ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চলছে বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের পুনর্গঠন

পদ পেতে নেতাদের দৌড়ঝাঁপ

নিজেদের অবস্থান জানান দিতে শোডাউন
পদ পেতে নেতাদের দৌড়ঝাঁপ

দল পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে ঈদুল আজহার ঠিক আগে জাতীয়তাবাদী যুবদল ও ঢাকা মহানগর বিএনপিসহ একাধিক ইউনিটের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। ঈদের পরপরই সেখানে কমিটি গঠনের সম্ভাবনা থাকলেও গত গত তিন সপ্তাহেও নতুন কমিটি হয়নি। দলের দায়িত্বশীল কয়েকজন নেতা বলছেন, ঈদুল আজহার পরই নতুন কমিটি ঘোষণার সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু ঈদের পর দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ায় কমিটিকেন্দ্রিক তৎপরতা পিছিয়ে পড়ে। তাছাড়া বিএনপির দুই তিনজন সিনিয়র নেতা তাদের বলয়ের লোক ঢুকাতে নানা তৎপরতা শুরু করায় কদল পুনর্গঠনে কিছু জটিলতা তৈরি হয়েছে।

জানা গেছে, তরুণদের দিয়ে নতুন কমিটি গঠনের চিন্তাভাবনা রয়েছে বিএনপির হাইকমান্ডের। দলের এমন মনোভাব জেনে মহানগরের রাজনীতিতে সক্রিয় সিনিয়র নেতারাও কমিটিতে পদ পেতে শেষ মুহূর্তে তৎপর হয়ে উঠেছেন। এদিকে গত শনিবারের বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে রাজধানীতে বড় ধরনের জমায়েত করে দলটি। এ সমাবেশের আগে বিলুপ্তকৃত ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ, যুবদল এবং ছাত্রদলের ঢাকা মহানগর কমিটির প্রস্তুতি সভায় বারবার বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, এ সমাবেশ একদিকে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির; অন্যদিকে নতুন নেতা বাছাই করার। নেতার পারফরম্যান্সের ওপর ভিত্তি করেই নতুন পদ দেওয়া হতে পারে। এজন্য পদপ্রত্যাশীরা নিজ নিজ অঞ্চল থেকে এবং নিজস্ব কর্মী বাহিনী নিয়ে বড় ধরনের শোডাউন করেছেন।

সরেজমিন দেখা যায়, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির পদ প্রত্যাশী আব্দুল কাদির ভূইয়া জুয়েল নিজস্ব কর্মী বাহিনী নিয়ে বিশাল শোডাউন করেছেন। শোডাউনে পিছিয়ে নেই সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু। তিনিও বড় ধরনের শোডাউন করেছেন। এছাড়া পদ প্রত্যাশী হাবিবুর রশিদ হাবিব, নবী উল্লাহ নবী, সালাউদ্দিন আহমেদ, আ ন ম সাইফুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনের অনুসারীসহ অনেকেই জনবল নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ডাকা সমাবেশে।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির পদ প্রত্যাশী সদ্য কারামুক্ত নেতা সাইফুল আলম নিরব বিশাল কর্মী বাহিনী নিয়ে উপস্থিত হোন সমাবেশে। এছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সদস্য সচিব আমিনুল হকও বড় ধরনের শোডাউন করেন। এছাড়া মহানগর বিএনপি নেতা আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, শামসুল হক, মোয়াজ্জেম হোসেন মতি, এসএম জাহাঙ্গীর. তালুকদার রুমিসহ অনেককেই নিজস্ব কর্মী বাহিনী নিয়ে সমাবেশে আসতে দেখা গেছে।

যুবদলের সভাপতি প্রার্থী এবং সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না বিশাল একটি মিছিল নিয়ে সমাবেশে আসেন। এছাড়া যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম নয়নও বিশাল কর্মীবহর নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন। এছাড়া শফিকুল ইসলাম মিল্টন, মামুন হাসানও নিজস্ব কর্মী বাহিনী নিয়ে সমাবেশস্থলে আসেন।

এছাড়াও নেতৃত্বে আসতে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে বড় ধরনের শোডাউন করেছে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন। তিনি কয়েক সহস্রাধিক নেতাকর্মীর একটি মিছিলের নেতৃত্ব দিয়ে সমাবেশস্থলে আসেন। এছাড়া ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আকরামুল হক মিন্টু, কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাইফ মাহমুদ জুয়েল এবং ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আমান উল্লাহ আমান নিজস্ব কর্মী বাহিনী নিয়ে শোডাউন করেন সমাবেশে। এসব পদ প্রত্যাশী ছাড়াও ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি আবু আশফাক আলাদাভাবে বিশাল দুটি মিছিলের নেতৃত্ব দেন। গাজীপুর থেকে কাজী সায়েদুল আলম বাবুল, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম মঞ্জুরুল করিম রনির পক্ষে বিশাল মিছিল সমাবেশে যোগ দেয়। জেলা বিএনপির নেতৃত্বেও একটি বিশাল মিছিল সমাবেশে যোগ দিতে দেখা যায়।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মেয়াদোত্তীর্ণ দলের জেলা, মহানগর এবং কেন্দ্রীয় অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত করে ব্যর্থদের বাদ দিয়ে তারুণ্যনির্ভর কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে একযোগে বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, চট্টগ্রাম এবং বরিশাল মহানগর এবং কেন্দ্রীয় যুবদলের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এদিকে বিএনপির অন্তত আরো কয়েকটি জেলা কমিটি যে কোনো সময় ভেঙে দেওয়ারও আভাস দিয়েছে দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব।

এদিকে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় কেন্দ্রীয় মহিলা দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, তাঁতী দল, মৎস্যজীবী দল, জাসাস ও শ্রমিক দলের কমিটিও ভেঙে নতুন কমিটি দেওয়ার ঘোষণার চিন্তাধারা চলছে। পাশাপাশি সম্প্রতি ঘোষিত ছাত্রদলের ৭ সদস্যের কমিটির আকারও বাড়িয়ে ২৬০ সদস্যের করা হয়েছে।

বিএনপির হাইকমান্ড এখন পর্যন্ত তরুণ নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রাখতে চায় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। কমিটিতে সম্ভাব্য নেতৃত্ব নিয়ে সিনিয়র নেতাদেরও পরামর্শ নিচ্ছে বিএনপি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৭ জানুয়ারি নির্বাচন ঘিরে সরকার পতনের আন্দোলনে কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের কার কী সফলতাণ্ডব্যর্থতা ছিল, তা নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছিল। ওই প্রতিবেদন যাচাই-বাছাইয়ের পর দল পুনর্গঠনে হাত দেওয়া হয়েছে। তবে দল পুনর্গঠন নিয়ে এরই মধ্যে কয়েকজন নেতা গণমাধ্যমে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। তাদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে বলে তারা মনে করেন।

দলের একজন যুগ্ম মহাসচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ বিষয়ে বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে দল ঐক্যবদ্ধ। ১/১১তে আপনারা দেখেছেন জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র হয়েছে; কিন্তু দলের ক্ষতি করতে পারেনি। বিগত ১৭ বছরে সরকার বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা নিপীড়ন করেও কোনো ক্ষতি করতে পারেনি। এবারও পারবে না।

দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা জানান, আন্দোলনে সফলতাণ্ডব্যর্থতা সংক্রান্ত দলের প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। সে প্রতিবেদনকে অনুসরণ করে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটি, জাতীয় নির্বাহী কমিটি, সারাদেশের জেলা ও মহানগর কমিটি এবং কেন্দ্রীয় অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠন-সংক্রান্ত কাজ শুরু করেছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের নেতাদের মতামতও নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, বড় রাজনৈতিক দলের ভেতর পরস্পরের বিরুদ্ধে দোষারোপ সব সময় ছিল, এখনও আছে। কারও বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেন। যারা দলে গুরুত্বপূর্ণ পদপদবি পান না, তারাও ক্ষোভ থেকে কিছু কথাবার্তা বলবেন- এটাই স্বাভাবিক। তবে আবার কিছুদিন পর তা ঠিক হয়ে যায়। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যোগ্য ও ত্যাগী নেতাকে যথাযথ মূল্যায়ন করছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেক গুজব ছড়ানো হয়, যা সত্য নয়।

দলের নতুন ইউনিট কমিটির নেতৃত্ব এবং পদায়ন প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি একটি আদর্শিক দল। আর জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান আমাদের আদর্শ। ১০ হাজার মাইল দূরে থাকলেও তিনি নেতাদের অতীত ত্যাগ, সামাজিক অবস্থান এবং নিজস্ব বলয়কে প্রাধান্য দিয়ে দলের সিনিয়র নেতাদের সাথে সমন্বয় করেই নেতৃত্ব নির্ধারণ করেন। এ নিয়ে কোনো বিরোধ নেই, থাকতে পারে না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত