ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ফ্রান্সের নির্বাচনে বামপন্থিদের বিজয়

* এনএফপি ১৮২ আসন * এনসেম্বল ১৬৮ আসন * আরএন ১৪৩ আসন
ফ্রান্সের নির্বাচনে বামপন্থিদের বিজয়

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বামপন্থি জোট পার্লামেন্টের বেশিরভাগ আসনে জিতেছে। তবে তারা প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি।

ফ্রান্সের পার্লামেন্টে ৫৭৭টি আসন আছে। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, নির্বাচনে এনএফপি পেয়েছে ১৮২ আসন, প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর মধ্যপন্থি জোট এনসেম্বল পেয়েছে ১৬৮ আসন, উগ্র ডানপন্থি দল ন্যাশনাল র‌্যালি (আরএন) পেয়েছে ১৪৩ আসন। গেল রোববারের ভোটের রাতটি দেশটিতে সবার জন্য অপ্রত্যাশিত বার্তা নিয়ে আসে। পার্লামেন্ট নির্বাচনে যেমন ফলাফল আসবে বলে ধারণা করা হয়েছিল হয়েছে তার উল্টো। আনুষ্ঠানিক ফলাফলে কট্টর ডানপন্থিদের হতাশ করে জয় পায় বামপন্থিরা। তবে এমন অবস্থায় সরকার গঠনের জন্য দুটি পথ রয়েছে এনএফপির সামনে। এনএফপিকে হয় কমসংখ্যক আসন নিয়েই সংখ্যালঘু সরকার হিসেবে কাজ করতে হবে। এতে ঝুলন্ত পার্লামেন্ট হবে এবং কোনো আইন পাস করাতে অন্য পক্ষের সমর্থনের ওপর নির্ভর করতে হবে। আর কমসংখ্যক আসন নিয়ে সরকার গঠন করতে না চাইলে অন্য কাউকে নিজেদের জোটের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। তবে ইউরোপের দেশ জার্মানি কিংবা নরওয়ের পার্লামেন্ট নির্বাচনের পর জোট করে সরকার গঠনের ঘটনা পরিচিত হলেও ফ্রান্সের ক্ষেত্রে এমনটা দেখা যায় না। এনএফপি জোটভুক্ত দলের মধ্যে আছে ফ্রেঞ্চ কমিউনিস্ট পার্টি, ফ্রান্স আনবোড, গ্রিনস ও সোশ্যালিস্ট পার্টি। সামনের কাজগুলো কী হবে, তা নিয়ে দলগুলোর নেতারা গত রোববার রাতেই প্রথম দফার আলোচনা সেরেছেন। ফ্রান্সের নির্বাচনে বামপন্থিদের জোট পার্লামেন্টের বেশিরভাগ আসনে জিতেছে। প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর মধ্যপন্থি জোট দ্বিতীয় অবস্থানে আর উগ্র ডানপন্থি দল রয়েছে তৃতীয় অবস্থানে। গতকাল সোমবার এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, মূলত ডানপন্থি দলটি নির্বাচনে জেতার আশা করলেও তারা নেমে গেছে তৃতীয় অবস্থানে। অন্যদিকে বামপন্থিদের জোট বেশিরভাগ আসনে জিতলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে না কোনো দল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফ্রান্সের অতি-ডানপন্থি ন্যাশনাল র‌্যালি ব্যাপকভাবে এই নির্বাচনে জয়লাভ করবে বলে আশা করা হলেও এর পরিবর্তে তারা পরাজিত হয়েছে এবং তৃতীয় স্থানে নেমে গেছে। প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ মাত্র চার সপ্তাহ আগে হঠাৎ করে এই নির্বাচনের ঘোষণা দেন এবং এই নির্বাচনে নিউ পপুলার ফ্রন্ট নামে একটি বামপন্থি জোট সর্বাধিক আসন জিতেছে। অবশ্য কোনো একটি জোট প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় ইউরোপের এই দেশটি রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হতে চলেছে। নিউ পপুলার ফ্রন্টের নেতারা বলছেন— জনগণের কাছে দেওয়া অঙ্গীকার তারা বাস্তবায়নের চেষ্টা করবেন। প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ দ্রুত বাম জোটকে সরকার গঠনের আহ্বান জানাবেন বলে আশাবাদী সমর্থকরা।

এদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ফ্রান্সের ভোটাররা মারিন লু পেনের জাতীয়তাবাদী, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সম্প্রসারণ বিরোধী আরএনকে একটি বড় ধরনের বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে দিয়েছে, অথচ নির্বাচনপূর্ব জরিপগুলোতে দলটি দ্বিতীয় পর্বে জয় পেতে পারে বলে আভাস দেওয়া হয়েছিল। নির্বাচনের এই ফল মধ্যপন্থি প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁর জন্যও একটি বড় ধাক্কা, কারণ তিনি আগাম নির্বাচনের ডাক দিয়ে শেষ পর্যন্ত পেলেন একটি ঝুলন্ত পার্লামেন্ট। এতে ইইউতে ফ্রান্সের ভূমিকা দুর্বল হয়ে ওঠার আশঙ্কা আছে। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ফ্রান্সের পার্লামেন্ট তিনটি বড় জোট-বামপন্থি, মধ্যপন্থি ও ডানপন্থির মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এদের প্রত্যেকেরই পুরোপুরি পৃথক ধরনের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গী রয়েছে এবং কোনো ক্ষেত্রেই একমত হওয়ার কোনো ঐতিহ্য নেই।

উল্লেখ্য, গত ৩০ জুন প্রথম দফার ভোটে আরএন ও সমমনা দলগুলো ৩৩ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। আর বামপন্থি নিউ পপুলার ফ্রন্ট ২৮ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল।

প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর নেতৃত্বে মধ্যপন্থি এনসেম্বল ব্লক প্রায় ২০ শতাংশ ভোট পেয়ে ছিল তৃতীয় স্থানে। যেসব প্রার্থী প্রদত্ত ভোটের ৫০ শতাংশের বেশি পেয়েছেন, তাদের আর দ্বিতীয় দফায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়নি। এর মধ্যে লে পেনের জোট থেকে ৩৯ জন, বাম জোট থেকে ৩২ জন, ম্যাক্রোঁর জোট থেকে দুই জন, রক্ষণশীল এলআর থেকে একজন এবং অন্যান্য ডান দল থেকে দুইজন রয়েছেন।

বাকি ৫০১টি আসনের ভাগ্য নির্ধারিত হবে দুই থেকে চারজন প্রার্থীর মধ্যে। ফরাসি পার্লামেন্টে ম্যাজিক ফিগার ২৮৯। অর্থাৎ, যে দলের কাছে ২৮৯টি আসন থাকবে, তারাই সরকার গড়তে পারবে। দ্বিতীয় রাউন্ডের এই ভোটের পর ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন এবং ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে কে নেতৃত্ব দেবেন- সেটাই এখন দেখার বিষয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত