ষিণ কোরিয়ার দুটি, জাপানের ছয়টি, চীনের ছয়টি, ভারতের পাঁচটি, শ্রীলঙ্কার একটি, স্পেনের একটি, জার্মানির দুটি, ইউক্রেনের একটি, রোমানিয়ার একটি, কুয়েতের একটি, বিআর ভার্জিন আইল্যান্ডের একটি, মালয়েশিয়ার একটি, কানাডার একটি। হংকং ও চীনের যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান রয়েছে ছয়টি। এসব কারখানায় গার্মেন্টস, জিপার, কার্টন, হ্যাঙ্গার, লেভেল, ট্যাগ, জুতা, সোয়েটার, টেক্সটাইল, মোজা, জুয়েলারী, পলি ও ডায়িংসহ ইত্যাদি পণ্য উৎপাদন হচ্ছে। যা শতভাগ রপ্তানিযাগ্য পণ্য।

আদমজী ইপিজেড প্রতিষ্ঠার পর ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বিনিয়োগ হয়েছিল মাত্র ৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রতি বছরেই বেড়েছে বিনিয়োগ। ২০২১-২২ অর্থবছরে এ ইপিজেডে বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ৬৬৯ দশমিক ৫২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ ইপিজেডে বিনিয়োগ হয়েছে ৭২০ দশমিক ৮৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০০৬-০৭ অর্থবছরে বিদেশে রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ৯ দশমিক ৬৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য। প্রতি বছরেই বেড়েছে রপ্তানি। ২০২১-২২ অর্থবছরে ইপিজেড থেকে বিদেশে রপ্তানি হয়েছে ৬ হাজার ৮৬৬ দশমিক ১৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ইপিজেড থেকে বিদেশে রপ্তানি হয়েছে ৭ হাজার ৭৯৪ দশকি ৫২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে কর্মসংস্থান হয়েছিল মাত্র ১ হাজার ৬২৫ জনের। ২০২১-২২ অর্থবছরে ইপিজেডে চাকরি করেছেন ৬০ হাজার ৯৬ জন শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ইপিজেডে চাকরি করেছেন ৫৬ হাজার ৬৬৭ জন শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তা।

আদমজী ইপিজেডের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ আব্দুর রহমান মিয়া জানান, প্রতি বছরেই আমাদের ইপিজেডে দেশি বিদেশি বিনিয়োগ ও রপ্তানি বেড়েছে। সাম্প্রতিক সময়েও বেশ কয়েকটি কোম্পানির বিনিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বর্তমানে অর্ধলক্ষাধিক শ্রমিক কর্মচারী কর্মরত রয়েছে। বর্তমানে অত্র ইপিজেডে কোনো সমস্যা নেই।