ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

স্মার্ট পদ্ধতিতে ভূমির সব সেবা

স্মার্ট পদ্ধতিতে ভূমির সব সেবা

সারা দেশে ভূমি সেবা নাগরিকদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে নিয়মিত কাজ করছে সরকার। সেজন্য ভূমি ব্যবস্থাপনায় ডিজিটালের গণ্ডি পেরিয়ে এখন স্মার্টের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান, ই-নামজারি, ই-পর্চা, অনলাইন জলমহাল ব্যবস্থাপনা, ডিজিটাল রেকর্ড রুম হতে মৌজাম্যাপ ও পর্চা ডাকযোগে সরবরাহসহ বিভিন্ন সেবা দেওয়া হচ্ছে।

ভূমি প্রশাসনে সুশাসন নিশ্চিত করা, জবাবদিহিতা এবং ভূমি সেবা আরো বেশি গণমুখী করার বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অন্যতম ক্ষেত্র স্মার্ট পদ্ধতিতে ভূমি সংক্রান্ত সব সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া। ভূমি ব্যবস্থাপনা নিয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. খলিলুর রহমান প্রতি সপ্তাহে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে রাজধানীর ভূমি ভবনে মিটিং করেন। সেখানে ভূমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন সফটওয়্যারের মাধ্যমে ভূমি সংক্রান্ত সব কাজে গতিশীলতা ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেন ভূমি সচিব। আর ভূমি ভবনে অবস্থিত নাগরিক ভূমি সেবাকেন্দ্রে ১৫টি সেবা একসঙ্গে মিলছে। সরাসরি সেবা নেওয়ার পাশাপাশি ঘরে বসেও কল সেন্টারের মাধ্যমে সেবা নিতে পারছেন গ্রাহকরা। প্রবাসে থাকা গ্রাহকরাও সহজে প্রদান করতে পারছেন ভূমি উন্নয়ন কর। সরাসরি মিলছে ভূমিবিষয়ক পরামর্শ। এতে কমছে ভূমিসেবায় ভোগান্তি।

ভূমিসেবা গ্রহীতাদের সুবিধার্থে ঢাকায় ভূমি ভবনে নাগরিকসেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। যেখান থেকে নাগরিকরা সকল ধরনের ভূমিসেবা গ্রহণ করতে পারবেন। ভূমি ভবনের প্রথম তলায় অবস্থিত কল সেন্টারের দায়িত্বরত কয়েকজনের সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, প্রচারণার অভাবে ভূমি সেবার বিষয়টি এখনো অনেকের কাছে অজানা রয়ে গেছে। সারা দেশে গ্রাহক ভোগান্তি কমাতে ভূমি অফিসগুলোতে নাগরিক সেবাকেন্দ্র চালু করা হবে দ্রুতই।

এ বিষয়ে ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, বর্তমানে শুধু ভূমি ভবনে এই সেবাকেন্দ্রটি চালু রয়েছে। কীভাবে স্মার্ট ভূমিসেবা প্রতিটি নাগরিকের কাছে পৌঁছানো যায়, সেজন্য আমরা একটি পরিকল্পনা করছি। আশা করছি, আগামী ৬ মাসের মধ্যে সারা দেশের প্রতিটি ইউনিয়নের ভূমি অফিস, এসি ল্যান্ড অফিসগুলোতে নাগরিক সেবাকেন্দ্র চালু করতে পারব। এতে করে গ্রাহকরা ঘরে বসে ভোগান্তি ছাড়াই মোবাইল এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভূমিবিষয়ক সব সেবা পাবেন।

ভূমি মন্ত্রণালয় বলছে, ভূমি ভবনে অবস্থিত নাগরিক সেবাকেন্দ্রে নামজারির আবেদন, পর্চার কপির আবেদন, মৌজা ম্যাপের আবেদন, ভূমি উন্নয়ন কর প্রদানসহ ভূমিবিষয়ক বিভিন্ন পরামর্শ গ্রাহকদের দেওয়া হচ্ছে। সরাসরি সেবাকেন্দ্রে আসতে না চাওয়া গ্রাহকদের জন্য রয়েছে স্মার্ট কল সেন্টার। যেখানে ঘরে বসেই গ্রাহকরা সেবা পাচ্ছেন। এছাড়া সেবা দেওয়া হচ্ছে ফেসবুক, ই-মেইলসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও। নাগরিকদের অভিযোগ প্রতিকারের জন্য রয়েছে ব্যবস্থাপনা টিম এবং কারিগরি সহায়তা প্রদানের জন্য স্মার্ট কারিগরি সহায়তা টিম।

ভূমি ভবনের তথ্য বলছে, স্মার্ট ভূমিসেবা কল সেন্টার ও স্মার্ট নাগরিক সেবাকেন্দ্রে মোট ৭২ জন কর্মী সেবা দিচ্ছেন। চালু হওয়ার পর থেকে গত এক বছরে নাগরিক সেবাকেন্দ্রে সশরীরে সেবা নিয়েছেন ১৭ হাজার ৩৬০ গ্রাহক। একই সময়ে কল সেন্টারে সেবা নিয়েছেন ২৩ লাখ ১৮ হাজার গ্রাহক। এর মধ্যে ভূমি উন্নয়ন করবিষয়ক সেবা নিয়েছেন ৫ লাখ ৯১ হাজার গ্রাহক। নামজারিবিষয়ক সেবা নিয়েছেন ৩ লাখ ১ হাজার গ্রাহক এবং খতিয়ানবিষয়ক সেবা নিয়েছেন ২ লাখ ৮৩ হাজার গ্রাহক। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে তথ্য নিয়েছেন ৪৫ হাজার ১০৫ গ্রাহক। নাগরিক সেবাকেন্দ্র থেকে ভূমিবিষয়ক সেবা নিতে পারছেন প্রবাসীরাও। গত এক বছরে ১২ হাজার ২৬০ প্রবাসী নাগরিক ভূমিবিষয়ক সেবা নিয়েছেন। ভূমি ভবন বলছে, সেবা নেওয়া গ্রাহকদের মধ্যে ৯৬ শতাংশই সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ডিকেএমপি অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব জাহিদ হোসেন পনির বলেন, বর্তমানে এজেন্ট, ল্যান্ড এক্সপার্ট এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব লোকবল সেবা প্রদান করছে। সম্প্রতি আরও ১৭ জন বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করা হয়েছে যাদের মধ্যে দলিল, মিউটেশনসহ সেক্টর ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। আমাদের ড্যাশবোর্ডের মাধ্যমে আমরা সারা দেশের গ্রাহকদের অভিযোগ নিয়মিত পর্যালোচনা করে সে অনুযায়ি ব্যবস্থা নিচ্ছি। সারা দেশে নাগরিক ভূমিসেবা কেন্দ্র চালু হলে ভূমি অফিসে অনিয়মের কোনো সুযোগ থাকবে না।

রাজধানীর ভূমি ভবনে নাগরিক সেবাকেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, সেবা নিতে আসা গ্রাহকদের ভিড়। গ্রাহকদের সেবা প্রদানে রয়েছে আলাদা আলাদা ডেস্ক। প্রতিটি ডেস্কের সামনে রয়েছে ডিজিটাল স্ক্রিন এবং সেবাপ্রদানকারী কর্মী। সেবা নেওয়ার পর কোনো অভিযোগ থাকলে সেটি জানানোরও ব্যবস্থা রয়েছে। সেবা নিতে আসা রামপুরা এলাকার বাসিন্দা জিহাদুল ইসলাম বলেন, স্মার্ট ভূমি ব্যবস্থাপনা মানুষের দৌরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রচার-প্রচারণার প্রয়োজন রয়েছে। ভূমি ব্যবস্থাপনা স্মার্ট হচ্ছে কিন্তু জনগণ সেভাবে জানতে পারছে না। এতে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ভালো উদ্যোগটিও মুখ থুবড়ে পড়বে। জিহাদুলের মতোই মালিবাগ এলাকার বাসিন্দা মোশাররফ হোসেন ভূমি ভবনে ই-নামজারি ও ই-পর্চা সম্পর্কে জানতে এসেছেন। এ সময় তিনি বলেন, অনলাইনে সহজেই ভূমি কর, ই-নামজারি ও ই-পর্চার উদ্যোগটা বেশ ভালো। আগে ভূমি কর দিতে হলে অফিসে যেতে হতো। ভোগান্তি আর ঘুষের মতো বিষয় ছিল। এখানে পরিবেশটাও সুন্দর, জটিলতাও কম। তবে স্মার্ট ভূমি ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে ব্যাপক প্রচারণা লাগবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত