ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ফের ‘বাংলা ব্লকেড’

ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ

রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় তীব্র যানজট দেখা যায়
ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ

গেল কয়েকদিনের টানা আন্দোলনে উত্তপ্ত ঢাকার রাজপথ। কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে গতকালও স্থবির হয়ে পড়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান। সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় তীব্র যানজট দেখা গেছে। এর ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সড়কের পাশাপাশি রেলপথ অবরোধ করায় ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা।

এদিকে সর্বোচ্চ আদালত স্থিতাবস্থা জারি করলেও সংসদে আইন পাস করে সরকারি চাকরির কোটাব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলমান রাখার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, শুধু পিছিয়েপড়া জনগোষ্ঠীর জন্য সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ কোটা রেখে সরকারি চাকরির সব গ্রেডে সব ধরনের কোটা বাতিল করতে হবে। সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের স্থিতাবস্থা জারির আদেশের প্রতিক্রিয়ায় গতকাল বুধবার দুপুরে শাহবাগ মোড়ে অবরোধ কর্মসূচি থেকে এ ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা। আন্দোলনের ফলে গতকাল সকাল থেকে কিছু কিছু এলাকায় তীব্র যানজট দেখা গেলেও অধিকাংশ সড়ক খালি দেখা গেছে। এছাড়া বাসসহ যাত্রী পরিবহনেরও সংকট ছিল। তবুও জরুরি কাজে ঘর থেকে বেরিয়ে সড়কে ভোগান্তিতে পড়তে দেখা গেছে সাধারণ মানুষকে। কারণ মোড়ে মোড়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের রাস্তা ব্লক করে অবস্থান করার কারণে যানচলাচল অনেকটাই স্থবির ছিল। জরুরি সেবা, ওষুধ, অ্যাম্বুলেন্স, স্কুল ফেরত শিক্ষার্থীদের গাড়ি এবং খাদ্যপণ্য বহনকারী যানবাহন ছাড়া কোনো গাড়ি চলতে দেওয়া হয়নি।

যেসব এলাকায় মোড় সংলগ্ন বাইপাস সড়ক রয়েছে, সেখানে ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে আটকেপড়া যানবাহনগুলোকে ডাইভারশন করে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও বেশি বিপাকে পড়েছেন পল্টন, রমনা এলাকায় চলাচলকারীরা, যেখানে সড়ক ডাইভারশন করার ব্যবস্থাও সীমিত। গতকাল বুধবার দিনভর বাংলা ব্লকেড পালনে রাজধানীর আগারগাঁও, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, বাংলা মোটর, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়, শাহবাগ, টিএসসি, দোয়েল চত্বর, মৎস্য ভবন, কাকরাইল মোড়, নাইটিঙ্গেল মোড়, চানখারপুল ফ্লাইওভারে ওঠার মোড়, বঙ্গবাজার, জিপিও, গুলিস্তান, সায়েন্সল্যাব, নীলক্ষেত, রামপুরা ব্রিজ, ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ও মহাখালী এলাকায় সড়কে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এসব এলাকায় মোড়ে মোড়ে শিক্ষার্থীদের জেরা, যানবাহন আটকানো ও ঘুরিয়ে দেয়ায় মানুষকে হেঁটে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দিতেও দেখা যায়। মহাখালী থেকে অ্যাম্বুলেন্সে রোগী পাঠিয়ে নিউরো সায়েন্সের উদ্দেশ্যে রওনা দেন স্বপন ইসলাম। তাকে বহন করা সিএনজিচালিত অটোরিকশা আটকে যায় আগারগাঁওয়ে। কোনোভাবেই আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বোঝাতে না পেরে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে রওনা দেন তিনি। স্বপন ইসলাম বলেন, ভাবছিলাম রোগীর স্বজন আমি, জরুরিভিত্তিতে হাসপাতালে যাওয়া দরকার। নিশ্চয় আমারে ছাড়বে। কিন্তু ছাড়ল না। এমন ভোগান্তিতে হাজারো মানুষের। দেখার কেউ নেই, কারে বোঝামু? আগারগাঁওয়ের তালতলা এলাকায় নিজ প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশে রওনা দিয়ে আটকে যান আকবর হোসেন। তিনি বলেন, নিজ গাড়িতে বসা, ওরা যেতে দিলো না। বাধ্য হয়ে ফিরতে চাইলাম, তাও দেবে না। ঘণ্টাখানেক আটকে থাকার পর অনুরোধ করে উল্টো পথে নির্বাচন কমিশনের সামনে দিয়ে গন্তব্যে রওনা দিলাম। আমার মতো এমন অনেকে আজ ভুগছে। এলিফ্যান্ট রোডের বাটা সিগন্যাল এলাকায় কথা হয় একজন যাত্রীর সাথে। তিনি জানান, দীর্ঘ সময় আটকে ছিলেন। পরে এলিফ্যান্ট রোডের মাথায় আসেন। দেখেন চারিদিক বন্ধ, শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিচ্ছে। মধ্যবয়সি ওই যাত্রী বলেন, সমাধান তো কাউকে না কাউকে করতেই হবে। আমার হাতে তো আর সমাধান নেই। আন্দোলন করছে ওরা, ভুগছি আমরা সাধারণ মানুষ। কেউ কেউ আবার মজা নিচ্ছে। ট্রাফিক রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. সোহেল রানা বলেন, আমরা চেষ্টা করছি মানুষ যাতে ভোগান্তিতে না পড়েন। পরিস্থিতি বুঝে অনেক মানুষ ঘর থেকে বের হননি। যারা বেরিয়েছেন, তারা পড়ছেন বিপাকে। কারণ রাস্তা খালি মনে হলেও প্রতিটি সিগন্যাল, মোড়ে মোড়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে যানচলাচল করতে পারছে না। তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের শেরেবাংলা নগর জোনের সহকারী কমিশনার তারেক সিকান্দার বলেন, শিক্ষার্থীরা উড়োজাহাজ ক্রসিং, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও আগারগাঁও এলাকায় অবস্থান নিয়েছে। যানচলাচল বন্ধ, আমরা ডাইভারশন করে আটকেপড়া যানবাহনগুলো ঘুরিয়ে দিচ্ছি।

রাবি-রুয়েট শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ : গতকাল টানা ষষ্ঠ দিনের মতো ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। এ সময় রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিক্ষার্থীরা তাদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে বিক্ষোভে যোগ দেন। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে অবস্থান নেন। পরে সেখান থেকে রাজশাহীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে শিক্ষার্থীরা অবস্থান করে বিকাল ৪টা পর্যন্ত আন্দোলন করেন। এ সময় যান চলাচল বন্ধ থাকে। এর আগে, বেলা ১১টার দিকে সব হল থেকে প্যারিস রোডে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। পরে মিছিল নিয়ে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা। এ সময় রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী সকল যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ : ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন ময়মনসিংহের ত্রিশালের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল বেলা ৩টায় ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড-সংলগ্ন এলাকায় এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দুই পাশে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে দুর্ভোগে পড়েন বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এসে বিকাল ৫টার দিকে তাদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেন। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে মহাসড়কের দুই পাশেই যানবাহন আটকে যায়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন ছিল। এদিকে গতকাল সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবদুল জব্বার মোড়ে তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেন আটকে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। বেলা ৪টা পর্যন্ত ট্রেনটি আটকা ছিল।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত