ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

‘কোটা না মেধা- মেধা মেধা’ স্লোগান

ছয় ঘণ্টা প্রকম্পিত ছিল শাহবাগ

ছয় ঘণ্টা প্রকম্পিত ছিল শাহবাগ

সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের আন্দোলনে গতকাল ছয় ঘণ্টা অবরুদ্ধ ছিল রাজধানীর শাহবাগ মোড়। ‘কোটা না মেধা মেধা মেধা’- স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠেছিল শাহবাগের আকাশ-বাতাস। সরেজমিন দেখা যায়, সকাল ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হন আন্দোলনকারী শিার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। এই কর্মসূচিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত রাজধানীর সাত সরকারি কলেজ এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন রাজধানীর বিভিন্ন শিাপ্রতিষ্ঠানের শিার্থীরা অংশ নেন। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে বের হওয়া মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে শাহবাগে এসে থামে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে। তারা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখেন। শাহবাগ মোড়ে আগে থেকেই বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। বিকেল ৬টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত প্রায় ৬ ঘণ্টা তারা শাহবাগ মোড়ের সড়কে অবস্থান করেন। শিার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের অবরোধের কারণে শাহবাগ মোড় দিয়ে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। এতে শাহবাগ ও আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। শিার্থীরা সড়কে অবস্থান নিয়ে তাদের দাবির পক্ষে চাকরিতে কোটাবিরোধী নানা স্লোগান দেন। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যেও থেকে থাকেননি আন্দোলনকারীরা। অনেককেই খেলছেন ফুটবল, কেউবা আবার দলগতভাবে লুডু খেলায় বসে পড়েন শাহবাগের রাস্তায়। স্লোগানের ফাঁকে প্রতিবাদী গানও পরিবেশন করা হয়, পাশাপাশি চলে বক্তব্যও। আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিার্থী নাহিদ ইসলাম, ইংরেজি বিভাগের শিার্থী হাসনাত আব্দুল্লাহ ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সারজিস আলম বক্তব্য দেন। এছাড়া বিভিন্ন বিভাগের শিার্থীরাও আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন। হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, শিক কোটা চায় না, সরকার কোটা চায় না, শিার্থী কোটা চায় না, বিশ্ববিদ্যালয় কোটা চায় না তাহলে কোটা চায় কে? কোন অদৃশ্য শক্তিকে এই কোটা দেয়া হয়েছে। আমরা এই অদৃশ্য শক্তির ভিত উড়িয়ে দিবো। আমরা মেধার স্বার রেখে পরীায় উত্তীর্ণ হতে চাই। এদিকে দাবি আদায়ে আন্দোলন চলমান থাকার কথা সাংবাদিকদের জানান আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা ঢাবি শিার্থী নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা এই প্রহসন মানি না। আদালত তার কাজ করবে। আমরা আমাদের ৪ দফা দাবি আদায়ে আন্দোলন চালিয়ে যাব। বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করে নাহিদ জানান, আজ শুক্রবার অনলাইন ও অফলাইন দুইভাবেই আন্দোলনরত শিার্থীরা চার দফা দাবি নিয়ে গণসংযোগ করবেন; আগামীকাল শনিবার বিকাল ৩টায় দেশের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হবে; গত রোববার সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে কাস ও পরীা বর্জন করা হবে এবং আগামীকাল বিক্ষোভ মিছিল শেষে রোববারের মাঠের আন্দোলন কি হবে তা জানানো হবে।

ছাত্রলীগের বাধা : গতকাল কোটাবিরোধী আন্দোলনে আসা শিার্থীদের বাধা দেয়ার অভিযোগ উঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। সরাসরি কর্মসূচিতে যেতে বাধা না দিলেও হলের পদপ্রত্যাশীরা দাঁড়িয়ে থাকায় প্রথম বর্ষ ও দ্বিতীয় বর্ষের শিার্থীরা ভয়ে বের হতে পারেননি। এমনকি আন্দোলনে আসার কারণে অনেকেই দেখে নেয়ার হুমকি দেয়ারও অভিযোগ উঠে। জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হল ও কবি জসীম উদ্দিন হলের মূল গেটে অবস্থান নেন ছাত্রলীগের ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের 'ছোট ভাই'রা। অন্যদিকে মাস্টারদা সূর্য সেন হলের গেটে অবস্থান নেয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়নের অনুসারীরা। এছাড়াও শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের গেটেও অবস্থান নিতে দেখা যায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের। হলের শিার্থীরা যেন কোটা আন্দোলনে যেতে না পারেন সে জন্য সূর্যসেন হলের গেটে তালা লাগানো হয়।

এছাড়া জসীম উদ্দিন হলের চারতলায় আটকে রাখা হয় কিছু শিার্থীকে। এছাড়াও হলে কোটা আন্দোলনকারীরা প্রচারণা করতে গেলে তাদের বের করে দেওয়া হয়। এ নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুুক সূর্যসেন হলের তৃতীয় বর্ষের একজন শিক্ষার্থী বলেন, আমরা আন্দোলনে যাওয়ার জন্যে বের হয়েছি। কিন্তু দেখি হলগেটে তালা দেওয়া। হল ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশীরা গেটে বসে আছেন এবং তারা কাউকেই বের হতে দিচ্ছেন না। ভেতরে আটক থাকা অবস্থায় যখন মিছিল আসে তখন আমরা বের হয়েছি। হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের এক শিার্থী বলেন, সূর্যসেন হলে আমাকে আটকে রাখা হয়েছিল। সেখানে বলা হয় আগামী এক ঘণ্টার জন্য বের হওয়া যাবে না। পরে আমি বলেছি, আমি মুহসীন হলে থাকি। তারপরও তারা জেরা করেছে? পরে জার্সিতে মুহসীন হল লেখা দেখে আমাকে ছাড়ে। সূর্যসেন হলের গেটের এক নিরাপত্তারী বলেন, আমরা গেটের দায়িত্বে আছি ঠিকই কিন্তু হল গেটে ছাত্রলীগ তালা মেরেছে। ছেলেদের মিছিলে যেতে না করেছে। স্যার এ এফ রহমান হলের এক শিার্থী বলেন, এখানে কোটা আন্দোলনকারীরা হ্যান্ড মাইকে আমাদের ডাকতে আসেন কিন্তু তাদের হল থেকে বের করে দেয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

এ বিষয়ে ঢাবি ছাত্রলীগ সভাপতির বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে এই অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট হিসেবে মন্তব্য করেন ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত। তিনি আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, এই অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। শিার্থীদের নিজেদের ভেতরে সমস্যা থেকে এমন করতে পারে। আমাদের নেতাকর্মীরা শিার্থীদের কোথাও যেতে বাধা দেয় নেই? আর এরকম কোনো নির্দেশনা ছাত্রলীগ থেকে ছিল না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত