ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাহারের দাবি

৩৫ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মবিরতি

৩৫ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মবিরতি

সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয় স্কিমের’ প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সুপার গ্রেডে অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তনের দাবিতে আজ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালিত হচ্ছে। গতকাল থেকে শিক্ষকরা ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এতে অচল হয়ে পড়েছে দেশে ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। গত রোববার সংবাদ সম্মেলন করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির মোর্চা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণা দেন। এ ঘোষণার পর আলাদাভাবে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। ফেডারেশনে কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে এরইমধ্যে ৯টি কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। সেখানে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনসহ সব ধরনের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। একইসঙ্গে আজ দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত কলাভবন ফটকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন তারা। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে শিক্ষক সমিতি অংশ নেবে না বলে জানিয়েছেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ধরনের অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। এদিকে শিক্ষকদের কর্মবিরতির কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব পরীক্ষা স্থগিত করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. হিমাদ্রি শেখর চক্রবর্তী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে কলাভবন ও কার্জন হল কেন্দ্রের পরীক্ষাগুলো বর্জন করা হয়। তিনি জানান, অন্যান্য পরীক্ষাকেন্দ্রগুলো স্ব স্ব অনুষদ, ইনস্টিটিউটের অধীন। যেহেতু সব শিক্ষক কর্মবিরতিতে, তাই এটি বলা যায় সেখানেও পরীক্ষা হবে না। সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়ে ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে না বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও। ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন, বিভিন্ন কমিটির সভা বর্জন, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি বন্ধসহ ১০টি কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তারা। একইসঙ্গে কর্মসূচি চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সিল ভবনের নিচে সকাল ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন তারা। শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভুঁইয়া জানান, আমরা সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। তারা সবাই কর্মসূচি পালন করবে।

এদিকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক আখতারুল ইসলাম বলেন, আমরা এই আন্দোলন নিজেদের জন্য করছি না। বরং আগামী প্রজন্মের জন্য করছি। দেশে এত দুর্নীতির কথা আমরা শুনি। সেসব কী শিক্ষকরা করেছে? তাহলে কেন তাদের সুবিধা বাতিল করা হয়েছে। এই প্রত্যয় স্কিম বৈষম্যমূলক।

উল্লেখ্য, গত ১৩ মার্চ সর্বজনীন পেনশন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে ‘প্রত্যয় স্কিম’ এ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ ব্যবস্থাকে একটি বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা বলে শুরু থেকেই বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠনগুলো। দাবি আদায়ে কিছু কর্মসূচি পালনের পর গত ৪ জুন অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষকরা। এরপরও দাবির বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় গত ২৫, ২৬ ও ২৭ জুন অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেন তারা। পরে ৩০ জুন পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করা হয়।

চবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এ বি এম আবু নোমান বলেন, আমরা পেনশন স্কিমের বিরোধিতা করছি না। আমাদের দাবি পেনশন স্কিম থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বাতিল করা হোক। শিক্ষকদেরকে বাতিল না করলে শিক্ষকগণ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্লাস স্থগিত রাখা হয়েছে। স্থগিত রাখা হয়েছে সব ধরনের পরীক্ষা। ছাত্রদের ক্লাস পরীক্ষার ক্ষতিপূরণ নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ছাত্র উপদেষ্টা আলী আজগর চৌধুরী আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের কোনো ক্ষতি চাই না। করোনার সময় যেমন আমরা অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে ছাত্রদের ক্ষতি পূরণ করেছি, সর্বাত্মক কর্মসূচির কারণে ছাত্রদের যা ক্ষতি হবে তা আমরা অনলাইনে ক্লাসের মাধ্যমে পূরণ করব। কর্মচারী সমিতির সভাপতি সুমন মানুম বলেন, প্রত্যয় স্কিম থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বাতিলের জন্য আমাদের আন্দোলন। আগামীকাল থেকে আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি চলবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত