ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ভবন মেরামত কাজের ব্যবস্থাপনা নিরসনে যুগোপযোগী গাইডলাইন

ভবন মেরামত কাজের ব্যবস্থাপনা নিরসনে যুগোপযোগী গাইডলাইন

সরকারি ভবনের কাজে অনিয়ম অব্যবস্থাপনা দূর করতে মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য নতুন করে গাইডলাইন করেছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। এতে কাজের গুণগতমান নিশ্চিতকরণ ও সরকারি অর্থ ব্যয়ের স্বচ্ছতা থাকবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, রাজধানী ও চট্টগ্রামসহ সারা দেশে সরকারি অফিস, হাসপাতাল, আবাসিক ভবনের মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের কারিগরি দিক সংক্রান্ত একটি গাইডলাইন ছিল। সেই গাইডলাইন স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে যুগোপযোগী করে তোলা হয়েছে। নতুন করে আরো কিছু নিয়মণ্ডকানুন যোগ করা হয়েছে।

গণপূর্ত অধিদপ্তর বাজেটে বরাদ্দ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসন সুবিধাও বেড়েছে। ১৩ হাজার ৫২টি ফ্ল্যাট থেকে বেড়ে ২০ হাজার ৫৫৬টি ফ্ল্যাট হয়েছে। একইসঙ্গে সরকারি বিভিন্ন স্থাপনা, অফিস, উদ্যান রক্ষণাবেক্ষ এবং সরকারি মালিকাধীন জমির সুষ্ঠু ব্যবস্থার নিশ্চিতকরণসহ ব্যাপক কর্মযজ্ঞ হয়েছে। বহু সংখ্যক সরকারি ভবন মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে প্রত্যেক বছরের সরকারি বাজেট রয়েছে। ভবন মেরামতের অর্থ অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ঠিকাদাররা যোগসাজশ করতে না পারে সেজন্য নতুন করে গাইডলাইন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সরকারি ভবন মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে যুগোপযোগী গাইডলাইন করেছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। সংস্থাটির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস বজায় রাখতে নিয়মিত কাজ করছেন প্রকৌশলীরা।

তিনি বলেন, গণপূর্ত অধিদপ্তর প্রতি বছর বহুতল ভবন নির্মাণ করছে, এতে ভবনের মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বাড়ছে। কিন্তু সেই খরচ মেটানোর জন্য সেভাবে বাজেট বাড়েনি। বাধ্য হয়ে, প্রতি বছর কিছু ভবনের মেরামত ও রক্ষণাবক্ষণের কাজ স্থগিত রাখতে হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, গত শুক্রবার রাজধানীতে মুষলধারে সৃষ্টি হয়, তখন রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে পানি ঢুকে পড়ে। সেই পানি সরাতে নতুন করে আরো কিছু কাজ করতে হয়েছে। এ খাতে বাজেট বাড়াতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক অব্যাহত রয়েছে।

প্রধান প্রকৌশলী আরো বলেন, রাজধানীসহ সারা দেশে আধুনিক মানের বহুতল ভবন নির্মাণ করছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। কিন্তু এসব ভবন মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে বাজেট কম থাকলে ভবনের গুণগতমান বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। সুতরাং মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে বাজেট বাড়াতে হবে। এসব কাজের ক্ষেত্রে যেসব অনিয়ম অব্যবস্থাপনা ছিল সেটি কমছে, ভবিষ্যতে আরো কমবে।

জানা গেছে, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা গণপূর্ত অধিদপ্তরে মেরামত কাজ তিন প্রকারে করা হয়। এরমধ্যে রয়েছে- দৈনন্দিন মেরামত কাজ, সাধারণ মেরামত কাজ এবং বিশেষ মেরামত কাজ। দৈনন্দিন মেরামত কাজ বলতে বোঝানো হয়েছে- অপরিহার্য মেরামত যা তাৎক্ষণিকভাবে করার প্রয়োজন। এরমধ্যে ভবনকে পানি রোধক ও বায়ু রোধক রাখা। যা যথাসম্ভব গণপূর্ত অধিদপ্তরের বিভাগীয় জনবল দ্বারা দিয়ে করা। এটি সম্ভব না হলে দৈনন্দিন ভিত্তিতে থোক চুক্তি ভিত্তিতে জনবল নিয়োগ করে কাজ করানো যেতে পারে। সব কাজের জন্য প্রয়োজনীয় মালামাল সংশ্লিষ্ট বিভাগের গুদামে রক্ষিত মালামাল দ্বারা সম্পন্ন করার চেষ্টা করতে হবে। গুদামে বিভাগীয় মালামাল না থাকলে ন্যূনতম মালামাল বাজার থেকে বিধিমোতাবেক ক্রয় করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মালামালের দর ও গুণাগুণ সম্পর্কে নিশ্চিত হবেন।

সিভিল কাজের ক্ষেত্রে ভবনের জানালা/দরজার ছোটখাটো মেরামত, জানালা/দরজার কাঁচ পরিবর্তন, ছিটকানি, আংটা পরিবর্তন, মেঝে, ছাদে, দেয়ালে ছোটখাটো মেরামত, দরজার তালা মেরামত/পরিবর্তন ইত্যাদি দৈনন্দিন মেরামতের আওতাধীন থাকছে। পানির ফল, স্টপ কক, বল কফ, সাওয়ার, বেসিনের সংযোগ পাইপ ইত্যাদি মেরামত/পরিবর্তন, পানির লাইন এবং সয়েল লাইন মেরামত/পরিবর্তন, সয়েল লাইন, সেফটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করা অর্থাৎ পানি ও পয়ঃব্যবস্থা কার্যকরী রাখার জন্য তাৎক্ষণিক বা দৈনন্দিন মেরামত কাজের আওতায়। এছাড়াও ব্যবহার অযোগ্য কমোড, বেসিন ইত্যাদি পুনঃস্থাপনের কাজ করা যাবে। ই/এম কাজের মধ্যে রয়েছে-বৈদ্যুতিক সুইচ, মেইন সুইচ, হোল্ডার, ল্যাম্প, বেয়ারিং ও ফ্যান রেগুলেটার, সুইচ বোর্ড, ক্যাপাসিটার, স্টার্টটার, চৌফ, ফাট আউট, ফিউজ, লাইট ফিটিংস, সেড, ফল বেল, বেল পুস, ওয়ারিংয়ের ‘প্যাঁচ রিপিয়ারিং’ ইত্যাদি অর্থাৎ অভ্যন্তরীণ বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা সচল ও নিরাপদ রাখার জন্য যাবতীয় কাজ দৈনন্দিন মেরামত কাজের আওতায় থাকবে।

সাধারণ মেরামত কাজের মধ্যে ভবন সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ। যা ঠিকাদারের মাধ্যমে করা যাবে। যেখানে গণপূর্ত অধিদপ্তরের গুদামে রক্ষিত বিভাগীয় মালামাল যথা সম্ভব ব্যবহারের চেষ্টা করতে হবে। আস্তর, চুনকাম, প্লাস্টিক পেইন্ট, ডিস্টেম্পার, এনামেল পেইন্ট, স্লোসেনসহ যাবতীয় রঙের কাজ। সয়েল পাইপ, পানির পাইপ, সেনিটারি পাইপ রং করার কাজও সাধারণ মেরামত কাজের আওতায় আসবে। বৈদ্যুতিক ও যান্ত্রিক কাজের মধ্যে থাকছে ফ্যান, লিফট ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি এবং যানবাহন রং ফরা ও সার্ভিসিং করা ও শিডিউল অনুযায়ী রক্ষণাবেক্ষণ করার কাজ সাধারণ মেরামতের আওতায় আছে।

তবে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বিশেষ মেরামত কাজের ক্ষেত্রে স্বভাবিকভাবে ভবনের আয়াক্কোল শেষ, দুর্ঘেটনাজণিত পানি সরবরাহ এবং বিদ্যুৎ, যন্ত্রপাতি ও যানবাহন সংক্রান্ত পরিবর্তন প্রয়োজন হবে। মেঝে, জলছাদ, ছাদ, ড্রেইন, সীমানা প্রাচীর, রাস্তা মেরামত ও কার্পেটিং ইত্যাদিসহ যাবতীয় বড় ধরনের কাজ বিশেষ মেরামত কাজের আওতায় আসবে। ব্যাপক দরজা জানালা মেরামতের কাজও বিশেষ মেরামত কাজের অন্তর্ভুক্ত থাকছে। পানির পাইপলাইন পরিবর্তন, সয়েললাইন পরিবর্তন, জলাধার পরিবর্তন/মেরামত ইত্যাদির কাজ বিশেষ মেরামত কাজের আওতায় থাকবে। বৈদ্যুতিক ও যান্ত্রিক স্বাভাবিক আয়ুষ্কাল শেষে অভ্যন্তরীণ বৈদ্যুতিক বিতরণ ব্যবস্যা পুনঃস্থাপন, বিদ্যুৎ বিতরণে ব্যবহৃত ক্যাবলস ও ওভারহেড লাইন, বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে স্থাপিত সুইচ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও প্রয়োজনীয় মেরামত, ট্রান্সফরমার, কেন্দ্রীয় শীতাতপ ও বায়ু সঞ্চালনব্যবস্থা, জেনারেটর, পানি উত্তোলনের পাম্প, অভার হোলিং, বিদ্যুৎ বিতরণ ও সঞ্চালনব্যবস্থা পুনঃস্থাপনে বিশেষ মেরামত কাজের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত