ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কায় দেশ

এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি জেলায় লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি
ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কায় দেশ

বাংলাদেশে জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস এই সময়ে বর্ষা হয়ে থাকে। এই সময়ে প্রধান নদী ও উপনদীগুলো হিমালয়ের বরফগলা ও বৃষ্টিতে পানির উচ্চ প্রবাহে প্রবাহিত হয় এবং বন্যায় প্লাবিত হয়। চলতি বছরে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ বন্যা হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি জেলায় লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় পানি বাড়তে শুরু করেছে। আগস্টের আগে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশের ইতিহাসে ভয়াবহ রকমের বন্যা হয়েছে বেশ কয়েকবার। এরই মধ্যে ১৯৮৭, ১৯৮৮, ১৯৯৮, ২০০৪, ২০০৭, ২০১৭ ও ২০২২ সালে ভহাবহ বন্যার কবলে পরে দেশ। তবে, ১৯৮৮-এর বন্যা ছিল বাংলাদেশে সংঘটিত প্রলংকারী বন্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি ছিল এদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক ও ক্ষয়-ক্ষতিময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ।

জানা গেছে, বন্যায় প্রতি বছর বাংলাদেশের প্রায় ৫৫-৬০ শতাংশ জলমগ্ন হয় এবং ১ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের ক্ষতি হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টিপাতের অনিয়মিত ধরন, আকস্মিক বন্যার তীব্রতা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং হিমবাহ গলে যাওয়ার কারণে এই সমস্যার শিকড় অনেক গভীরে। গবেষণা বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের তীব্র প্রভাবের কারণে পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে খারাপের দিকে যাচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশ্বব্যাপী জরুরি ও বড় ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

ষষ্ঠবারের মতো ডুবেছে সিলেট নগর, ভোগান্তির শেষ নেই : কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি নামতে না পারায় চলতি বর্ষা মৌসুমে ষষ্ঠবারের মতো ডুবেছে সিলেট। নগরের বিভিন্ন স্থানে এর মধ্যেই জলাবদ্ধ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুরসহ সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোয় পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে।

আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, গত সোমবার সকাল ৬টা থেকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৭টা পর্যন্ত ২৫ ঘণ্টায় সিলেটে ২৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সিলেট নগরের বেশ কিছু এলাকার সড়ক ও বাসাবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে নগরের মির্জাজাঙ্গাল, মণিপুরি রাজবাড়ি, তালতলা, জামতলা, কুয়ারপা শিবগঞ্জ, শাহজালাল উপশহর, হাওয়াপাড়া, যতরপুর, মেন্দিবাগ, তোপখানা, মজুমদারি, চৌকিদেখী, দক্ষিণ সুরমাসহ বেশ কিছু এলাকায় জলাবদ্ধ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরের বাসিন্দারা।

নগরের জামতলা এলাকার বাসিন্দা হিমাংশু চন্দ্র শীল বলেন, এ নিয়ে চলতি মৌসুমে তার ঘরে কয় দফা পানি উঠেছে মনে নেই তার। প্রতিবার পানি ওঠার পর ভাড়া ঘরটি ছেড়ে স্বজনদের বাড়িতে চলে যান।

নগরের শাহজালাল উপশহরের বাসিন্দা নাব্বির হোসেন বলেন, উপশহরে কিছু হলেই পানি উঠে যায়। বাসাবাড়ির নিচতলায় থাকা যাচ্ছে না। এর জন্য দ্রুত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, উপশহরে প্রধান সড়ক পর্যন্ত পানিতে তলিয়েছে। বাসাবাড়ির অবস্থা আরো খারাপ।

এদিকে সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারার ৪টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট সূত্রে জানা গেছে, সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। নদীর ওই পয়েন্টে আজ সকাল ৯টায় বিপৎসীমার ১১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। এ ছাড়া কুশিয়ারা নদীর অমলশিদ, শেওলা, শেরপুর ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। সারী নদীর পানি গোয়াইনঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে।

সিলেটে এর আগে গত ২৮ মে থেকে ভারি বৃষ্টির ফলে প্রথম দফায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরে গত ১৬ জুন আবার বন্যা পরিস্থিতিতে দুর্ভোগে পড়েন সিলেটের বাসিন্দারা। সব মিলিয়ে চলতি মৌসুমে আজ পর্যন্ত ষষ্ঠবারের মতো জলাবদ্ধ পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন সিলেট নগরের বাসিন্দারা।

পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ভারি বৃষ্টিপাত সিলেটের জন্য শঙ্কার। চেরাপুঞ্জিতে গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গত ৪৮ ঘণ্টায় ৫০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের খবর পাওয়া গেছে। সেখানে আরো বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া সিলেটেও ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। তিনি বলেন, ভারতের পাহাড়ি ঢলের কারণে নদনদীর পানি বৃদ্ধি পায়। এর আগে দুই দফা পাহাড়ি ঢল এবং সিলেটে ভারি বৃষ্টির কারণে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। কয়েক দিন বৃষ্টি না থাকায় পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাচ্ছিল। এখন আবার বন্যা পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে।

বন্যায় ফেনীর দুই উপজেলায় এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত : তিন দিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার কারণে ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় আজ মঙ্গলবারের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) শফিকুল রিদওয়ান আরমান শাকিল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, গত তিন দিন টানা বৃষ্টি ও ভারতের ত্রিপুরার উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফুলগাজী ও পরশুরামের মুহুরী নদীর পানি উপচে যায়। এতে বেড়িবাঁধের পাঁচটি স্থান ভেঙে আটটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পরশুরাম উপজেলার দক্ষিণ শালদর এলাকায় একটি, ফুলগাজী উপজেলার উত্তর দৌলতপুর গ্রাম এলাকায় তিনটি ও ঘনিয়ামোড়া এলাকায় একটি স্থানে বাঁধ ভেঙে গেছে। এগুলো হলো- শালদর, মালিপাথর, নিলক্ষী, উত্তর দৌলতপুর, দক্ষিণ দৌলতপুর, পশ্চিম ঘনিয়ামোড়া, কিসমত ঘনিয়ামোড়া ও মণিপুর। বন্যার পানিতে চলাচলের অসুবিধা হওয়ায় সবচেয়ে বেশি বন্যাকবলিত দুই উপজেলায় পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

গ্রামীণ সড়ক ও জমির ফসল তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদের পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। গতকাল সকাল ১০টা পর্যন্ত মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে ফুলগাজী উপজেলা সদর বাজারে পানি ঢুকছে। এ তথ্য নিশ্চিত করে ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহরিয়ার হাসান বলেন, গত তিন দিন টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের চাপে মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। এতে মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধের পাঁচটি স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। পানি কমলেই বাঁধের ভাঙন মেরামত শুরু করা হবে।

ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া ভূঁইয়া জানান, আসন্ন দুর্যোগ মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি আছে।

সুনামগঞ্জে দিনভর ভারি বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, আতঙ্কিত বাসিন্দারা : সুনামগঞ্জে দিনভর ভারি বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতির আবারো অবনতি হয়েছে। গত সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে বৃষ্টি আরো বেড়েছে। একইসঙ্গে ব্যাপক পরিমাণে উজানের পাহাড়ি ঢল নামছে। গত সোমবার রাত ৯টায় সুরমা নদীর পানি পৌর শহরের কাছে বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। রাতের প্রবল বর্ষণ অনেক মানুষকে আতঙ্কিত করে তোলে। রাত সাড়ে ১০টায় পৌর বিপণি ব্যবসায়ীদের দোকানপাটের জিনিসপত্র রক্ষায় তোড়জোড় করতে দেখা গেছে। অনেকেই নিজের ঘরে জিনিসপত্র কিছুটা উঁচু স্থানে রাখার ব্যবস্থা করছেন। ব্যবসায়ী রিপন শেখ বলেন, ‘ভাই কোনো ভরসা নাই। যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে যেকোনো সময় পানি আসতে পারে। দোকানে পানি ঢুকলে তো সব শেষ। তাই চেষ্টা করছি জিনিসপত্র পানি থেকে রক্ষার।’

পাহাড়ি ঢলের পানি এবার জেলার তাহিরপুর উপজেলার জাদুকাটা নদ, সীমান্তের কলাগাঁও, বড়ছড়া, লাকমা ছড়া হয়ে নামছে। উজানের ঢলে গত সোমবার আবারো জেলার সদর, তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। অনেক রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে। মানুষের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করছে। পৌর শহরের উত্তর আরপিননগর, নবীনগর, ওয়েজখালী, মল্লিকপুর, বড়পাড়া এলাকায় সুরমা নদীর পানি তীর উপচে রাস্তাঘাট ও মানুষের বাড়িঘরের আঙিনায় প্রবেশ করেছে। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা দু’একটি স্কুলে বিকালে কিছু পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মফিজুর রহমান এসব পরিবারের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী দিয়েছেন। তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আফতাব উদ্দিন জানান, দুই দিন ধরে তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়ক বিচ্ছিন্ন। অনেক রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। যেভাবে পানি বাড়ছে, তাতে মানুষের বাড়িঘরেও প্রবেশ করবে।

পাহাড়ি ঢলের পানিতে আবারো প্লাবিত সুনামগঞ্জের তাহিরপুর-বিশ্বম্ভরপুর সড়ক। এতে সরাসরি যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। গতকাল সকালে সড়কের দুর্গাপুর এলাকায় পাহাড়ি ঢলের পানিতে আবারো প্লাবিত সুনামগঞ্জের তাহিরপুর-বিশ্বম্ভরপুর সড়ক। এতে সরাসরি যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে।

কলমাকান্দায় উব্দাখালী নদীর পানি আবার বিপৎসীমার ওপরে : নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় গত তিন দিনের অব্যাহত ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে আবার উব্দাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উব্দাখালী নদী ছাড়াও উপজেলার গণেশ্বরী, মহাদেও, বাখলা, মঙ্গেলশ্বরী ও বৈঠাখালী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে। বেশ কিছু গ্রামীণ সড়ক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে বন্যার পানি উঠছে। এতে লোকজনের মধ্যে আবারো বন্যার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নেত্রকোনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার থেকে অব্যাহত ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উব্দাখালীসহ সব কটি নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করে। গত সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে দেখা যায়, উব্দাখালী নদীর ডাকবাংলো পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ৬ দশমিক ৫৫ মিটার। উপজেলার কৈলাটি, বড়খাপন, পোগলা, খারনৈ, রংছাতি, কলমাকান্দা সদরসহ সাতটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের বেশ কিছু গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। কলমাকান্দা-বরুয়াকোনা, বাহাদুরকান্দা-বাসাউড়া, ঘোষপাড়া-হরিণধরা, কলমাকান্দা-সাঈদপাড়া, মন্তলা-ইসবপুর, গোবিন্দপুর-রানীগাঁও, উদয়পুর-বড়খাপনসহ আরও বেশ কিছু গ্রামীণ সড়ক স্থানে স্থানে পানিতে ডুবে গেছে। এ ছাড়া খলা, বাসাউড়া, বাহাদুরকান্দা, ডুবিয়ারকোনা, ধীতপুরসহ ২৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে পানি ঢুকেছে।

পাউবো নেত্রকোনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারওয়ার জাহান জানান, উব্দাখালী নদীর পানি অব্যাহত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নদীর কলমাকান্দা ডাকবাংলো পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে সোমেশ্বরী নদীর বিজয়পুর পয়েন্টে পানি এখনো বিপৎসীমার ৪ দশমিক ৩৬ মিটার নিচে আছে। ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ১৫ দশমিক ৮৯ মিটার। নদীর দুর্গাপুর পয়েন্টে বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৫৫ মিটার, সেখানেও পানি বিপৎসীমার ১ দশমিক ৫৬ মিটার নিচে আছে। কংস নদের পূর্বধলার জারিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১ দশমিক ৪৭ সেন্টিমিটার নিচে এবং ধুন নদের খালিয়াজুরি পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জারিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমা ৯ দশমিক ৭৫ মিটার এবং খালিয়াজুরি পয়েন্টে বিপৎসীমা ৬ দশমিক ৫৫ মিটার। তবে আশা করা যাচ্ছে, ভারি বৃষ্টি না হলে বন্যার পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ঢলের পানিতে উপজেলার কিছু নিম্নাঞ্চল আবারো নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে। আমরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামে খোঁজখবর নিচ্ছি। এখনো কেউ পানিবন্দী হয়নি। জরুরি মুঠোফোন নম্বর খোলা হয়েছে। শুকনা খাবারসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ প্রস্তুত রাখা আছে।’

তিস্তার পানি ৩০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত : নীলফামারীর ডিমলায় গত কয়েক দিনের ভারি বর্ষণ ও উজানের সিকিমের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ৫১.৮৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। পানি বৃদ্ধি পেয়ে কিছু এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে নদীর তীরবর্তী এলাকা উপজেলার খগা খড়িবাড়ী, খালিশা চাপানীর বাইশপুকুর, টেপা খড়িবাড়ী, ঝুনাগাছ চাপানী, পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন সহ বেশকিছু এলাকায়। নদীর আশপাশের পরিবারগুলো পানিবন্দিসহ কৃষিখেত তলিয়ে রয়েছে পানির নিচে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৫১.৮৫ সেন্টিমিটার। যা বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পানি আরো বৃদ্ধি পেতে পারে বলে ধারণা করছে ডালিয়া পাউবো। পানি নিয়ন্ত্রণ করতে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। টেপাখড়িবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহিন বলেন, গত কয়েক দিনের ভারি বর্ষণে বন্যা দেখা দেওয়ার কারণে এলাকার পূর্বখড়িবাড়ী ও চরখড়িবাড়ী এলাকার একটি বালির বাঁধ ভেঙে গেছে, যা স্থানীয়ভাবে আমরা মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা-উদদৌল্লা বলেন, তিস্তা নদীর পানি গত সোমবার রাত থেকে বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তা ব্যারেজের জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। তিস্তাপাড়ের মানুষকে সতর্ক করার পাশাপাশি সকল প্রকার দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত আছি বলে তিনি জানান।

এদিকে পানিবৃদ্ধি পাওয়ায় সার্বক্ষণিক এলাকার খোঁজখবর নিচ্ছেন ইউএনও উম্মে সালমা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মেজবাহুর রহমান।

ঝিনাইগাতীতে পাহাড়ী ঢলের পানি বিপৎসীমার উপরে : গত কয়েক দিনে অবিরাম বর্ষণ এবং ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি তোড়ে শেরপুরের ঝিনাইগাতীর মহারশি নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে রামেরকুড়া, খৈলকুড়া, ঝিনাইগাতীসহ কয়েক স্থানে বাঁধ ভেঙে কমপক্ষে ৩০ গ্রাম পানিবন্দি হয়ে পরেছে। ঢলের পানি প্রবেশ করেছে উপজেলা শহরের প্রধান বাজারসহ বিভিন্ন অফিস ও বাড়িঘরে। এতে বিপাকে পরেছে সাধারণ মানুষ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ীর ভোগাই নদীর খালভাঙ্গা এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। অপরদিকে শ্রীবরদী উপজেলার সোমেশ্বরী নদীতেও ব্যাপকভাবে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ঝিনাইগাতী শহরসহ ভাটি এলাকার কমপক্ষে ৩০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পরেছে। সেই সঙ্গে পানিতে ডুবে গেছে অনেক পুকুর, বিভিন্ন সবজিখেত ও বীজতলা। স্থানীয়রা জানান, মহারশি নদীর ঝিনাইগাতী ব্রিজপাড় থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকা অবৈধভাবে দখল করে বসতি স্থাপন করা নদীর নাব্যতা কমে গেছে। এছাড়া নদীটি খনন করে নাব্য ফিরিয়ে না আনায় প্রতিবছর সদর বাজারসহ পুরো এলাকা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এলাকার সচেতন মহলের দাবি নদীর বুকে গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদীর নাব্য ফিরিয়ে দেয়াসহ স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হোক। এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল কবীর রাসেল, সহকারী কমিশনার (ভূমি) অনিন্দিতা রানী ভৌমিক, উপজেলা প্রকৌশলী শুভ বসাক, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান, সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহাদৎ হোসেন, ধানশাইল ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলামসহ অন্যান্যরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আশরাফুল কবীর রাসেল জানান, মহারশি নদীতে বেড়িবাঁধ নির্মাণের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসনের কাছে সবধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। স্ব-স্ব ইউনিয়নে চেয়ারম্যানের মাধ্যমে পানিবন্দি মানুষের মাঝে শুকনো খাবার দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরবর্তীতে বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে আর্থিক অনুদান ও ঢেউটিন প্রদান করা হবে বলেও জানান তিনি।

জুলাইয়ে কয়েক স্থানে বন্যার পূর্বাভাস : জুন মাসে দেশের আট বিভাগের মধ্যে ঢাকাসহ পাঁচটিতেই স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে কম বৃষ্টি হয়েছে বরিশাল বিভাগে। তবে জুলাই মাসের শুরু থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে শুরু হয়েছে বৃষ্টি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া জুলাই মাসের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এ মাসে ভারি বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন স্থানে স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদি বন্যা হতে পারে। আবার এ মাসে এক থেকে দুটি মৃদু তাপপ্রবাহও বয়ে যেতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তর গত সোমবার জুলাই মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস দেয়। সেখানে বলা হয়, এ মাসে সামগ্রকিভাবে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। এ মাসে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে একটি মৌসুমি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। জুলাই মাসে ভারি বৃষ্টির কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল, উত্তর-মধ্যাঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলের কিছু কিছু স্থানে স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। আবার দক্ষিণ-পূর্বের পার্বত্য এলাকার কিছু কিছু স্থানে স্বল্পমেয়াদি আকস্মিক বন্যা হতে পারে। এ বর্ষার মধ্যে দেশের কিছু এলাকায় এক থেকে দুটি বিচ্ছিন্নভাবে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত