রোহিঙ্গা এলাকায় ভোগান্তি কমাতে ইসির নতুন উদ্যোগ

* বাংলাদেশিদের ভোটার হতে পারবে সহজেই * ভোটার হওয়ার জন্য আগামীতে লাগবে না ২২ ধরনের তথ্য * ক্যাটাগরি না হওয়ায় ঝুলে আছে ৬৫ হাজার সংশোধন আবেদন

প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরিফুল ইসলাম

রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় বাংলাদেশি ভোটারদের ভোগান্তি কমাতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) নতুন উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। ফলে ৩২ উপজেলার প্রকৃত বাংলাদেশিরা সহজে ভোটার হয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) হতে পাবেন। অন্যদিকে নতুন করে ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গারা যেন যুক্ত হতে না পারে, সে বিষয়ে দৃষ্টি রাখবে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

সূত্র জানায়, বর্তমানে রোহিঙ্গাদের অবস্থানের কারণে ৪ জেলার ৩২টি উপজেলায় বসবাসরত প্রকৃত বাংলাদেশিরাও ভোটার হতে এবং এনআইডি পেতে ভোগান্তির মধ্যে পড়ছেন। জেলা চারটি হলো কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি ও চট্টগ্রাম। এসব এলাকায় রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়া ঠেকাতে এবং প্রকৃত বাংলাদেশিরা যাতে এনআইডি পেতে বা ভোটার হতে ভোগান্তির শিকার না হন, সে বিষয়ে ইসি উদ্যোগ নিচ্ছে।

জানা যায়, চট্টগ্রাম ও বান্দরবানে গত মঙ্গল ও বুধবার এ বিষয়ে কর্মশালার আয়োজন করা হয়। সেখানে ইসি সচিব শফিউল আজিমও উপস্থিত ছিলেন। কর্মশালায় বেশ কিছু সুপারিশ এসেছে। সেগুলো সমন্বয় করে কমিশনে নথি উপস্থাপনের কাজ চলছে। এ ছাড়া গত ১৩ জুন ইসির মাসিক সমন্বয় সভায়ও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন সচিব। যেসব প্রকৃত বাংলাদেশি দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে এসএসসি বা এইচএসসি পাস করেছেন, তাদের কেন ভোটার হওয়ার জন্য ২২ ধরনের তথ্য দিতে হবে, সে প্রশ্ন সমন্বয় সভায় তোলেন সচিব।

তিনি বলেন, অন্য দেশের কেউ যাতে ভোটার হতে না পারে, সেদিকে যেমন লক্ষ্য রাখতে হবে; তেমনি এ জন্য দেশের প্রকৃত নাগরিক যাতে ভোগান্তিতে না পড়েন, সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।

ইসি সচিব শফিউল আজিম বলেন, ‘আমরা দুটি কর্মশালা করেছি। সেখানে নির্বাচন কমিশনের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা, বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে আমরা সুপারিশ নিয়ে আসছি।

তিনি বলেন, একদিকে যারা প্রকৃত বাংলাদেশি, তাদের সেবাটা কীভাবে সহজ করা যায় এবং অন্য দেশের নাগরিকদের ভোটার হওয়ার চেষ্টা কীভাবে আটকানো যায়, সে বিষয়ে সুপারিশ চাওয়া হয়েছিল। রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার চেষ্টা সচিব বলেন, রোহিঙ্গারা শুধু ৩২টি বিশেষ এলাকার মধ্যেই নেই, এরা অন্যান্য এলাকায় গিয়েও ভোটার হওয়ার চেষ্টা করছে। সম্প্রতি রংপুরে এমন একজন ধরা পড়েছে। এসব বিষয়ও আমাদের নজরে এসেছে। এগুলোও আমরা আমলে নিচ্ছি। সূত্র জানায়, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি এনআইডি পাওয়া ঠেকাতে কক্সবাজারের ৯ ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের ৮ উপজেলাসহ আশপাশের ৩২টি উপজেলাকে বিশেষ অঞ্চল ঘোষণা করেছে ইসি। এ অঞ্চলের লোকজনকে ভোটার হতে হলে একটি বিশেষ ফরম পূরণ করতে হয়। এ বিশেষ ফরম যাচাইয়ের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে গঠন করা হয়েছে একটি বিশেষ কমিটি। সেই বিশেষ কমিটির সুপারিশ ছাড়া কাউকে ভোটার করা হয় না। তারপরও অনেক রোহিঙ্গাদের হাতে হাতে এনআইডি ও পাসপোর্ট।

অন্যদিকে প্রকৃত বাংলাদেশিরা ভোটর হওয়ার জন্য গেলে ভোগান্তি পরেন। এ কারনে ইসি রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়া বন্ধ করে বাংলাদেশিদের জন্য সহজ করার উদ্যোগ নিচ্ছে। এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মাহাবুবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘১৯৮২ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত গত ৪১ বছরে যারা এসেছে, তাদের মধ্যে কমপক্ষে পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা এনআইডি সংগ্রহ করেছে বলে আমরা অনেকটা নিশ্চিত হয়েছি। তিনি আরো বলেন, সৌদি আরব, দুবাই, মালয়েশিয়াসহ আরো কয়েকটি দেশে লাখখানেক রোহিঙ্গা রয়েছে, যাদের হাতে বাংলাদেশি পাসপোর্ট রয়েছে। তারা ওইসব দেশের যেসব এলাকায় থাকে সেগুলো বার্মাইয়াপাড়া নামে পরিচিত। আমি নিজে দুবার সৌদি আরবে গিয়ে দেখেছি, সেখানকার নাক্কারা, সংবানিয়, গজা এলাকা বার্মাইয়াপাড়া নামে পরিচিত। সেখানকার কমপক্ষে ২০ হাজার রোহিঙ্গার কাছে বাংলাদেশি পাসপোর্ট রয়েছে।

ক্যাটাগরি না হওয়ায় ঝুলে আছে ৬৫ হাজার সংশোধন আবেদন : এদিকে এনআইডি সংশোধনে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) হালনাগাদ করে মাঠ কর্মকর্তাদের ক্ষমতা দেওয়ায় ভোগান্তি আরো বেড়েছে। এতে এক মাসে ৬৫ হাজার আবেদন নতুন করে ঝুলে গেছে।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, এনআইডি সংশোধনের আবেদন ক্যাটাগরির ভিত্তিতে হয়। এক্ষেত্রে ক, ক-১, খ, খণ্ড১, গ, গ-১ ও ঘ; এ সাতটি ক্যাটাগরিতে ফেলা হয় আবেদনগুলো। অর্থাৎ কোনো আবেদন জমা পড়লে, সেগুলোর সমস্যার ধরন বুঝে ক্যাটাগরিতে ফেলেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। ক্যাটাগরি হয়ে গেলে সে অনুযায়ী দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা আবার সংশ্লিষ্ট আবেদন নিষ্পত্তি করেন।

জানা গেছে, আগে ইসির এনআইডি শাখার ১০ কর্মকর্তা ১০ অঞ্চলে আবেদনগুলো ক্যাটাগরি করতেন। সম্প্রতি এসওপি সংশোধনে ১০ অঞ্চলে ২০ কর্মকর্তাকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ফলে কার্যক্রম ত্বরান্বিত না হয়ে আরো ঝুলে গেছে। গত এক মাসে ৬৫ হাজার আবেদন ক্যাটাগরিহীন অবস্থায় রয়েছে, যেখানে আগে ১০ হাজারের মতো ঝুলে থাকত। এ অবস্থায় সেবাগ্রহীতাদের ভোগান্তি বেড়েছে।

এ বিষয়ে ইসির এনআইডি মহাপরিচালক মো. মাহব্বু আলম তালুকদার বলেন, আমরা এসওপি করেছিলাম ভালোর জন্যই। বিষয়টি নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা বেশি। এ নিয়ে কাজ করছি। অপেক্ষা করেন, দেখতে পাবেন।

ইসির এনআইডি সার্ভারে ১২ কোটির মতো নাগরিকের তথ্য রয়েছে। এদের মধ্যে প্রতিদিন হাজার হাজার নাগরিক কোনো না কোনো সংশোধনের আবেদন জানান। সম্প্রতি উপজেলা নির্বাচনের কারণে সাড়ের পাঁচ লাখের মতো আবেদন ঝুলে পড়েছিল।