ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চলতি বছরে সাপের কামড়ে ৩৮ জনের মৃত্যু

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
চলতি বছরে সাপের কামড়ে ৩৮ জনের মৃত্যু

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত সাপের কামড়ে সারা দেশে ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এ সময় রাসেলস ভাইপারসহ বিভিন্ন বিষধর সাপের কামড়ের মোট ৬১০টি তথ্য লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাজধানীর মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদফতর রাসেলস ভাইপার নিয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি বিষয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। এসব তথ্য উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সাম্প্রতিক সময়ে রাসেলস ভাইপার নিয়ে সারা দেশে বিভিন্ন তত্ত্ব, তথ্য গুজব কিছুটা আতঙ্ক বিরাজ করছে। বাংলাদেশে সর্পদংশন নীতিগতভাবে একটি স্বীকৃত গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। ২০২২ সালে পরিচালিত জাতীয় জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশের ৪ লাখের অধিক মানুষ সর্পদংশনের শিকার হন যা মধ্যে দুঃখজনকভাবে প্রায় সাড়ে সাত হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। সাপ বিষয়ে অপর্যাপ্ত তথ্য থাকা সত্ত্বেও প্রধান বিষধর সাপের মধ্যে গোখরা, ক্রেইট (কালাচ্), চন্দ্রবোড়া বা রাসেলস ভাইপার ও সবুজ সাপ অন্যতম। কিছু কিছু সামুদ্রিক সাপের দংশনের তথ্যও আছে।

চন্দ্রবোড়া ভাইপারিড গ্রুপের একটি বিষাক্ত সাপ, বাংলাদেশে চন্দ্রবোড়ার অস্তিত্ব এবং এর দংশনে মৃত্যুর ইতিহাস ১৯২০ সালেই স্বীকৃত আছে। ২০১৩ সালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চন্দ্রবোড়া অথবা উলুবোড়া সাপের দংশনের প্রথম রিপোর্ট হিসেবে লিপিবদ্ধ আছে, প্রাথমিকভাবে রাজশাহী ও বরেন্দ্র অঞ্চলে এর প্রভাব বেশি দেখা গেলেও পরবর্তীতে ধীরে ধীরে চন্দ্রবোড়ার বিস্তৃতি ২৭টি জেলায় ছড়িয়েছে।

অধ্যাপক রোবেদ আমিন জানান, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০২৪-এর জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত মোট ৪১৬ জন রোগী ভর্তি হয়, তার মধ্যে বিষধর ৭৩টি এবং ১৮টি চন্দ্রবোড়া। এদের মাধ্যে হাসপাতালটিতে মোট ১১ জন রোগী মারা যান, যার মধ্যে চন্দ্রবোড়ার দংশনের কারনে মারা যান পাঁচজন।

তিনি আরো জানান, বিষধর সর্পদংশনের স্বীকৃত চিকিৎসা হচ্ছে অ্যান্টিভেনম। দেশের প্রধান বিষধর সাপের বিষ সংগ্রহ করে তা ঘোড়ার শরীরে প্রয়োগ করা, ঘোড়ার রক্তের সিরাম থেকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অ্যান্টিভেনম তৈরি করা হয়। বাংলাদেশে বর্তমানে অ্যান্টিভেনম তৈরি করা হয় না। ভারতে তৈরি (চারটি প্রধান বিষধর সাপের বিষয়ে বিরুদ্ধে প্রস্তুত) অ্যান্টিভেনম সংগ্রহ করে অসংক্রামক ব্যধি কর্মসূচির মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে সরবারহ করে থাকে। অ্যান্টিভেনম ক্রয়, বিতরণ, সংরক্ষণ, ব্যবহার, ব্যবহার পরবর্তী প্রভাব (নজরদারি) দেখার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি না থাকা সত্ত্বেও অ্যান্টিভেনম প্রয়োগের সুফল লক্ষ্যণীয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্পদংশন নিয়ে কাজের তথ্য তুলে ধরে জানানো হয়, ২০০০ সালে জাতীয় ব্যবস্থাপনা নির্দেশিকা প্রণয়ন এবং ২০১৯ সালে হালনাগাদ করা হয়েছে। এর আওতায় চিকিৎসক এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের জন্য প্রশিক্ষণ মডিউল; সীমিত স্বাস্থ্য শিক্ষামূলক (ঝইঈঈ) উপকরণ ব্যবহার, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীনে স্বাস্থ্যব্যবস্থাজুড়ে সর্পদংশনের ব্যবস্থাসমূহ পরিচালনা করা হয়েছে। অ্যান্টিভেনম ক্রয়, বিতরণ ও পর্যবেক্ষণ, প্রতি মাসেই অনলাইনে প্রশিক্ষণ প্রদান, হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা স্নেকভাইট সাপোর্ট গ্রুপ পরিচালনা করা হচ্ছে। ভেনম রিসার্চ সেন্টারে প্রতিনিয়ত গবেষণাধর্মী কার্যক্রম এবং দেশব্যাপী প্রচার প্রকাশনা এবং সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান করা হচ্ছে। এছাড়াও বাংলাদেশে সর্পদংশনে কর্মকৌশল ও অর্থের ব্যবস্থাসহ সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা (২০২৩-২৮) তৈরি করা হয়েছে। সর্পদংশন প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির মাধ্যমে ২০৩০ সাল নাগাদ শতকরা ৫০ ভাগ মৃত্যু এবং অক্ষমতা কমানোর লক্ষ্যে এই কর্মকৌশল সুনির্দিষ্ট ভূমিকা রাখবে বলে সংবাদ সম্মেলনে আশা করা হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত