ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

তারুণ্যনির্ভর কমিটিতে ঝুঁকছে বিএনপি

চলছে নানামুখী ষড়যন্ত্র
তারুণ্যনির্ভর কমিটিতে ঝুঁকছে বিএনপি

ব্যর্থদের বাদ দিয়ে তারুণ্যনির্ভর কমিটিতে ঝুঁকছে বিএনপি। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের সিনিয়র নেতাদের মতামত নিয়ে এরইমধ্যে দলের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদল করেছেন। দলের ভাইস চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় কমিটির ৪৫টি পদে কোথাও রদবদল, কোথাও আবার নতুন করে কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা দেওয়া হয়েছে নেতাদের। এদের মধ্যে বেশিরভাগই দলের ত্যাগী ও বিএনপির প্রভাবশালী নেতা। এছাড়াও দলের স্থায়ী কমিটির শূন্যপদসহ কেন্দ্রীয় কমিটিতে শূন্যপদ পূরণে কাজ চলছে বলে দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে। কিন্তু যারা বিএনপিকে শক্তিশালী চায় না বা আন্দোলন সংগ্রামে যারা নিজেদের সরিয়ে রেখে নিরাপদে ছিল এমন একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠী এরই মধ্যে দলে বিভেদ তৈরির চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি দলের রদবদল নিয়ে তারা নতুন নুতন ষড়যন্ত্রও করছে। বিএনপির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, বিগত আন্দোলনে কেন্দ্রীয় ও মাঠপর্যায়ের নেতাদের কার কী ভূমিকা ছিল, সে বিষয়ে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন যায় লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে। সেটির ভিত্তিতেই তিনি কমিটি পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নেন। তবে এ লক্ষ্যে তারেক রহমান কিছুদিন ধরে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করেন। দলের দায়িত্বশীল নেতারা মনে করছেন- দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে দল ঐক্যবদ্ধ। কিছু দুস্কৃতকারী অতীতেও দল ভাঙার চেষ্টা করেছে তারা কিছুই করতে পারেনি। ভবিষ্যতেও পারবে না।

দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা গণমাধ্যমকে বলেন, ১/১১তে আপনারা দেখেছেন জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তারাই ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন। বিগত ১৭ বছরে সরকার বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা নিপীড়ন করেও কোনো ক্ষতি করতে পারেনি। এবারও পারবে না।

সূত্রমতে, মেয়াদোত্তীর্ণ দলের জেলা, মহানগর এবং কেন্দ্রীয় অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত করে ব্যর্থদের বাদ দিয়ে তারুণ্যনির্ভর কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে একযোগে বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, চট্টগ্রাম এবং বরিশাল মহানগর এবং কেন্দ্রীয় যুবদলের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এদিকে বিএনপির অন্তত আরো কয়েকটি জেলা কমিটি যে কোনো সময় ভেঙে দেয়ারও আভাস দিয়েছে দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব।

অন্যদিকে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় কেন্দ্রীয় মহিলা দল, তাঁতী দল, মৎস্যজীবী দল ও শ্রমিক দলের কমিটিও ভেঙে নতুন কমিটি দেওয়ার ঘোষণার চিন্তা-ভাবনা চলছে। এছাড়া জাসাসেরও নতুন কমিটি যে কোনো সময় ঘোষণা হবে। পাশাপাশি সম্প্রতি ঘোষিত ছাত্রদলের ৭ সদস্যের কমিটির আকারও বাড়িয়ে ২৬০ সদস্যের করা হয়েছে।

দলের সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, দলের আস্থাভাজন, শারীরিকভাবে সুস্থ, আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে ভূমিকা রাখতে পারবে এবং রাজনৈতিকভাবে সচেতন- এমন নেতাদের নতুন কমিটিতে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আর যেসব কমিটির মেয়াদ আছে; কিন্তু সভাপতি অথবা সাধারণ সম্পাদক বিগত আন্দোলনের মাঠে ছিলেন না, তাদের কমিটি থেকে সরিয়ে নতুনদের দায়িত্ব দিয়ে কমিটি পুনর্গঠন করা হবে। সে অনুযায়ী একটি তালিকাও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে দেওয়া হয়েছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৭ জানুয়ারি নির্বাচন ঘিরে সরকার পতনের আন্দোলনে কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের কার কী সফলতাণ্ডব্যর্থতা ছিল, তা নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছিল। ওই প্রতিবেদন যাচাই-বাছাইয়ের পর দল পুনর্গঠনে হাত দেওয়া হয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় গণমাধ্যমকে বলেন, কমিটি পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত আগেই ছিল, এখন তা বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এটি একটি সাংগঠনিক প্রক্রিয়া, এর বেশি কিছু নয়। তিনি বলেন, কমিটি গঠনে যোগ্য ও ত্যাগীদের মূল্যায়নের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আশা করি, যোগ্য ও ত্যাগীরা নেতৃত্বে আসবেন।

দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা জানান, আন্দোলনে সফলতাণ্ডব্যর্থতা সংক্রান্ত দলের প্রতিবেদনকে অনুসরণ করে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটি, জাতীয় নির্বাহী কমিটি, সারা দেশের জেলা ও মহানগর কমিটি এবং কেন্দ্রীয় অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠন-সংক্রান্ত কাজ শুরু করেছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের নেতাদের মতামতও নেওয়া হয়েছে। বিএনপির দায়িত্বশীল এক নেতা জানান, কমিটি ভেঙে দেওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে দলের মহাসচিবসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতাকে জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, বড় রাজনৈতিক দলের ভেতর পরস্পরের বিরুদ্ধে দোষারোপ সব সময় ছিল, এখনও আছে। কারো বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেন। যারা দলে গুরুত্বপূর্ণ পদপদবি পান না, তারাও ক্ষোভ থেকে কিছু কথাবার্তা বলবেন, এটাই স্বাভাবিক। তবে আবার কিছুদিন পর তা ঠিক হয়ে যায়। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যোগ্য ও ত্যাগী নেতাকে যথাযথ মূল্যায়ন করছেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত