ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কোটাহীন ৫ বছরের প্রভাবে পিছিয়েছে নারীরা

সংবাদ সম্মেলনে কাদের
কোটাহীন ৫ বছরের প্রভাবে পিছিয়েছে নারীরা

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অর্ধযুগ আগে সরকারি প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা তুলে দেওয়ার কী প্রভাব পড়েছে সে বিষয়ে তথ্যউপাত্ত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এই সময়ে পিছিয়ে পড়েছেন নারীরা। আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে যেসব তথ্য তুলে ধরা হচ্ছে, সেগুলোকে ‘অবাস্তব ও বিভ্রান্তিকর’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেছেন, বৈচিত্র্য সমতাভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা অর্জনে কোটার গুরুত্ব রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে আওয়ামী লীগের সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা। সড়ক মন্ত্রী বলেন, কোটাব্যবস্থা বাতিল করার পরে সরকারি নিয়োগ পরীক্ষায় আবেদন ও সফলতার হারে পিছিয়ে পড়েছেন নারীরা। কোটাযুক্ত বিসিএসের তুলনায় কোটামুক্ত বিসিএসে নারীরা পিছিয়ে পড়েছে ৩.৪৩ শতাংশ। একটি বিসিএসে কোটা না থাকায় পুলিশের ক্যাডারে মাত্র চারজন নারী অফিসার সুযোগ পেয়েছেন। ফরেন সার্ভিসে সুযোগ পেয়েছে মাত্র দুইজন নারী। কোটামুক্ত একটি বিসিএসে ২৪টি জেলার কোনো প্রার্থী পুলিশ ক্যাডারে চাকরি পায়নি, ৫০টি জেলায় নারীরা সরকারি চাকরি থেকে বঞ্চিত হয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সব চাকরির হিসাব দিয়ে তিনি বলেন, কোটা পদ্ধতি থাকা অবস্থায় শতকরা ২৬ ভাগের উপরে নারী প্রার্থীরা চাকরি পেয়েছিল। এরপর কোটা তুলে দেওয়ায় এ হার শতকরা ১৯ ভাগে নেমে এসেছে। কোটা পদ্ধতি বাতিল হওয়ায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রার্থীরা সব চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জানিয়ে কাদের বলেন, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের কোনো কোনো পরীক্ষায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর একজন প্রার্থীও নিয়োগ লাভের সুযোগ পায়নি। সরকারি চাকরিতে কোটার বিরোধিতা ও পরে সংস্কারের দাবি সামনে এনে ২০১৭ সালে ছাত্র আন্দোলনের পর সরকার ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পুরোপুরি তুলে দেয়।

সাতজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের আবেদনে সম্প্রতি উচ্চ আদালত সরকারের জারি করা সেই পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে। এর প্রতিক্রিয়ায় আবার ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়েছে। এবারো প্রথমে কোটাবিরোধিতার কথা বলে পরে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবি সামনে আনা হয়েছে। বাংলা ব্লকেড নামে একাধিক দিন সড়ক ও রেলপথ অবরোধের কারণে চরম জনভোগান্তির মধ্যে পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া রায়ের ওপর চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দিয়েছে আপিল বিভাগ। তারপরেও ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা এসেছে। ২০১৮ সালের আগে সরকারি চারকিতে ৩০ শতাংশ নারী কোটা, ১০ শতাংশ করে জেলা ও নারী কোটা, ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটা এবং ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা ছিল। এক সময় কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে পদ শূন্য রাখা হলেও পরে সেই নীতিমালা সংশোধন করে কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে মেধা তালিকা থেকে নিয়োগের বিধান করা হয়। ওবায়দুল কাদের বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ নিয়েও যে সমস্ত তথ্য আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে তা অবাস্তব এবং বিভ্রান্তিকর। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের কোটাযুক্ত পদ্ধতিতে মেধায় নিয়োগ হওয়ার কথা ছিল শতকরা ৪৪ ভাগ। কিন্তু বিভিন্ন কোটায় উপযুক্ত প্রার্থী না থাকায় শতকরা ৬৬.২ ভাগ প্রার্থী মেধাভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছে। কোটায় নিয়োগ পাওয়া প্রার্থীরাও প্রায় সমান মেধাবী জানিয়ে সড়ক মন্ত্রী বলেন, ‘বিভিন্ন কোটায় যারা চাকরিতে নিয়োগ পেয়েছে তারাও পাবলিক সার্ভিস কমিশনের একই মানদ-ে অর্থাৎ একই প্রিলিমিনারি প্রশ্ন, লিখিত পরীক্ষা দিয়ে সমান যোগ্যতার ভিত্তিতে উত্তীর্ণ হয়েছে।’

ধৈর্য ধরতে হবে : কোটার বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন থাকায় এ নিয়ে আন্দোলনকারীদের ধৈর্য ধরার পরামর্শও দেন আওয়ামী লীগ নেতা। তিনি বলেন, আমরা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি বন্ধ করে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী অবিলম্বে নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যাওয়ার জন্য পুনরায় আহ্বান জানাচ্ছি। সর্বোচ্চ আদালতের বিচারিক কার্যক্রম পুরোপুরি সমাপ্তি না হওয়া পর্যন্ত সব পক্ষকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে।

তরুণদের শক্তি এবং আবেগের প্রতি শ্রদ্ধাশীল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই শক্তি ও আবেগকে পুঁজি করে কোনো অশুভ মহল যদি দেশে অরাজক পরিস্থিতি ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চায় তাহলে সরকার আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। যারা কোটা আন্দোলনকে সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে চায় তাদের খায়েশ পূরণ হতে দেব না। কাদের বলেন, কোটা সংস্কারের বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ চার সপ্তাহে স্থিতাবস্থা দিয়েছে।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ধারণ করে আদালতের শ্রদ্ধাশীল থাকার আহ্বান জানিয়েছিলাম। এ বিষয়ে নিয়ে যখন বিচারিক প্রক্রিয়া চলমান, তার প্রতি কোনো প্রকার সম্মান না করে আন্দোলনকারীরা বাংলা ব্লকেড নামে মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে। কোটা বাতিল করে দেওয়া পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায়ের ওপর আপিল বিভাগ স্থিতাদেশ দেওয়ায় এই মুহূর্তে কোনো কোটা সংরক্ষিত নাই জানিয়ে সড়কমন্ত্রী বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে যখন উচ্চ আদালতে বিচারিক প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে এবং এ বিষয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা আছে, তার প্রতি কোনো প্রকার শ্রদ্ধাশীল না হয়ে আন্দোলনকারীরা পুনরায় তথাকথিত ‘বাংলা ব্লকেড’ নামে কর্মসূচি দিয়ে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। ‘আমাদের সবার মনে রাখা উচিত, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি আমাদের সম্মান দেখাতে হবে এবং আমাদের সুপ্রিমকোর্ট আমাদের পবিত্র সংবিধানের অভিভাবক এবং এই পবিত্র সংবিধানই দেশের সর্বোচ্চ আইন। দেশের সর্বোচ্চ আদালত যখন সরকার পক্ষ, আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধি, মূল মামলা দায়েরকারী পক্ষসহ সবার বক্তব্য শুনে এ বিষয়ে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির বিচারিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে, ঠিক সেই মুহূর্তে আন্দোলনের নামে জনগণের চলাফেরা ও যানবাহন চলাচলে বাধা সৃষ্টি করা সম্পূর্ণ বেআইনি। ‘কোনো কোনো রাজনৈতিক মহল তাদের রাজনৈতিক স্বার্থকে চরিতার্থ করার জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের প্ররোচনা দিচ্ছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, কোনো কোনো অশুভ মহল ছাত্র-ছাত্রীদের আবেগকে পুঁজি করে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে ব্যাহত করার ষড়যন্ত্র করছে। আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে এই ধরনের কর্মকাণ্ড রাষ্ট্র বা দেশের জনগণের জন্য কল্যাণকর নয়।

বিএনপিসহ কিছু দল শিক্ষার্থীদের ‘রাজনৈতিক ফাঁদে ফেলা’র পাঁয়তারা করছে বলেও মন্তব্য করে কাদের বলেন, ‘কোটাবিরোধী আন্দোলনকে সরকারবিরোধী আন্দোলন করার চেষ্টা করছে বিএনপি। ফখরুল বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের কোটার দরকার নেই। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তাদের সম্মান নেই। কোটাবিরোধিতা করে বিএনপি মুক্তিযুদ্ধবিরোধিতার প্রমাণ দিয়েছে আবারো। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, এসএম কামাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সদস্য সাহাবুদ্দিন ফরাজী, আনোয়ার হোসেন, কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত