ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

উত্তরে বাড়ছে পানি, কাঁদছে মানুষ

* বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকট * দুর্বিষহ জীবন-যাপন করছে পানিবন্দি মানুষ * বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান
উত্তরে বাড়ছে পানি, কাঁদছে মানুষ

চলছে বর্ষা মৌসুম। দেশের বিভিন্ন এলাকায় পানি বাড়তে শুরু করেছে। এরই মধ্যে দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। এতে লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ছে। আগস্টের আগে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। গবেষণা বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের তীব্র প্রভাবের কারণে পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে খারাপের দিকে যাচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশ্বব্যাপী জরুরি ও বড় ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। এদিকে, চলতি বছরের আগস্ট মাসে দেশে বন্যার আশঙ্কা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে আগাম প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি নামতে না পারায় চলতি বর্ষা মৌসুমে সবচেয়ে বেশি বন্যার কবলে পড়েছে সিলেট। নগরের বিভিন্ন স্থানে এর মধ্যেই জলাবদ্ধ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুরসহ সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোয় পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে।

রংপুরে বাড়ছে পানি, কাঁদছে মানুষ : ভারতের উত্তর সিকিমে ভারি বর্ষণসহ উজান থেকে নেমে আসা ঢলে রংপুর অঞ্চলের প্রধান প্রধান নদনদীর পানি ফের তৃতীয় দফায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। শত শত ঘরবাড়ি বিলীন হয়েছে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকট। পানিবন্দি পরিবারগুলো দুর্বিষহ জীবনযাপন। এমনি দুর্বিষহ চিত্র দেখা যায় ও রংপুরের গঙ্গাচড়ার লালমিনরহাট নীলফামারী ও গাইবান্ধার, কুড়িগ্রাম সুন্দরগঞ্জে নদী পাড়ের মানুষদের। নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। প্লাবিত হয়ে পড়েছে নতুন নতুন এলাকা। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে হাজারও বানভাসি মানুষ। গতকাল শুক্রবার বিকালে রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, গত কয়েকদিনের তুলনায় ডালিয়া ও কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করেছে। কাউনিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ কিছুটা বাড়ছে।

রংপুরের গঙ্গাচড়ার চারটি ইউনিয়নের প্রায় ১০০ পরিবারের ঘরবাড়ি তিস্তায় বিলীন হয়েছে। ২৫০টিরও বেশি পরিবার ভাঙন আতঙ্কে তাদের ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে গঙ্গাচড়া উপজেলার প্রায় ৫ হাজার পরিবার।

বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে টিউবওয়েল, রান্নার চুলা, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকট। পানিবন্দি পরিবারগুলো দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। এ ছাড়া পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়েছে কয়েক বিঘা জমির বাদামখেত ও আমন ধানের বীজতলা।

রংপুর আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, দেশের উত্তরাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে আগামী ২৪ ঘণ্টায় মাঝারি থেকে ভারি এবং ৪৮ ঘণ্টায় ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। তবে আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীসমূহের পানির প্রবাহ সাময়িকভাবে স্থিতিশীল থাকতে পারে।

কথা হয় তিস্তার বন্যায় বাড়িঘর ভেঙে যাওয়া মর্ণেয়া ইউনিয়নের আলফাজটারী গ্রামের আব্দুস সাত্তারের (৭৫) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ঈদের আগ থাকি নদীত পানি আসছে। হামরা মনে করছি এবার মনে হয় এদিকে ভাঙন আসবার নেয়। তিস্তা কয় থাকিস তোর বাড়িটায়, আগত ভাঙি নিয়া যাং। চোখের ইশারায় সবকিছু ভাঙি নিয়া গেইল যে বাবা।’ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার জানান, এখন পর্যন্ত বানভাসিদের জন্য ৯ উপজেলায় ১৭৩ মেট্রিক টন চাল ও ১০ লক্ষ টাকা বিতরণের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মজুত আছে ৬০০ মেট্রিক টন চাল ও ৩০ লাখ টাকা । যা পর্যায়ক্রমে বিতরণ করা হবে।

কয়েকদিনে ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে আসা পানি বেড়ে সুন্দরগঞ্জে তিস্তা নদীতে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। অব্যাহত ভাঙনে পাটসহ বিভিন্ন ফসলি জমি ও বসতভিটা নদীতে বিলীন হচ্ছে।

নদীপাড়ের মানুষের অভিযোগ, সরকার স্থায়ীভাবে নদীভাঙন রোধে উদ্যোগ না নেওয়ায় প্রতি বছর পাঁচ শতাধিক বসতবাড়িসহ কয়েক হাজার একর ফসলি জমি নদীতে বিলীন হচ্ছে। উজান তেওড়া গ্রামের ফকরুল মিয়া বলেন, আমরা ত্রাণ চাই না নদী শাসন চাই।

গতকাল শুক্রবার বিকালে পাউবোর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো: আহসান হাবীব জানান, গত কয়েক দিনের বৃষ্টি আর ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে প্রধান প্রধান নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তিস্তার পানি কোনো কোনো এলাকায় বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, ব্রহ্মপুত্রের ৩টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি : কুড়িগ্রামে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। কোনো কোনো নদনদীর পানি কমলেও বাড়ছে অস্বাভাবিক হারে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি। এতে করে নদী তীরবর্তী ৬টি উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পরেছে। বেড়েই চলেছে বানভাসীদের দুর্ভোগ। সরকারি সহায়তা পৌঁছেনি সর্বত্র। জেলায় দ্বিতীয় দফা বন্যার ফলে ৩৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ করা হয়েছে। ২ হাজার ৩০০ হেক্টর ফসলি জমি নিমজ্জিত এবং বানভাসিদের সহায়তায় ইউনিয়ন পর্যায়ে ৮৩টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন থেকে ৫০০ মেট্রিক টন চাল ও ২০ লাখ টাকা বিতরণের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে স্থানীয় পাউবো সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকালে বিকালে হাতিয়া পয়েন্টে ৮০ সেন্টিমিটার, চিলমারী পয়েন্টে ৭৮ সেমি ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ৭২ সেমি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। হঠাৎ করে পানি বৃদ্ধির ফলে বিপাকে পরেছে বানভাসি মানুষ। তারা ছুটছে আশ্রয়ের খোঁজে। বেশিরভাগ বানভাসি মানুষ নৌকার মধ্যে রাত্রিযাপন করছে। সরকারি প্রশাসন থেকে দুর্গতদের পাশে দাঁড়ালেও এখনো সবার কাছে পৌঁছেনি সরকারি সহায়তা। জেলায় গত চারদিন ধরে নদনদীগুলোতে অস্বাভাবিকহারে পানি বৃদ্ধির ফলে গরু-ছাগল, সহায়-সম্পদ ও সন্তানদের নিয়ে বিপাকে পড়েছে বানভাসি মানুষ। ঘরের ভেতর পানি প্রবেশ করায় যাদের নৌকা আছে, তারা নৌকায় আশ্রয় নিয়েছে। যাদের নৌকা নেই তারা ঘরের ভেতর মাচা ও চৌকি উঁচু করে সেখানেই আশ্রয় নেয়। রান্নাবান্না করে সেখানেই। আশপাশে যত উঁচু বাড়ি ও ফ্লাড শেল্টার রয়েছে, সেখানে আশ্রয়ের খোঁজে ছোটে বানভাসি মানুষ। কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মঞ্জুর-এ-মুর্শেদ জানান, বর্তমান বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য জেলা স্বাস্থ্য বিভাগে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা ছাড়াও ৮৩টি ইউনিয়নে ইউনিয়নভিত্তিক মেডিকেল টিম মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। ২০ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও ২০ হাজার খাবার স্যালাইন বিতরণের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, চলমান বন্যায় ২ হাজার ৩০০ হেক্টর ফসলি জমিন নিমজ্জিত হয়েছে। বিশেষ করে পাট, রোপা আমন বীজতলা, আউশ ধান, শাকসবজি, তিল, তিসি, চিনা, কাউন ফসল তলিয়ে গেছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, চলমান বন্যায় এখন পর্যন্ত ৩৭টি বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বন্যার পানির কারণে আরো বিদ্যালয় বন্ধ হতে পারে। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর জানিয়েছেন, তার ইউনিয়নের ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, বন্যা মোকাবিলায় সব ধরণের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। মাঠপর্যায়ে সকল সরকারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। বন্যার্তদের সব ধরনের সহযোগিতা করার জন্য জেলা প্রশাসনের কাজ চলমান রয়েছে।

টাঙ্গাইলের তিন উপজেলায় ভাঙন, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত : টানাবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে টাঙ্গাইলের সবগুলো নদীর পানি বেড়ে গতকাল শুক্রবার সকালে চার উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জেলার যমুনা ও ঝিনাই নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ২০ ও ৭৮ সেণ্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এরই মধ্যে তিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নদীভাঙন দেখা দিয়েছে।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টায় যমুনা নদীর পানি পোড়াবাড়ী পয়েণ্টে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার এবং ঝিনাই নদীর (নিউ ধলেশ্বরী) পানি জোকারচর পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া ধলেশ্বরী নদীর পানি এলাসিন পয়েন্টে ৪১ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একইভাবে ফটিকজানি নদীর পানি নলছোপা পয়েন্টে ৩ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১.৭১ মিটার, বংশাই নদীর পানি কাউলজানী পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২.৩৯ মিটার, মির্জাপুর পয়েন্টে ১৩ সেন্টিমিটার বেড়ে ১.০৫ মিটার এবং মধুপুর পয়েন্টে ২৫ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৪.২৯ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলার অভ্যন্তরীণ নদীগুলোর পানি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাওয়ায় ভূঞাপুর, গোপালপুর, কালিহাতী ও সদর উপজেলার কয়েকটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এছাড়া ভূঞাপুর, কালিহাতী ও সদর উপজেলার কয়েকটি এলাকায় নদীভাঙনে ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। লোকালয়ে পানি ওঠায় সাধারণ মানুষ বিপাকে পড়েছেন। একইসঙ্গে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের মধ্যে সাপের আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিশেষ করে রাসেলস ভাইপার সাপ নিয়ে বেশি আতঙ্ক রয়েছে।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে যমুনা, ঝিনাই, ধলেশ্বরীসহ জেলার সবকটি নদীর পানি বেড়েছে। আরো কয়েকদিন পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। এতে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে।

টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক মো. কায়ছারুল ইসলাম জানান, উজানের পানি নেমে আসায় ভাটিতে ধীরে ধীরে পানি বাড়ছে। ভূঞাপুরের অর্জুণা ইউনিয়নের কিছু ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে। পার্শ্ববর্তী নিকরাইল ও গাবসারা ইউনিয়নেও পানি ঢুকে পড়তে পারে। ক্রমাগত পানি বৃদ্ধি পেলে আরো বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হতে পারে। বন্যার্তদের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত ত্রাণ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া আছে।

সিরাজগঞ্জে বন্যা, যমুনার পানি বিপৎসীমার উপরে : পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণে যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনায় ৪০ সেন্টিমিটার পানি বাড়ছে এবং বর্তমানে যমুনার পানি পেয়ে বিপৎসীমার ৫৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে যমুনার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল বন্যাকবলিত হয়েছে এবং নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। নিম্নাঞ্চলের বহু পরিবার এখন পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রায় দেড় সপ্তাহ ধরে পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণে যমুনার পানি দ্রুত বাড়ছে এবং নিম্নাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন ঘটেছে। নদীর তীরবর্তী বেলকুচি, শাহজাদপুর, চৌহালী, কাজিপুর ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানে ভাঙন শুরু হয়েছে। এর মধ্যেই ভাঙন এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে এবং বহু পরিবার ভাঙন ও বন্যায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। এছাড়া যমুনার শাখা নদীসহ বিভিন্ন খালবিলে পানিতে টইটুভুর হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে শাহজাদপুর, কাজিপুর ও চৌহালী উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি অবনতির সৃষ্টি হচ্ছে এবং যমুনার তীরবর্তী ওই ৫টি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বহু পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এবং নিম্নাঞ্চলের ফসলি জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে এবং তিল কাউন পাটসহ বিভিন্ন ফসল ডুবে গেছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান বলেন, যমুনা নদীর তীরবর্তী ৫টি উপজেলার নিম্নাঞ্চলের প্রায় দেড় হাজার পরিবার এখন পানিবন্দি। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, যমুনার পানি এখন বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং বিভিন্ন স্থানে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তবে আরো কয়েকদিন পানি বাড়তে পারে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তবে এখনও বন্যা পরিস্থিতি অবনতি ঘটেনি। শুকনা খাবারসহ ত্রাণসামগ্রী মজুত রাখা হয়েছে এবং এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

গাইবান্ধার সব নদনদীর পানি বৃদ্ধি : উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং অব্যাহত বৃষ্টিপাতের ফলে গাইবান্ধার সবগুলো নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে বন্যার কবলে পড়েছে জেলার সদর, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সুন্দরগঞ্জসহ চার উপজেলা। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে চার উপজেলার ২৪টি ইউনিয়নের অন্তত ২০ হাজার পরিবার। পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে আউশ ধান, পাট, ভুট্টা ও আমন বীজতলা। তলিয়ে গেছে পুকুর ও মাছের ঘের। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে জেলার ৮০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

গাইবান্ধার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, শুক্রবার সকাল ৯টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি জেলার ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখ পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় ২৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৮৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এছাড়া, ঘাঘট নদীর পানি জেলা শহরের নতুন ব্রিজ পয়েন্টে ২৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে, জেলার করতোয়া নদীর পানি গোবিন্দগঞ্জের কাটাখালি পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় ২৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেলেও বিপৎসীমার ১৪২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং তিস্তা নদীর পানি ২৬ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৬২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

গাইবান্ধার যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার চার উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়ে এরই মধ্যে বন্যা দেখা দিয়েছে। সরকারি হিসেবে চার উপজেলার ২৪টি ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

জেলা প্রশাসনের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, গাইবান্ধার সদর উপজেলার দুইটি ইউনিয়ন, সুন্দরগঞ্জের সাতটি, সাঘাটার আটটি ও ফুলছড়ি উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন পানিতে তলিয়ে গেছে। এই ২৪ ইউনিয়নে পানিবন্দি ১৭ হাজার ৮২০টি পরিবার। এরমধ্যে গাইবান্ধা সদর উপজেলায় ২ হাজার ১৫০টি, সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ৪ হাজার ৭০০টি, সাঘাটা উপজেলায় ৫ হাজার ১৭০টি ও ফুলছড়ি উপজেলার ৬ হাজার ৮০০টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, চলমান বন্যায় এরই মধ্যে চার উপজেলায় ২ হাজার ৫৪৫ হেক্টর জমির আউশ ধান, পাট, ভুট্টা, বীজতলা ও শাকসবজি পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। যদি দ্রুত পানি নেমে যায়, তাহলে এসবের ক্ষতি কম হবে। আর যদি বন্যা স্থায়ী হয়, কিংবা আরও বাড়ে... তাহলে কী পরিমাণ ফসল নষ্ট হবে, তা পরে জানা যাবে।

গাইবান্ধার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক জানান, উজানের ঢলে অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে ঘাঘট ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত