বিআরটিসির বহরে বৈদ্যুতিক বাস যুক্ত করার পরিকল্পনা

প্রকাশ : ১২ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

বিআরটিসির বহরে ইলেকট্রিক (বৈদ্যুতিক) বাস যুক্ত করার চিন্তা করছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি)। এছাড়া এ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি আয় বাড়াতে আন্তর্জাতিক রুটে বরিশাল-কলকাতা, চট্টগ্রাম-কলকাতা, ঢাকা-গ্যাংটক (সিকিম)-দার্জিলিং, ঢাকা-নেপাল বাস সার্ভিস চালুর কথাও ভাবছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উপস্থাপিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

কমিটির সভাপতি রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিকের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য মো. আবু জাহির, সেখ সালাহউদ্দিন, মো. মুজিবুল হক, জাহাঙ্গীর আলম, আব্দুল্লাহ-আল-কায়সার, মোহাম্মদ গোলাম ফারুক ও মোছা. নাছিমা জামান ববি অংশগ্রহণ করেন।

প্রতিবেদনে আয় বাড়াতে বহরে নতুন ইলেকট্রিক ও সিএনজি বাস সংযোজন, আন্তর্জাতিক রুটের সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন বলে বলা হয়। এ জন্য বরিশাল-কলকাতা, চট্টগ্রাম-কলকাতা, ঢাকা-গ্যাংটক (সিকিম)- দার্জিলিং, ঢাকা-নেপাল আন্তর্জাতিক রুটে বাস চালু, ইলেকট্রনিক ভেহিকলসহ নতুন মডেলের বাস বহরে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেছে।

সংসদীয় কমিটির প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বিআরটিসির অনুমোদিত পদ ছয় হাজার ৫১৭টি থাকলেও গোল্ডেন হ্যান্ডশেকে ৬২৪টি পদ বিলুপ্ত করা হয়। বর্তমানে পদ সংখ্যা ৫ হাজার ৮৯৩টি। এর মধ্যে কর্মরত আছে তিন হাজার ৯২০ জন। শূন্য পদের সংখ্যা এক হাজার ৯৭৩টি। প্রথম শ্রেণির ১২৪টি পদের মধ্যে কর্মরত ৮১ জন। শূন্য পদ ৪৩টি। দ্বিতীয় শ্রেণির ৬৪টি পদের মধ্যে কর্মরত ৪৪ জন। শূন্য পদ ২০টি। তৃতীয় শ্রেণির ৫ হাজার ১৫৯টি পদের মধ্যে কর্মরত নয় হাজার ৬৩৭ জন। শূন্য পদ এক হাজার ৫২২টি। চতুর্থ শ্রেণির ৫৪৬টি পদের মধ্যে কর্মরত ১৮ জন। শূন্য পদের সংখ্যা ৩৮৮টি।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিআরটিসির বহরে যুক্ত হয়েছে এক হাজার ৫৫৮টি বাস। যে দেশ ঋণ দিয়েছে সেগুলো সেখান থেকে আমদানি করা হয়েছে। বাসগুলো কিনতে খরচ হয়েছে এক হাজার ২৯৮ কোটি ৩৭ লাখ ২৯ হাজার টাকা। এ বাস কেনা হয়েছে ভারত, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, নরডিক ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের ১১৩ কোটি ৬৩ লাখ ৪৫ হাজার ঋণ সহায়তায় চীনের ডংফেং ইয়াংসি থেকে ২৭৫টি একতলা সিএনজি বাস; ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন ফান্ডের ২৭৮ কোটি ২৮ লাখ ৬২ হাজার ঋণ সহায়তায় দক্ষিণ কোরিয়ার দাইয়্যু থেকে ২৫৫টি সিএনজি এসি/ননএসি বাস; ইন্ডিয়ান ডলার ক্রেডিট লাইনের ৩৭৯ কোটি ৩৩ লাখ ১৮ হাজার টাকা ঋণের আওতায় ভারতের অশোক লিল্যান্ড থেকে ২৯০টি দ্বিতল, ৮৮ একতলা এবং ৫০টি আর্টিকুলেটেড বাস এবং ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি-২) ৫২৭ কোটি ১২ লাখ ৪ হাজার টাকা ঋণে ভারত থেকে ৩০০ দ্বিতল, ১০০ এসি-ননএসি এবং ১০০ এসি ইন্টারসিটি বাস কেনা হয়েছে।

প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বিআরটিসির বহরে বর্তমানে এক হাজার ৩৫০টি বাস রয়েছে। এর মধ্যে এক হাজার ২৪৪টি বাস ২০৩টি রুটে পরিচালিত হচ্ছে। ১০৬টি বাস মেরামতে রয়েছে। আগে লোকসানি প্রতিষ্ঠান হলেও বিটিআরসি গত তিনটি অর্থবছরে লাভ করেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে লাখ করেছে ৪৭ কোটি ৭১ লাখ ৩৯ হাজার টাকা।

সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বৈঠকে কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার মরিচাখালি থেকে মিঠামইন উপজেলা পর্যন্ত বাস্তবায়নাধীন উড়াল সড়ক ও কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকার সংযোগ রাস্তাগুলো দ্রুততার সঙ্গে সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য কমিটি কর্তৃক মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করা হয়।

বৈঠকে হাওরাঞ্চলে শুষ্ক মৌসুমে চলাচলের জন্য ব্যবহৃত ফেরি ব্যবস্থাটি সাশ্রয়ী করে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমানোর জন্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করা হয়। বিআরটিসির ড্রাইভার নিয়োগের সময় মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা অন্তর্ভুক্তকরণ, লাইসেন্সব্যবস্থার মনিটরিং বৃদ্ধি এবং গাড়ির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটিকে লাভজনক রাখার জন্য বৈঠকে গুরুত্বারোপ করা হয়।