বাজেট অধিবেশন

আগের উত্তাপ নেই সংসদে বিরোধীদলের চেয়ে বেশি সক্রিয় স্বতন্ত্ররা

প্রকাশ : ০৫ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরিফুল ইসলাম

জাতীয় সংসদে বিরোধীদল জাতীয় পার্টি (জাপা) তেমন কার্যকরী ভূমিকা না নেওয়ায় সংসদে আগের মতো এবার উত্তাপ দেখা যায়নি। তবে সরকারের ভালো কাজের প্রশংসা করে তাদের ভুলক্রটি ধরে পরার্ম দিয়ে বাজেট অধিবেশনে কিছুটা উত্তাপ ছড়িয়েছে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা। সংশ্লিষ্টরা জানায়, বাজেট অধিবেশনে সংসদে স্বতন্ত্র সাংসদ সদস্যদের মধ্যে অধিকাংশ সংসদ সদস্য বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে সংসদে। তবে এদের মধ্যে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ও পঙ্কজ দেবনাথ এ দুই সংসদ সদস্য বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে এবার বেশি আলোচনা করেছেন। অন্যদিকে জাতীয় পার্টি (জাপা) সংসদ সদস্যরা এবার আগের থেকে সংখ্যায় কম হওয়ায় তাদের তেমন বেশি তৎপরতা দেখা যায়নি।

সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদে বিএনপির চার জন সংসদ সদস্য ছিলো। গত বাজেট অধিবেশনে বিভিন্ন ইস্যুতে তারা সংসদ উত্তপ্ত করতো, সরকারের বিরোধীতা করতো। ঐ সংসদে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সংখ্যা ২৩ জন ছিলো। তারা বিভিন্ন বিলে এবং বিভিন্ন ইস্যুতে ভুল ধরে সরকারের সমালোচনা করতেন। এবার দ্বাদশ সংসদে বিএনপির কোন প্রতিনিধি নেই। জাপার সংসদ সদস্য কম। তবে স্বতন্ত্র পার্থী বেশি এবার। কিন্তু তারা সেভাবে সংসদে আলোচনা করছেননা। এ বিষয়ে সরকার দলীয় একজন সংসদ সদস্য বলেন, বিএনপির সক্ষমতা ছিলোনা এ কারণে নির্বাচনে আসেনি। তারা নির্বাচনে না আসলে সংসদে কীভাবে আসবে। বিএনপি কখনো দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে না, তারা নিজেদের সার্থকে গুরুত্ব দেয়। তারা সাধারণ মানুষকে ভালোবাসলে গণতন্ত্রকে সম্মান করত, ভোটে আসত। সংসদে কথা বলার সুযোগ পেত। এসব বিষয়ে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, সংসদ আরো সুন্দর কার্যকর হয়, যদি উত্তপ্ত হয়। সংসদে উভয় পক্ষ যদি সমান সমানভাবে কথাবার্তা বলে তা হলে সংসদ সত্যিকার অর্থে কার্যকর এবং প্রাণবন্ত হয়। সেটা এখন পর্যন্ত হয়নি বলে আমার ধারণা। নতুন সংসদ মোটামুটি গতানুগতিক চলছে। যেহেতু বিরোধীদলে সংখ্যায় আমরা অনেক কম। সংসদে একতরফাভাবেই কথাবার্তা হচ্ছে, সরকারের পক্ষেই বেশিরভাগ কথা হয়। জানা যায়, দল হিসেবে আওয়ামী লীগের পর এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে জাপা। তারা ১১টি আসনে জয়ী হয়েছে। কিন্তু, আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন ৬২টি আসনে। এর আগে কোনো সংসদে এতসংখ্যক স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ছিলেন না। জয়ী হওয়া স্বতন্ত্রদের প্রায় সবাই আওয়ামী লগের পদধারী নেতা।

জাতীয় সংসদে সরকারের বিরোধিতাকারী দলগুলো বিরোধীদল হিসেবে পরিচিত। বিরোধীদল হতে হলে ন্যূনতম কতজন সংসদ সদস্য থাকতে হবে, তাও সংবিধান কিংবা সংসদের কার্যপ্রণালী বিধিতে উল্লেখ নেই। তবে, বিরোধীদলের নেতা কে হবেন তা উল্লেখ আছে কার্যপ্রণালী বিধিতে।

সংসদ সচিবালয় জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদের তৃতীয় ও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশন শেষ হয়েছে গত বুধবার। অধিবেশন সমাপ্তি সংক্রান্ত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ঘোষণা পাঠ করার মাধ্যমে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

গত ৫ জুন থেকে ১৯ কার্যদিবস পর্যন্ত অধিবেশন চলার পর গত বুধবার ৩ জুলাই জাতীয় সংসদের অধিবেশন শেষ হয়। এর আগে গত ৬ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ‘টেকসই উন্নয়নের পরিক্রমায় স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রা’ স্লোগান সম্বলিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন। এরপর গত ৩০ জুন জাতীয় সংসদে এই বাজেট পাস হয়। আগের দিন ২৯ জুন সংসদে অর্থ বিল পাস হয়।

অধিবেশনে সম্পূরক বাজেটসহ সামগ্রিক বাজেট আলোচনায় ২৩৬ জন সংসদ সদস্য অংশগ্রহণ করেন এবং মোট ৪০ ঘন্টা ৪৭ মিনিট আলোচনা হয়। বাজেট পাস ছাড়াও এ অধিবেশনে ৭টি বিল পাস হয়। আইন প্রণয়ন সম্পর্কিত কাজ সম্পাদনের পাশাপাশি কার্যপ্রণালী-বিধির ৭১ বিধিতে ১০৫টি নোটিশ পাওয়া যায়। প্রধানমন্ত্রীর উত্তর দানের জন্য সর্বমোট ১১৭টি প্রশ্ন পাওয়া যায়, এর মধ্যে তিনি ৬৭টি প্রশ্নের উত্তর দেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের উত্তরদানের জন্য প্রাপ্ত মোট ২ হাজার ৩০০টি প্রশ্নের মধ্যে মন্ত্রীরা ১ হাজার ৫২২টি প্রশ্নের জবাব দেন। এবার বাজেট অধিবেশনে সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদ এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা মতিউর রহমান ও কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের দুর্নীতি বেশি আলোচনা হয়।